ইসলামিক ব্যাংকিং-এ আমানতকারীদের মধ্যে আয় ও মুনাফা বণ্টন
ইসলামিক ব্যাংকিং-এ আমানতকারীদের মধ্যে আয় ও মুনাফা বণ্টন একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বণ্টনে কোন প্রকার ভুল-ত্রুটি হলে পুরো ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাই প্রশ্ন সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।
আয় বা মুনাফা বণ্টনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইসলামিক ব্যাংকগুলো শুরু থেকে যে পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছে তা হলো ওয়েটেজভিত্তিক মুনাফা বণ্টন পদ্ধতি। আর ওয়েটেজ পদ্ধতি একটি জটিল এবং একাধিক স্তরবিশিষ্ট হিসাবায়ন ব্যবস্থা। এ পদ্ধতির বেশকিছু ইস্যু শরীয়াহ্ দৃষ্টিতে প্রশ্নবোধক।
ওয়েটেজভিত্তিক মুনাফা বণ্টন পদ্ধতিতে ইসলামিক ব্যাংক অর্জিত মুনাফা থেকে প্রথমে নিজের অংশ আলাদা করে নেয়। এরপর বাকী মুনাফা ওয়েটেজের ভিত্তিতে গ্রাহকদের মধ্যে ভাগ করে দেয়।
এ পদ্ধতিতে বার্ষিক ভিত্তিতে হিসাব চূড়ান্ত করা হয়। হিসাব সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে প্রভিশনাল বা সম্ভাব্য একটি নির্ধারিত হারে মুনাফা দিয়ে দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে হিসাব চূড়ান্ত হলে তা সমন্বয় করা হয়। সমন্বয় করা না হলে তা শরীয়াহ্সম্মত হয় না।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
ফলে এই জটিল পদ্ধতি পরিহার করে ইসলামিক ব্যাংকগুলো বাংলাদেশে “আইএসআর” (ISR) বা “ইনকাম শেয়ারিং রেশিও” (Income Sharing Ratio) পদ্ধতির উদ্ভাবন ও প্রচলন করে; যা অত্যন্ত সহজবোধ্য, আধুনিক ও শরিয়াহসম্মত একটি মুনাফা বণ্টন পদ্ধতি।
আইএসআর (ISR – Income Sharing Ratio) পদ্ধতিতে ইসলামিক ব্যাংক প্রত্যেক ধরনের হিসাবের জন্য আলাদা আলাদা শেয়ারিং রেশিও নির্ধারণ করে। এরপর অর্জিত মুনাফা নিজের এবং গ্রাহকের মধ্যে রেশিও অনুযায়ী ভাগ করে নেয়।
ইনকাম শেয়ারিং রেশিও (আইএসআর) মডিউল অনুসারে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় গ্রাহকের সাথে ব্যাংকের চুক্তি হয় সাধারণতঃ শেয়ারিং রেশিও নিয়ে। যেমন কোন গ্রাহকের ক্ষেত্রে শেয়ারিং রেশিও ৮০ঃ২০-এর অর্থ হল বিনিয়োগকৃত অর্থের আয় থেকে গ্রাহক পাবে ৮০ শতাংশ আর ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট ফি হিসেবে পাবে ২০ শতাংশ। সাময়িক কিংবা চূড়ান্ত কোন প্রকার মুনাফার হারের পূর্ব ঘোষণা এতে থাকে না। বলা চলে গ্রাহক ব্যাংকে রাখা আমানতের আয় সম্পর্কে অনিশ্চিত থেকেই অ্যাকাউন্ট খুলে থাকে।
আইএসআর পদ্ধতিতে ইসলামিক ব্যাংক প্রত্যেক ধরনের হিসাবের জন্য আলাদা আলাদা শেয়ারিং রেশিও নির্ধারণ করে। এরপর অর্জিত মুনাফা নিজের এবং গ্রাহকের মধ্যে রেশিও অনুযায়ী ভাগ করে নেয়।
এ পদ্ধতিতে মাসিক ভিত্তিতে হিসাব চূড়ান্ত করা হয়। ফলে প্রভিশনাল বা সম্ভাব্য হারে মুনাফা দেওয়া বা পরবর্তীতে হিসাব সমন্বয় করার প্রয়োজন হয় না। প্রকৃত মুনাফাই প্রদান করা সম্ভব হয়।
গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করার পর ব্যাংক তা শরীআহসম্মত বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে তা থেকে আয় অর্জন করে থাকে। এ আয় থেকে একটি অংশ (ধরা যাক ৫ শতাংশ) প্রফিট ইক্যুয়ালাইজেশন রিজার্ভ হিসেবে রেখে বাকি অংশ বিতরণযোগ্য আয় হিসেবে ধরা হয়। এ বিতরণযোগ্য আয়কে সংশ্লিষ্ট পিরিয়ডের সম্পূর্ণ আমানতের বিপরীতে আয় ধরে প্রত্যেক গ্রাহকের আমানতের বিপরীতে আয়ের পরিমাণ বের করা হয়। সেখান থেকে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় সম্মত হওয়া শেয়ারিং রেশিও অনুযায়ী একটি অংশ গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে এবং বাকি অংশ ব্যবস্থাপনা ফি হিসেবে ব্যাংক তার আয় খাতে স্থানান্তর করে।
গ্রাহকের হিসাবে প্রাক্কলিত আয়কে প্রত্যেক মাসেই একটি রেটে রূপান্তরিত করা যায়। সুতরাং আইএসআর সিস্টেমে আমানতের বিপরীতে মুনাফার বা আয়ের হার একটি ‘আউটপুট’। যা সুদ ভিত্তিক বা ওয়েটেজ সিস্টেম ব্যবহারকারী ব্যাংকগুলোর জন্য ‘ইনপুট’।
বিভিন্ন প্রকার মুদারাবা আমানতের জন্য মুনাফা বা আয় বণ্টনের ভিন্ন ভিন্ন শেয়ারিং রেশিও রয়েছে। সাধারণত আমানতের মেয়াদ যত বেশি হবে শেয়ারিং রেশিওতে গ্রাহকের অংশ তত বেশি হবে। বছরের প্রথমে বা হিসাব খোলার সময়ে আয় বণ্টনের এই হার (রেশিও) ঘোষণা করা হয়। গ্রাহক এই শেয়ারিং রেশিওতে সম্মত হয়েই তার অ্যাকাউন্ট খুলে থাকেন।
আরও দেখুন:
◾ ইসলামী ব্যাংকগুলো কি ঘুরিয়ে সূদ খায়?
◾ ইসলামী ব্যাংক সমূহের আমানত সংগ্রহ পদ্ধতি
◾ ব্যাংকিং এ শরীয়াহ: প্রসঙ্গ আমানত
◾ ইসলামী ব্যাংক সমূহের বিনিয়োগ পদ্ধতি
◾ ইসলামি ব্যাংকিং ও প্রচলিত ব্যাংকিং