ব্যাংকিং

e-AOF স্বপ্ন নয় এখন বাস্তবতা!

সৈয়দ আব্দুর রাকিবঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ এখনো ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে। ফিন্যানশিয়াল ইনক্লুশন শতভাগ সফল তখনই হবে যখন সকল যোগ্য লোকের একটি করে হলেও ব্যাংক একাউন্ট থাকবে। ফড়িয়া নিবন্ধনহীন সমবায় সমিতি বা হায়-হায় কোম্পানির কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাবেনা নিরীহ নিরক্ষর জনগন। একাউন্ট করতে গেলেই সর্বপ্রথম গ্রাহকের পুরন করতে হয় একটি ফিজিক্যাল একাউন্ট ওপেনিং ফরম। বেশিরভাগ সময়ই গ্রাহক সেটি ব্যাংক কর্মকর্তার সাহায্য নিয়েই পুরন করেন। সেই ফরমে গ্রাহক সই করেন পাতায় পাতায় অর্থাৎ তিনি ওই গৃহীত প্রোডাক্ট এর সকল শর্তাবলী মেনে নিচ্ছেন।

নিয়ম বা রীতি অনেকেই ভাংতে চায়না অথচ এটি না ভাংলে নতুনতর কিছু আবিস্কারই হতোনা। গত বছরের (২০১৯) সেপ্টেম্বরে স্বনামধন্য ইংরেজি দৈনিক ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস এ আমি একটি কলাম লিখেছিলাম যাতে প্রস্তাবনা ছিল ফিজিক্যাল একাউন্ট ওপেনিং ফরম ব্যবহার না করে সরাসরি কোর ব্যাংকিংয়ের সিষ্টেমে তথ্য, উপাত্ত এন্ট্রি দেয়া যায় কিনা, এতে ব্যাংকের কি লাভ? কত টাকা বাচে? কতটুকু শ্রমঘন্টা প্রয়োজন হবেনা? পাশাপাশি শতভাগ নিরাপত্তা। আজকের এই লেখা সেটিরই আরেকটু বিস্তারিত বহিঃপ্রকাশ। সবাইকে আমন্ত্রণ লেখাটি পড়ার জন্য।

আমি ব্যক্তিগত ভাবে ব্যাংকিং পেশায় আছি ২০০৯ থেকে। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে কিছু তথ্য আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব। ব্যাংকে গ্রাহক আসে অথবা অবস্থান ভিত্তিতে ব্যাংক গ্রাহকের কাছে চলে যায়। একাউন্ট ওপেনের জন্য যেই ফরমটি ব্যাংকগুলো ছাপিয়ে থাকে তার ৬৫% ইনষ্ট্যান্ট ব্যবহার হয়। ২০% ফরম গ্রাহক নিয়ে যায় কিন্তু এরা কখনই আর ব্যাংকে ফেরত আসেনা। আসলেও তাদেরকে পুনরায় ফরম দিতে হয়। ১০% ফরম কর্মকর্তা এবং গ্রাহকের কারনে ত্রুটিপুর্ন থাকে বা বিনষ্ট হয়, আর ৫% ফরম কাজের সময় খুজেই পাওয়া যায়না, যা পরে পুনরায় গ্রাহকের সাহায্যে তৈরি করতে হয়।

একটি বড় শাখায় যদি বিশ হাজার একাউন্ট থেকে থাকে যা ক্রমশ বর্ধমান একটি বিষয় তাহলে নিশ্চিত ধরে নেন সেখানে এমনো অনেক পুরাতন ফরম আছে যা খুঁজে পেতে যথেষ্ট কাঠ-খড় পোড়ানো লাগবে। অথচ প্রতিটি ফরমের সকল তথ্যই সিবিএস এ অন্তর্ভুক্ত আছে। তবে কেন আর বছরের পর বছর ফিজিক্যাল ফরম সংরক্ষণ? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার গাইডলাইন। আনন্দের সংবাদ এই যে BFIU ইতিমধ্যে e-KYC র একটি নীতিমালা প্রনয়ণ করেছে যেখানে এক লক্ষ টাকার নিচের একাউন্ট এর Simplified KYC জাতীয় পরিচয় পত্রের মাধ্যমে অত্যন্ত সহজীকরন করা হয়েছে। অর্থাৎ এই একাউন্ট করতে গ্রাহকের কোন ফরম ফিলাপেরই প্রয়োজন পড়বেনা। লেনদেন এক লক্ষ টাকার উর্দ্ধে গেলে তখন গ্রাহকের নিকটতম শাখায় অথবা এজেন্ট ব্যাংকিং সেন্টারে এসে গতানুগতিক ফরম ফিলাপ করতে হবে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ব্যাংকিং এখন আর আগের মত নেই। প্রযুক্তির সর্বাধুনিক ছোয়া এখন ব্যাংকিং কে দিয়েছে অনেক উৎকর্ষতা। এক সময়ের বড় বড় লেজার বই এখন আর কোন ব্যাংকে খুজে পাওয়া যাবেনা। পাওয়া যাবেনা সোনালী রং এর সেই টোকেন যেটি নিয়ে গ্রাহক দাড়িয়ে থাকত টাকা তোলার জন্য। ইন্টারনেট ব্যাংকিং + বিভিন্ন ডিজিটাল প্রোডাক্ট এখন গ্রাহকদের আকর্ষণ করে অনেক বেশি।

ই একাউন্ট ওপেনিং ফরম বা (e-AOF) এর প্রধানতম বিবেচ্য বিষয় কিভাবে গ্রাহক সাক্ষর করবেন? সমাধান হচ্ছে ই-পেন দিয়ে গ্রাহক স্বাক্ষর করবেন পাশাপাশি ব্যাংক তাকে সিগ্নেচার কার্ডও প্রদান করবে কারণ অনেক গ্রাহকেরই সীল থাকে যা তিনি চেকে বা এডভাইস এ ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বিকাশ/ নগদ কিন্তু ডিজিটাল একাউন্ট করছে গ্রাহকদের এবং লেনদেনের স্বাভাবিক ধারাও বজায় আছে প্রচলিত আইনে থেকেই। তাহলে এই পদ্ধতি সম্ভব আমাদের প্রচলিত ব্যাংকিং এও।

গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি ব্যাংক চেষ্টা করে যায় অবিরাম। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী যখন একজন গ্রাহক মৃত্যুবরণ করেন তখন সেই একাউন্টটি ডিসিসড মার্ক হয় সেটি করতে হয় ফিজিক্যাল ফরম দেখে। চিন্তা করে দেখুন তো কোন ব্যাংকের যদি ২০ বছরের বেশি বয়স হয় আর ২০ লক্ষ + গ্রাহক থাকে তাহলে সেখানের প্রথম দিকের কোন একাউন্ট ডিসিসড মার্ক করতে কি পরিমাণ পুরনো কাগজ ঘাটতে হবে? অথচ আইনের ভেতরে থেকে (e-AOF) বাস্তবায়ন যদি সম্ভব হয় তাহলে আর প্রয়োজন পড়বেনা পুরোনো কাগজের এই সংরক্ষণ! অগনিত ব্যাংকারের অসংখ্য শ্রমঘন্টা তারা দিতে পারবেন অন্য সৃজনশীল কাজে, গ্রাহকদের সেবায়।

এবার আসুন খরচ বাচবে যে-ভাবে। একাউন্ট ওপেনিং ফরম ছাপানো বা ফটোকপি, পরিবহন ও সংরক্ষণ করা বাবদ ব্যাংকের একটি উল্লেখযোগ্য খরচ যায়। বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিং এর কল্যানে অনেক ব্যাংক আছে যাদের প্রচুর একাউন্ট ওপেন হয়। কারুর কারুর সেই সংখ্যা সত্যিই ঈর্ষনীয়। উদ্যোক্তা দ্বারা পরিচালিত এজেন্ট ব্যাংকিং এ যেহেতু সকল ব্যাংকের কর্মকর্তা থাকেন না সেক্ষেত্রে ফরম মিসিং এর সম্ভাবনা এজেন্ট ব্যাংকিং এ প্রচুর। তাছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং এর ফরম নিয়মিত করার জন্য ট্যাগিং ব্রাঞ্চ বা ব্যাক অফিসের কর্মকর্তাদের প্রচুর শ্রম যায়। (e-AOF) হলে এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ব্যাংকের খরচ কমে যায় উল্লেখযোগ্য পরিমান।

শ্রদ্ধেয় আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের একটি অমর উক্তি “মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়” আমিও একটি স্বপ্ন দেখি একদিন বাংলাদেশে সকল প্রচলিত ব্যাংক একাউন্ট (e-AOF) দ্বারা খোলা হবে, ইপেন দিয়ে স্বাক্ষরিত হবে বেশিরভাগ ডকুমেন্টস। অগনিত ব্যাংকারের অগনিত শ্রমঘন্টা প্রয়োজন হবেনা এই কাজে। প্রয়োজন শুধু সফটওয়্যার কে সেইমতন তৈরি করে নেয়া। ধন্যবাদ।

লেখকঃ সৈয়দ আব্দুর রাকিব, মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত। [প্রকাশিত এই লেখাটি লেখকের একান্তই নিজস্ব। ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ লেখকের মতাদর্শ ও লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখা ও মতামতের জন্য ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ দায়ী নয়।]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button