ব্যাংকব্যাংকিং

তালিকাভুক্ত ব্যাংক কি বা কাকে বলে? তালিকাভুক্ত ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য সমূহ

যে সকল ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দিষ্ট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত তাদেরকে তফসিলি ব্যাংক বা তালিকাভুক্ত ব্যাংক বলে। কোন দেশের সবগুলো ব্যাংকই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত থাকে না। তালিকার বাইরেও ব্যাংক থাকতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে ব্যাংকের নাম তালিকাভুক্ত করে থাকে। তালিকাভুক্ত ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক হতে কিছু বিশেষ সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকে।

তফসিলি বা তালিকাভুক্ত ব্যাংক হচ্ছে যারা বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২-এর ৩৭ ধারানুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অফিসিয়ালি তালিকাভুক্ত ব্যাংকরূপে ঘোষিত এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদস্যভুক্ত। তফসিলি বা তালিকাভুক্ত হওয়ার বিশেষ তাৎপর্য হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নির্দেশিত ব্যাংকের কাঠামো, মূলধন সংরক্ষণ, বিধিবদ্ধ তহবিল, সংরক্ষণ, বিবরণী দাখিল ইত্যাদিসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বপ্রকার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মেনে চলার অঙ্গীকার করা। তালিকাভুক্তির মাধ্যমে ব্যাংকগুলি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদস্য হিসেবে বিশেষ মর্যাদা লাভ করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক হতে বিশেষ কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, যেমন রি-ডিসকাউন্টিং সুবিধা, মুদ্রা বাজারে অংশগ্রহণ করা, ক্লিয়ারিং ব্যবস্থার সদস্য হওয়া, ডিপোজিট স্কিম-এর সদস্য হওয়া, আইনগত মর্যাদা লাভ ইত্যাদি। রাষ্ট্রায়ত্ত এবং দেশীয় ও বিদেশি যেসব বেসরকারি ব্যাংকের তালিকা এ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে সেগুলির সবই তালিকাভুক্ত ব্যাংক।

Definition of Scheduled Bank (তফসিলি ব্যাংকের সংজ্ঞা)
যে কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত ও সংরক্ষিত তালিকার অন্তর্ভুক্ত ব্যাংকসমূহকে ঐ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত ব্যাংক বলে। কোন নির্দিষ্ট ব্যাংককে তালিকাভুক্ত হতে হলে সুনির্দিষ্ট কতিপয় কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করতে হয়। এছাড়া এদেরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশিত নীতিমালা ও প্রয়োজনীয় মুহূর্তে বহুবিধ সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করা হয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ ব্যাংকই তালিকাভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের সকল সরকারি, বাণিজ্যিক ও বিদেশী ব্যাংক ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।

তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংজ্ঞায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে-
The banks which get license to operate under Bank Company Act, 1991 (Amended upto 2013) are termed as Scheduled Banks.
অর্থাৎ ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০১৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর অধীনে পরিচালিত লাইসেন্স পাওয়া ব্যাংকগুলিকে তালিকাভুক্ত ব্যাংক হিসাবে অভিহিত করা হয়।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

বাংলাদেশে ৫৮টি তালিকাভুক্ত ব্যাংক রয়েছে। যারা বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে কাজ করে। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশ, ১৯৭২ এবং ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর মাধ্যমে ব্যাংকিং কাজ করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত। তবে সর্বশেষ কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ নামে আরেকটি ব্যাংককে অনুমতি দেয়া হয়েছে। যা এখনো কার্যক্রম শুরু করেনি। সুতরাং বর্তমানে বাংলাদেশে ৫৯টি তালিকাভুক্ত ব্যাংক হলো।

তফসিলি ব্যাংক এর সংজ্ঞায় S.N. Maheshwari বলেন-
Scheduled banks are those whose names are included in the second schedule to the central bank.
অর্থাৎ যেসব ব্যাংকের নাম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বিতীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সে গুলোকে তালিকাভুক্ত ব্যাংক বলে।

রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার অধ্যাদেশের ২(ই) ধারায় বলা হয়েছে-
A schedule bank means a bank in the second schedule of that act.
অর্থাৎ তালিকাভুক্ত ব্যাংক বলতে এ অধ্যাদেশ অনুযায়ী দ্বিতীয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ব্যাংককে বুঝায়।

L. R. Chowdhury তফসিলি ব্যাংকের সংজ্ঞায় বলেন-
“Schedule Bank” means a bank which satisfies certain conditions of having some minimum capital in reserve as per schedule of limit specified by Central Bank i.e., Bangladesh Bank.
অর্থাৎ তালিকাভুক্ত বা তফসিলি ব্যাংক অর্থ এমন একটি ব্যাংক যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেমন- বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা নির্ধারিত সীমা নির্ধারণ অনুসারে কিছু সর্বনিম্ন মূলধন রাখার নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে।

Features of Scheduled Bank (তফসিলি ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য সমূহ)
একটি তফসিলি বা তালিকাভুক্ত ব্যাংকের কতিপয় বৈশিষ্ট্য থাকে। যার মাধ্যমে তাদেরকে অন্যান্য ব্যাংক হতে আলাদা করা যায়। আর সেই বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নে আলোকপাত করা হলো-
নিজস্ব সত্তা বিশিষ্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান;
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত সদস্য;
অভ্যন্তরীণ পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণমুক্ত;
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় শর্তের অধীন;
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশ নির্দেশ মেনে চলতে বা অনুসরণ করতে বাধ্য;
কেন্দ্রীয় ব্যাংক হতে কতিপয় সুবিধা পাওয়ার অধিকারী; ও
দেশের অর্থ বাজারের সদস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button