ইসলামী ব্যাংকিং

দেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের ক্রমবিকাশ

ড. মো. গোলাম মোস্তফাঃ ইসলামি ব্যাংকিং আল কোরআন, রাসুল (সা.)-এর কর্মপদ্ধতি এবং যুগে যুগে ইসলামি বিশেষজ্ঞদের বিধিবিধান অনুসরণ করে পরিচালিত একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী নতুন ধরনের ব্যাংক। এখানে নামে-বেনামে যেকোনো ধরনের সুদ নিষিদ্ধ। ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সুদ নির্মূলকরণ, ন্যায়বিচার, দক্ষতা, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে কল্যাণমূলক সমাজ গঠন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওত প্রাপ্তির আগে হজরত খাদিজা (রা.)-এর ব্যবসায় অংশীদারিত্বের (মুদারাবা) ভিত্তিতে যে ব্যবসা পরিচালনা করেন, তার সূত্র ধরেই ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থার উৎপত্তি।

বিশ্বে ব্যাংক ব্যবস্থা অনেক পুরোনো হলেও শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংক ব্যবস্থার আবির্ভাব পুরোনো নয়। আধুনিক পৃথিবীতে ১৯৫০ সালের শেষ দিকে পল্লি এলাকায় একটি স্থানীয় ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে প্রথম একটি ইসলামি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু সে উদ্যোগ সফল হতে পারেনি। মিসরের রাজধানী কায়রো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে নীল নদের বদ্বীপ ‘মিটগামারে’ ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সেভিংস ব্যাংক, যা আধুনিক বিশ্বের প্রথম আনুষ্ঠানিক ইসলামি ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃত। একে মিটগামার ব্যাংক বলা হয়। ড. আহমদ নাজ্জার ছিলেন এ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৬৩-৬৭ সাল পর্যন্ত শুধু মিসরেই ৯টি ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পর সবকটি ইসলামি ব্যাংক বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। ১৯৭১ সালে কায়রোতে প্রথম ইসলামি ব্যাংক হিসেবে ‘নাসের সোশ্যাল ব্যাংক’ পুনরুজ্জীবিত হয়।

প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে মুসলিম দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের এক সম্মেলনে নিজ নিজ দেশে অর্থনীতি ইসলামিকরণের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, দেশে দেশে ইসলামি ব্যাংক গঠন তারই ফলাফল। তাছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ কর্মসূচি ‘স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’-এর আওতায় বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশের সরকার উদারীকরণ নীতির মাধ্যমে প্রথম ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থাকে অনুমোদন দেয়া আরম্ভ করে। এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা শামিয়াল ডারভিশ, আব্বাস মীরাখন ও মহসীন খান। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৭৫টি দেশে ৬০০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ইসলামি ব্যাংকব্যবস্থা চালু রয়েছে এবং প্রায় ৪০০টি শাখাধারী প্রচলিত ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আইএমএফ বলছে, ‘ইসলামি ব্যাংকিং প্রচলিত পাশ্চাত্য ধারার চেয়ে অধিকতর সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সম্পূর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে এর কার্যকারিতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।’

১৯৭৪ সালে সেনেগালের রাজধানী ডাকারে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) চার্টারে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশসহ ২৮টি মুসলিম রাষ্ট্র। অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলনে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ আইডিবি চার্টারে সই করেন। সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর আইডিবি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের ইসলামি ব্যাংকিং আন্দোলন জোরদার হয়। সনদ অনুযায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের নিজ নিজ দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং কার্যক্রম ইসলামি শরিয়াহ্র ভিত্তিতে পরিচালনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। আইডিবি প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের মধ্যে বিভিন্ন দেশে ২০টির বেশি ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭৮ সালে ডাকারে ইসলামি দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে ইসলামি ব্যাংকের সংজ্ঞা অনুমোদিত হয়। বাংলাদেশও আইডিবির এক সদস্য।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ মহসিন দুবাই ইসলামি ব্যাংকের অনুরূপ একটি ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য পররাষ্ট্র সচিবের কাছে সুপারিশ করেন ১৯৭৯ সালে। এই সুপারিশের আলোকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং উইং ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিমত জানতে চান। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা পরিচালক এএসএম ফখরুল আহসান বিভিন্ন দেশের ইসলামি ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম দীর্ঘ পর্যালোচনা করে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইতিবাচক সুপারিশ করেন। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণীসহ রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের একটি বৈঠক হয়। সেখানে এসব ব্যাংকে ইসলামি শাখা খোলার সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নূরুল ইসলাম বেসরকারি খাতে ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সরকারি, বেসরকারি ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিভিন্ন সেমিনার ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে ইসলামি ইকোনমিক রিসার্চ ব্যুরো প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

সমসাময়িক সময়ে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য। এগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো ওয়ার্কিং গ্রুপ ফর ইসলামিক ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ, বায়তুশ শরফ ইসলামি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামি ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিবা) এবং বিআইবিএম। দীর্ঘ আলোচনা ও পর্যালোচনা শেষে আইডিবির অংশীদারিত্বে কয়েকজন ব্যবসায়ীর উদ্যোগে প্রথম প্রজম্মের বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে ১৯৮৩ সালের ৩০ মার্চ বাংলাদেশে ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি.’ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৮৩ সালের ১৩ মার্চ ‘কোম্পানি আইন, ১৯১৩’-এর অধীনে সীমিত দায় নিয়ে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। বিশ্বসেরা এক হাজার ব্যাংকের তালিকায় বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে মূলত দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছেÑতালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক। ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংক, ৪৩টি ব্যক্তিমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৯টি বিদেশি ব্যাংকসহ বাংলাদেশে মোট তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি এবং অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা পাঁচটি।

মোট আমানত:
চলতি বছরের ৩১ মার্চ সার্বিক ব্যাংক খাতে মোট আমানত ছিল ১২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানত রয়েছে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা, যা মোট আমানতের ২৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেটি ছিল দুই লাখ ৮০ হাজার ২২৭ কোটি টাকা।

মোট বিনিয়োগ:
২০২১ সালের মার্চ শেষে সার্বিক ব্যাংক খাতে মোট বিনিয়োগ ১১ লাখ ৬৩ হাজার ২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ রয়েছে তিন লাখ ২২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা, যা মোট বিনিয়োগের ২৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেটি ছিল দুই লাখ ৬২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। বিনিয়োগ বেড়েছে ৩১ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। তবে ইসলামি ব্যাংকিং সেবার আদর্শ ধারা মুদারাবা ও মুশারাকা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ এখনও দুই শতাংশের নিচে।

সুকুক বন্ড:
সুকুক হচ্ছে এক ধরনের ইসলামিক ফাইন্যান্সিয়াল সার্টিফিকেট। প্রচলিত সুদভিত্তিক বন্ডের বিকল্প হিসেবে ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য চালু করা হয়েছে সুকুক বন্ড, যা শরিয়াহ্ শর্ত মেনে পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য সুকুক বন্ড চালু করেছে। ইসলামি ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণের (এসএলআর) অর্থ বিনিয়োগের জন্য সরকারের ইসলামিক বিনিয়োগ বন্ড ছাড়া তেমন কোনো উপকরণ ছিল না। এটির রেট অব রিটার্ন খুবই কম। সুকুক চালু করা সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। এরই মধ্যে এ বন্ড ছেড়ে আট হাজার কোটি টাকা তহবিল গঠন করেছে সরকার। সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বন্ড বিক্রি করেছে। এ বন্ডের মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংকগুলোরও বিনিয়োগের সম্ভাবনা বেড়েছে।

তারল্য:
ব্যাংক খাতে এখন মোট তারল্য দুই লাখ চার হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামিক ব্যাংকগুলোর হাতে অলস টাকার পরিমাণ ২৯ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা, যা আগে ২০১৯ সালে ছিল ৯ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা।

প্রবাসী আয়:
দেশের মোট প্রবাসী আয়ের ৪০ শতাংশের বেশি আসে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা রেমিট্যান্সের ৩৩ শতাংশ আসছে ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে। এর পরিমাণ হলো ২১ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা।

দেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের বর্তমান চিত্র:
ইসলামি ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বর্তমান সময়ে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো বা শাখার মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের ৬১ ব্যাংকের ১০টি পূর্ণাঙ্গভাবে এবং ৩২টি নানা উপায়ে শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। মোট শাখা হলো ১০ হাজার ৭৬৭টি। এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকের শাখা এক হাজার ৭৭৮টি। ইসলামি ব্যাংকিং চালু করতে ১০টির বেশি আবেদনপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রয়েছে। দেশে বর্তমানে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক রয়েছে। এগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি., আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লি., আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লি., সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লি., শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লি., এক্সিম ব্যাংক লি., ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লি., ইউনিয়ন ব্যাংক লি., স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লি. ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।

শাখা ব্যাংকিং করছে এমন ইসলামি ব্যাংক হলো:
প্রাইম ব্যাংক ১৯৯৫ সালে ‘হাসানাহ ইসলামী ব্যাংকিং’ নামে পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা চালুর মাধ্যমে ডুয়েল ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রবর্তন করে। তার পথ ধরে প্রচলিত ব্যাংকগুলো শাখাভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ কর্তৃক প্রদত্ত নীতিমালা এবং দেশ-বিদেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের মানদণ্ড ও নিয়ম-পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রচলিত ব্যাংকগুলো ইসলামি শাখা ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ১০টি ব্যাংকের ২২টি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা রয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রচলিত ব্যাংকের একই শাখায় উইন্ডোভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম ‘সাদিক’ নামে প্রথম চালু করে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশ ২০০৪ সালে। পর্যায়ক্রমে বর্তমানে ১৩টি কনভেশনাল ব্যাংকের রয়েছে ২১২টি ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো।

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্যই রয়েছে এর শাশ্বত নিয়ম-নীতি ও পথনির্দেশনা। ইসলামি ব্যাংকিং ইসলামি অর্থনীতির একটি অপরিহার্য অংশ। ইসলামি শরিয়তের নীতিমালাই হলো ইসলামি ব্যাংকিংয়ের মূল নির্দেশিকা। ওয়ান ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিং সেবা প্রদানের জন্য ২০২০ সালে ‘আল-নূর ইসলামি ব্যাংকিং’ চালু করে। বর্তমানে সারাদেশের প্রচলিত ১০৫টি শাখার মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ব্যাংকটি।

বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের বয়স ৩৮ বছর হলেও পৃথক আইন বা নীতিমালা এখনও হয়নি। দেশে ইসলামি ব্যাংক চালু হওয়ার এক বছর আগে ‘ইসলামি ব্যাংকিং আইন’ প্রণয়ন করে থাইল্যান্ড। ১৯৭৫ সালে পাকিস্তানে ইসলামি ব্যাংকিং শুরু হয় এবং দেশটিতেও পৃথক ইসলামি ব্যাংকিং আইন রয়েছে। আমাদের দেশে ৩৮ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত শরিয়াহ্ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্রমবর্ধমান এ বিকাশ নিঃসন্দেহে দেশ ও জাতির জন্য একটি সুদৃঢ় ও স্থিতিশীল আর্থিক কাঠামো গড়ে তোলার বার্তা দেয়। মজবুত অর্থনীতি ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সহযোগী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ইসলামি ব্যাংকগুলো।

আরও দেখুন:
ইসলামী ব্যাংকিং এর ইতিহাস
ইসলামী ব্যাংকিং কি এবং কেন?
ব্যাংকিং এ শরীয়াহ: প্রসঙ্গ বিনিয়োগ

ইসলামি ব্যাংকিংয়ের প্রসারের জন্য ইসলামি মানি মার্কেট ও বন্ড বাজারকে আরও গতিশীল করতে হবে। ইসলামি ব্যাংকিং-সহায়ক শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং গবেষণা ও সহায়ক প্রতিষ্ঠান বাড়াতে হবে। ইসলামি ব্যাংকগুলোর মৌলিক ধারণা ও বনিয়াদি কর্তব্য তথা দেশের উন্নয়ন, বেকারত্বে দূরীকরণ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও দরিদ্রদের সমৃদ্ধি আনয়ন করা গেলে দেশে টেকসই অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যায়।

লেখকঃ কর্মকর্তা, ইসলামি ব্যাংকিং ডিভিশন, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button