অর্থনীতি

‘মাত্রিক উপশম’ মুদ্রানীতির এক নতুন মাত্রা

আবু এনএম ওয়াহিদঃ চলতি শতকের গোড়ার দিক থেকে পশ্চিমা দেশে নয়া এক কিসিমের বেপরোয়া মুদ্রানীতি চালু হয়েছে। পুঁজিবাদী সামষ্টিক অর্থনীতির এ প্রক্রিয়াকে বলে ‘কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং’। নতুন এ শব্দযুগল এরই মধ্যে হয়তোবা ইংরেজি অভিধানে উঠে এসেছে। তবে আমি এর কোনো বাংলা অনুবাদ কোথাও খোঁজে পাইনি। অগত্যা নিজেই এ অভিনব নীতির নাম দিয়েছি ‘মাত্রিক উপশম’। ইংরেজি ভাষাভাষী উন্নত দেশগুলোতে ‘কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং’-কে সংক্ষেপে লেখা হয় ‘কিউই’ বলে। আপনাদের আপত্তি না থাকলে একই সূত্র ধরে আমি ‘মাত্রিক উপশম’-কে বলতে চাই ‘মাউ’। দুই হাজার আট-নয় সালে আমেরিকায় ‘সাবপ্রাইম মর্টগেজ ক্রাইসিস’ শুরু হলে, ‘মাউ’ মার্কিন মুদ্রানীতিতে যুক্ত করে এক জুতসই ও শক্তিশালী ব্যবস্থাপত্র।

ইতিহাসে উনিশশ তিরিশের মন্দাকে বলা হয়, ‘মহামন্দা’ (গ্রেট ডিপ্রেশন), একইভাবে অর্থনীতির রথী-মহারথীরা ২০০৮-০৯-এর সংকোচনের নাম দিয়েছেন ‘মহাসংকোচন’ (গ্রেট রিসেশন)। এ ‘মহাসংকোচন’-এর মহাসংকট থেকে উত্তরণের আশায় জরুরি ভিত্তিতে প্রথমবারের মতো আমেরিকায় ‘মাউ’ প্রয়োগ করেছিলেন তত্কালীন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ জুনিয়র। পরে তাঁর উত্তরসূরি বারাক এইচ ওবামা এটাকে অবলীলায় জারি রেখেছেন। মার্কিন মুলুকে আজ অবধি ‘মাউ’ বহাল তবিয়তে আছে এবং কভিড-১৯-এর বদৌলতে ইদানীং এটা গা-গতরে আরো ডাঙর হয়ে উঠছে।

এখন প্রশ্ন হলো কেতাবে পড়া সনাতনী মুদ্রানীতি থাকতে নতুন করে ‘মাউ’-এর জরুরত দেখা দিল কেন। আশা করি এ কেনর উত্তর আপনাদের পক্ষে সমঝে নেয়া খুব একটা কঠিন হবে না। গতানুগতিক মুদ্রানীতি সুদের হারকে নিশানা করে এবং খোলাবাজার থেকে স্বল্প কিংবা স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি সরকারি বন্ড আর ট্রেজারি বিল কিনে কিনে অর্থনীতিতে মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। এতে সুদের হার পড়তে থাকে ও নতুন নতুন বিনিয়োগ, তথা কর্মসংস্থান তৈরি হয় এবং সার্বিক অর্থনীতি শনৈঃ শনৈঃ এগিয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হলো সুদের হার যখন এমনিতেই অনেক কম থাকে অথবা শূন্যের একেবারে কাছাকাছি চলে আসে তখন সুদ আর নিচে নামতে চায় না—বাসরঘরে নববধূর মতো অনড়, অটল হয়ে বসে থাকে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে এ স্থিতাবস্থাকে বলে ‘তারল্য ফাঁদ’ (লিকুইডিটি ট্র্যাপ)। এহেন পরিস্থিতিতে নতুন করে অর্থনৈতিক উল্লম্ফন ঘটাতে গেলে স্বাভাবিক সম্প্রসারণশীল মুদ্রানীতি কাজ তো করেই না, বরং একদম অপ্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়ায়।

এ রকম সময় মূল্যস্ফীতি যদি থাকে মামুলি ধরনের তাহলে তো আর কথাই নেই, অর্থনীতির চাকা সফলভাবে জোরেশোরে ঘোরানোর জন্য ‘মাউ’ একটি মোক্ষম দাওয়াই হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ধন্বন্তরির মতো কাজও করে। আর তাই এর সদ্ব্যবহার করেছেন এবং করছেন বুশ থেকে বাইডেন পর্যন্ত সবাই। মুদ্রানীতির নব আবিষ্কৃত এ ধরনের সহজ সংজ্ঞা কোনো বইয়ে সচরাচর পাওয়া যায় না, তাই আমি এ-কে সংজ্ঞায়িত করার কোনো কোশেশই করব না। এর বিপরীতে, আমি চেষ্টা করব পদ্ধতিটি কীভাবে কাজ করে, তা যতদূর সম্ভব সহজ-সরল ভাষায় আপনাদের কাছে খোলাসা করতে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

বয়ানটা শুরু করতে চাই এভাবে: গতানুগতিক মুদ্রানীতির সঙ্গে, ‘মাউ’-এর তফাত মূলত গুণগত নয়, বরং পরিমাণগত। স্বাভাবিক সময়ের স্বাভাবিক মুদ্রানীতি যা করে, ‘মাউ’ও মোটামুটি তা-ই করে, তবে রাজসমারোহে, বড় আকারে, আগ্রাসীভাবে করে এবং সুদের হারকে লক্ষ্যবস্তু বানায় না। সুদ কমল কি কমল না, সেদিকে ‘মাউ’ নজরই দেয় না। সে বাজারে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালে এবং সর্বভুকের মতো যা পায় তাই গিলে খায় এবং বলা যায়, এতে কোনো বাছবিচারও করে না। সুদের হার নামানোর জন্য চিরাচরিত মুদ্রানীতি খোলাবাজারে স্বল্প এবং বড়জোর মধ্যমেয়াদি সরকারি বন্ড ও সিকিউরিটিজ কেনে—ব্যস। কিন্তু ‘মাউ’ সরকারি-বেসরকারি যত প্রকার আর্থিক সম্পদ (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসেট) পাওয়া যায় নির্বিচারে তা-ই কেনে, অকাতরে কেনে। এর বড় একটা অংশ জুড়ে আছে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর মর্টগেজ ব্যাকড সিকিউরিটিজ। এতে এ ‘কেনাবেচা’ মহাযজ্ঞের কাঁচা টাকার বেশির ভাগই ব্যাংকে সিকিউরিটিজ বিক্রেতাদের বড় বড় হিসাবে জমা হয় এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এসব টাকা যিকঞ্চিৎ সুদে ব্যক্তি ও ব্যবসা খাতে ঋণ দানের কাজে লাগায়। এভাবে দেশে বিনিয়োগ বাড়ে ও কর্মসংস্থানের নানা পথ খুলে যায়। অর্থনীতির মৃদুমন্দ মন্দাভাবও কেটে যায়। এ তেজারতি চলে বিশাল আকারে, প্রচুর পরিমাণে।

শুনে অবাক হবেন, ‘মাউ’-এর আওতায় ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম (মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক) কোনো মাসে ৮০, কোনো মাসে ১০০, কোনো মাসে ১২০ কোটি ডলারের আর্থিক সম্পদ অবিরামভাবে কিনতে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় ২০০৮ থেকে ২০১৪ অবধি, নগদ মোট ৪ লাখ কোটি ডলার দেশের চলতি মুদ্রা প্রবাহে যোগ হয়েছে। এ বিস্ময়কর নীতিপদ্ধতি এখনো জারি আছে। এর ফলে একদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে তারল্যের পাহাড় গড়ে উঠছে এবং অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জমা-খরচ জোয়ারের মতো ফুলেফেঁপে বেড়ে উঠছে। যেহেতু তারল্যের সিংহভাগ ব্যক্তি ও ব্যবসা খাতে প্রবাহিত না হয়ে ব্যাংকঘরে লোহার সিন্দুকে জমা থাকে, তাই মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা কাউকে তেমন একটা ভাবায় না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে যে ভয় সব সময় তাড়া করে বেড়ায়, তা হলো প্রাইভেট কোম্পানির যেসব সম্পদ সে কেনে তাতে যে অনেক বিষাক্ত (টক্সিসিটি) বিষ থাকতে পারে, তার ঝুঁকি কেউই উড়িয়ে দিতে পারে না।

এক যুগ ধরে আমেরিকায় ‘মাউ’ চালু আছে। এতে অর্থনীতির প্রায় সব খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে, নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, শেয়ারবাজার লাফিয়ে লাফিয়ে উঠেছে, বাড়িঘরের বাজারে অকালে আকাল দেখা দিয়েছে। হাউজিং এবং স্টক মার্কেট ছাড়া মুদ্রাস্ফীতিতে ধর্তব্যে নেয়ার মতো তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। তার পরও এ কথা তো সত্য, আমেরিকার মোট সরকারি ঋণ দেশজ জিডিপিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদে সার্বিক অর্থনীতির জন্য এটা খুব একটা স্বস্তিদায়ক আলামত নয়। এ দেশে ‘মাউ’ এস্তেমাল হচ্ছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে, এজন্য অনেক পণ্ডিত মনে করেন—এভাবে হাওলাত করে ঘি খেতে খেতে একসময় জাতি একটা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়ে যেতে পারে। এ ব্যবস্থা বজায়ক্ষম হতে পারে না। ‘মাউ’কে আর আশকারা না দিয়ে এখনই এর লাগাম টেনে ধরা উচিত। নতুবা এমনও হতে পারে, মূল্যস্ফীতি আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বেসামাল রূপ ধরতে পারে, আমেরিকার দশা প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মানির মতো করুণ হতে পারে। তাই অবিলম্বে এটা বন্ধ হওয়া চাই।

অন্যরা বলেন, বারো বছরেও যখন দেশের ‘বারোটা’ বাজেনি, তখন ভয়ের কোনো কারণ নেই, ‘সব ঠিক হ্যায়, সব ঠিক হ্যায়’। অবশ্য বেশির ভাগ তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ বিষয়টির ওপর তীক্ষ নজর রাখছেন। তাদের মতে, ‘মাউ’ এখনো পরীক্ষামূলক পর‍্যায়ে আছে। তারা আরো মনে করেন, এভাবে এত মোটা অংকের টাকা দিয়ে অকাতরে সরকারি-বেসরকারি ঝুঁকিপূর্ণ (টক্সিক) আর্থিক সম্পদ না কিনে বরং এ অর্থ সরাসারি দেশের জনকল্যাণমূলক অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করা বেহতর। তাদের মতে, দেশব্যাপী জীর্ণ-শীর্ণ স্কুল, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, মহাসড়ক, সেতু, সরকারি উদ্যান, জাদুঘর ইত্যাদির গঠন, পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণ হোক নতুন জাতীয় অগ্রাধিকার। এ মতামতও সমালোচনামুক্ত নয়। বিরোধীরা মনে করেন, এটা হলে তো আর ‘মাউ’ মুদ্রানীতির অংশ থাকবে না, হয়ে যাবে সরকারের রাজস্ব নীতি। আদতে ‘মাউ’ মুদ্রানীতির এক নতুন ঢঙ হয়ে থাকবে, নাকি রাজস্ব নীতির রঙ ধরবে তা নিয়ে এখনো রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেও বিতর্কের অবসান হয়নি। কবে হবে, আল্লাহ মালুম।

যে ‘মাউ’ নিয়ে মার্কিন মুল্লুকে এত হইচই, এত মাতামাতি, এত চাপান-উতোর, ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখা যায় তার উত্পত্তি কিন্তু আমেরিকা, এমনকি অন্য কোনো পাশ্চাত্য দেশেও হয়নি, হয়েছে প্রাচ্যের প্রান্তসীমায় জাপানে। ‘কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং’—এ দুটো শব্দ ১৯৯৫ সালে সবার আগে ব্যবহার করেছেন একজন জার্মান অর্থবিশারদ রিচার্ড ওয়ার্নার। তা-ও জার্মানির জন্য, জার্মানির প্রয়োজনে নয়। তিনি এ ধারণার জন্ম দিয়েছেন জাপানের জন্য। এবার দেখা যাক, ঘটনাটা কী। ১৯৯৭ সালের ‘এশিয়ান ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইসিস’-এর হাত ধরে জাপান এক কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সংকোচনের গিরিকন্দরে পড়ে যায়। চার বছর ভোগার পর দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথমবারের মতো ২০০১ সালে আগ্রাসীভাবে ‘মাউ’ এস্তেমাল করতে শুরু করে। তাদের দেশে এ জাতের মুদ্রানীতি চালু ছিল এ শতকের প্রায় পুরো প্রথম দশকজুড়ে। জাপানের দেখাদেখি এ পথ অনুসরণ করে আমেরিকা এবং তারপর ইউরোপের অন্যান্য দেশ। বর্তমানে তামাম দুনিয়ায় বড় বড় যত কেন্দ্রীয় ব্যাংক আছে তারা মুখে ম্যাও ম্যাও করলেও কাজে সবাই ‘মাউ’ বাস্তবায়ন করেই চলেছে।

এতক্ষণ ‘মাউ’ ও তার ইতিবাচক দিকগুলো নিয়েই আলোচনা করলাম। এবার নজর ফেরাতে চাই ‘মাউ’-এর অসুবিধার দিকে। সমালোচকরা শুরুতে এ নীতির নেতিবাচক দিক নিয়ে যেসব আশঙ্কার কথা বলেছিলেন, আদতে তেমন কিছু ঘটেনি। যেমন মূল ভয়ের বিষয় ছিল মূল্যস্ফীতি, মুদ্রার মূল্যমানের অবমূল্যায়ন। এ দুটো বিষয় আবার পারস্পরিক অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আশার কথা, নিরাশবাদী বিশেষজ্ঞদের এ জাতীয় কোনো ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবে প্রমাণিত হয়নি। তবে লাগামহীন ‘মাউ’ কার্যক্রমের কারণে যা ঘটেছে তা হলো সবখানেই ধনী-গরিবের মাঝে আয় ও সম্পদের বৈষম্য হু হু করে বেড়েই চলেছে।

এ ব্যাপারে ১৯১৬ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে প্রকাশ্যে জোর গলায় ‘মাউ’-এর সমালোচনা করে বলেছিলেন, এটা এক ধরনের প্রত্যাবর্তী বা পশ্চাদ্গামী মুদ্রানীতি। সুদের হার শূন্যের কাছাকাছি হওয়ায় এ থেকে লাভবান হচ্ছে কেবল তারাই যারা স্টক মার্কেটে আছে এবং বাড়িঘরের মালিক হয়েছে, বিপরীতে গরিবরা তেমন কিছুই পাচ্ছে না। ‘বিসিএ’ রিসার্চ-এর তাত্ত্বিক গবেষক ধাবাল যোশীর মতে, ‘মাউ’-এর অধীনে বানের পানির মতো বাজারে ছুটে আসা তাড়া তাড়া টাকা বড়লোকদের জন্য আরো আরো মুনাফা এনে দিচ্ছে এবং গরিবের সঙ্গে তাদের বৈষম্য নিরন্তর বাড়িয়েই তুলছে। ‘রিজন ফাউন্ডেশন’-এর অ্যান্থনি র‍্যান্ডাজোরের বক্তব্যও মোটামুটি একই রকমের, ‘মাউ’ দারুণভাবে একটি বেইনসাফি আয় বিতরণ ব্যবস্থা। তিনি আরো বলেন, এটি যেন আয়বৈষম্য বৃদ্ধির এক চলমান তেজি ইঞ্জিন। ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’-এর তৈরি করা ২০১২ সালের এক রিপোর্টে দেখা যায়, ‘মাউ’ শুধু ধনীদের আরো ধনী করেনি, বরং এ ধনের ৪০ শতাংশ সমাজের সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ মানুষের হাতে সেধে তুলে দিয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব ডালাস’-এর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ফিশার ২০১৩ সালে এই বলে মন্তব্য করেছেন, স্বল্প সুদের সস্তা টাকা ধনীদের আরো ধনী করছে অথচ কর্মজীবী আমেরিকানদের জন্য বিশেষ কিছুই করছে না। আরো সম্প্রতি ২০১৮ সালে ‘ইসিবি’ আপাত-বিপরীতধর্মী বম-শেলের মতো একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ‘মাউ’-এর ফলে ২০ শতাংশ গরিবের নিট সম্পদ বেড়েছে ২.৫ শতাংশ অথচ সমপরিমাণ ধনীদের নিট সম্পদ বেড়েছে মাত্র ১ শতাংশ। অনেকে এরই মধ্যে এ রিপোর্টের বিশ্বযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমি যদি এটাকে সত্যবাদী ‘যুধিষ্ঠির’-ও ধরে নিই, তথাপি এখানে একটি বড় শুভংকরের ফাঁকি রয়ে গেছে। পাটিগণিতের হিসাবে, গরিবের কম টাকার আড়াই শতাংশে যদি হয় আড়াই হাজার ডলার, তাহলে ধনীর বেহিসাব পুঁজির ১ শতাংশ হতে পারে আড়াই কোটি ডলার কিংবা তারও অনেক বেশি!

উপসংহারে বলব, ‘মাউ’ ২০০৮-০৯ সালের ফাইন্যান্সিয়াল মেল্টডাউনের অভিঘাত থেকে আমেরিকা এবং বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশকে বাঁচিয়েছে। তবে পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় জারি থাকা ‘মাউ’ সমাজের জন্য কতটা সার্বিক সুফল বয়ে আনছে, সে বিষয়ে পণ্ডিত ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশ স্বল্পমেয়াদে ও মধ্যমেয়াদে ‘রিসেশন’ এবং ‘ডিফ্লেশন’ মোকাবেলায় ‘মাউ’ এস্তেমাল করছে বটে, কিন্তু আখেরে এর ফলাফল কী দাঁড়াবে, তা এখনো দেখার বিষয়।

লেখকঃ আবু এনএম ওয়াহিদ: অধ্যাপক, টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি; এডিটর, জার্নাল অব ডেভেলপিং এরিয়াজ।

আরও দেখুন:
অর্থ ব্যবস্থাপনার পাঁচ পরামর্শ
ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ জরুরি
অর্থনৈতিক লেনদেনে ধোঁকা ও প্রতারণা
নিম্ন সুদহার নীতি আর উচ্চ সুদহার ঝুঁকির চক্রে ব্যাংক
বিধ্বংসী পুঁজিবাদের বিকল্প কি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button