ইসলামী ব্যাংকিং

‘বিশেষ সুবিধা’ থাকায় ইসলামী ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছেন মালিকরা

প্রথাগত বা কনভেনশনাল ব্যাংকিংয়ে সুবিধা করতে না পারায় ইসলামী ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন ব্যাংক মালিকরা। ইসলামী ব্যাংকিং চালু করতে ডজন খানেক ব্যাংক আবেদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এর মধ্যে দুটি ব্যাংককে ইসলামী ব্যাংকিং চালু করার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রচলিত ধারার একটি ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৮৫ টাকা ঋণ দিতে পারে। ইসলামী ব্যাংকগুলো যেখানে ৯০ টাকা বিনিয়োগ করতে পারে। এ ছাড়া প্রচলিত ধারার ব্যাংকের মতো ইসলামী ব্যাংকগুলোর সাড়ে ৫ শতাংশ হারে নগদ জমা সংরক্ষণ করতে হয়। অথচ প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ১৩ শতাংশ এসএলআর রাখার বাধ্যবাধ্যকতা থাকলেও ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য তা সাড়ে ৫ শতাংশ।

ইসলামী ব্যাংকগুলো যে কোনো সময় আমানতে মুনাফার হার পরিবর্তন করতে পারে। প্রচলিত ধারার ব্যাংক মেয়াদপূর্তির আগে যা পারে না। এসব কারণে প্রচলিত ধারার ব্যাংকের তুলনায় ইসলামী ব্যাংকে ভালো মুনাফা হয়। ফলে অনেক ব্যাংক এখন ইসলামী ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত। এই মুহূর্তে নতুন কোন ব্যাংকের প্রয়োজন নেই এদেশে। তারপরেও নতুন ব্যাংকের অনুমোদন বিশৃঙ্খলা আরো বাড়াবে। সরকারি পর্যায় থেকে বারবার ব্যাংক মার্জারের কথা শোনা গেলেও এর বিপরীতে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। যা মোটেই ঠিক নয়। এছাড়া অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়ার আশায় ব্যাংকগুলো ইসলামী ধারাই রূপান্তরিত হওয়ার চেষ্টা করছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের অনেক মানুষই আছে যারা ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখে। এখন এই সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন মালিকরা। এসব বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করে মূল সমস্যা সমাধানের পরামর্শ এই অর্থনীতিবিদের।

উল্লেখ, প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের তুলনায় শরিয়াহ ভিত্তিক বা ইসলামী ব্যাংকিং আগাচ্ছে দ্রুত গতিতে। শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলো সুদভিত্তিক ব্যাংকের মতো ঋণ না দিয়ে বিনিয়োগ আকারে অর্থায়ন করে থাকে। গত সেপ্টেম্বরে এ খাতের ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশ, যেখানে প্রথাগত ব্যাংকসহ গোটা ব্যাংক খাতের বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

অন্যদিকে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ০২ শতাংশ। ডিসেম্বরে এই হার কিছুটা বেড়ে ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়। গত মার্চে এই হার কিছুটা কমে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমে আসে। গত জুনে বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি আরও কিছুটা কমে ১৩ দশমিক শূন্য আট শতাংশে নেমে আসে। তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এ খাতের বিনিয়োগের হার কিছুটা বেড়ে ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশে উঠে আসে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে আটটি ব্যাংক পূর্ণাঙ্গরূপে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক (এক্সিম) লিমিটেড, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড।

এই ব্যাংকগুলোর শাখার সংখ্যা এক হাজার ২২১টি, যেখানে দেশের গোটা ব্যাংক খাতে শাখার সংখ্যা ১০ হাজার ৪০৬টি। এছাড়া ৯টি প্রথাগত ব্যাংকের ১৯টি শাখা এবং আটটি প্রথাগত ব্যাংকের ৬১টি ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো দেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

দেশের পুরো ব্যাংক খাতের আমানত ও বিনিয়োগ উভয় দিক দিয়েই এক-চতুর্থাংশ শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর দখলে। গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর সংগৃহীত আমানতের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৬২ হাজার ১১০ কোটি টাকা, যা মোট আমানতের প্রায় ২৪ শতাংশ।

অন্যদিকে গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের বিনিয়োগকৃত অর্থ বা ঋণের স্থিতি ছিল ১০ লাখ ১৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ছিল দুই লাখ ৫০ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা, যা গোটা ব্যাংক খাতের বিনিয়োগের ২৪ শতাংশেরও বেশি।

রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রেও এগিয়েছে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলো। গত জুনে রেমিট্যান্সের ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ এসেছিল এ খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। সেপ্টেম্বরে এই হার বেড়ে হয়েছে ৩১ দশমিক ১২ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button