ব্যাংক গ্রাহক

গ্রাহক সেবা: দোষ খুঁজে পেলাম না আজও

নুরুল ইসলাম খলিফাঃ কিছু কিছু ঘটনা না চাইতেও মাঝে মধ্যে ভেসে ওঠে মনের পাতায়। কখনও কৌতুক অনুভব করি, কখনও বেদনার্ত হই; কখনও বা সুখের একটি অনুভূতি অতীতকে মধুময় করে তোলে। আমি তখন একটি জেলা সদরে শাখা ব্যবস্থাপক এবং ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। একজন গ্রাহক পেশায় ডাক্তার, মাঝে মধ্যেই ব্যাংকে আসতেন। ডাক্তার বা চিকিৎসকগণ সাধারণত ব্যাংকের ভাল গ্রাহক হয়ে থাকেন বিশেষ করে ডিপোজিট গ্রাহক হিসেবে।

তাদের সঞ্চয়ের পরিমান সর্বদাই ভাল থাকে অন্তত: আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে। কাজেই এধরনের গ্রাহকদের আমরা একটু আলাদা দৃষ্টিতেই দেখতে অভ্যস্ত। ডাক্তার সাহেব এসে সরাসরি আমার চেম্বারেই বসতেন, গল্প করতেন। তার জমার রশিদটি আমি নিজের হাতেই লিখে দিতাম। মেসেঞ্জারের মাধ্যমে কাউন্টারে পাঠাতাম এবং জমা হলে ষ্টেটমেন্টসহ তার জমা বই দিয়ে দিতাম। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের তিনি একজন অনুরাগী শুভানুধ্যায়ী বলেও আমরা মনে করতাম।

একদিন তিনি একটা প্রস্তাব দিলেন যে, তার বাসার নিকটেই একটি জমি বিক্রয় হবে তিনি সেটা কিনতে চান। কিন্তু যে পরিমান টাকা লাগবে ততটা তার কাছে নেই। এখন তিনি ব্যাংক থেকে কিছু ঋন নিতে চান। বললাম, জমি কেনার জন্য কোনো ঋন দেয়ার বিধান নেই বর্তমান ব্যবস্থায়। এ ছাড়া আমরা ঋন দেই না; সরাসরি পণ্য কিনে দিতে হয় আমাদের। বললেন, আমি তো জমি কিনতেই চাই। বললাম, জমি কিনতে বিনিয়োগ দেয়ার বিধান কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাখেনি। তিনি বললেন, ‘ঐ যে আপনাদের টিভি, ফ্রিজ ও ফার্নিচার ক্রয়ের জন্য টাকা দেন না? সেই স্কীমের আওতায় দিবেন, আমি আবার মাসে মাসে পরিশোধ করে দিব।’

ধীরে ধীরে তাকে বুঝিয়ে বললাম যে, আপনি তো ফ্রিজ বা ফার্নিচার কিনবেন না। বিষয়টি হবে কৃত্রিম বা ভুয়া কেনা বেচা। এমন ধরনের ক্রয়-বিক্রয় ইসলাম অনুমোদন করে না। এতে যে বাড়তি অর্থ আসবে এটি সুদ হবে এবং একটি নিষিদ্ধ বিষয়ে জড়ানোর জন্য আপনিও অপরাধী হবেন এবং আমিও অপরাধী হব। এ ছাড়া এই আয় গ্রাহকদের মাঝে বন্টিত হবে, তাদের অপরাধের বোঝা আপনার আর আমার মাথায় চাপানো হবে। আপনার জমি কেনার বিষয়টি বাঁচা মরার মত কোনো সমস্যা নয়। কাজেই কেন আমরা এই ধরনের একটি অন্যায়ের আশ্রয় নিব? ধৈর্য ধরুন এবং আল্লাহর উপর ভরসা করুন। আল্লাহ সুযোগ করে দিবেন তখন কিনবেন। আর আপনি নিজের টাকায় জায়গা কিনতে পারলে আমরা বাড়ি বানানোর জন্য বিনিয়োগ দিতে পারবো সহজেই।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

আরও দেখুন:
◾ জীবন তরঙ্গ: এইচআরডি খুব পিচ্ছিল জায়গা!

মনে হলো তিনি বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই গ্রহন করেছেন। কিন্তু এর পর থেকে দেখি ডাক্তার সাহেব ব্যাংকে আসেন ঠিকই, কিন্তু আমার চেম্বারে আর আসেন না। কখনও সেকেন্ড অফিসারের কাছে বসছেন, কখনও অন্য কোনো অফিসারের সামনে বসে কাজ সারছেন। মনে মনে হাসলাম। সেকেন্ড অফিসারকে ডেকে বলে দিলাম, ডাক্তার সাহেব এলে সুন্দর করে তার কাজ করে দিবেন এবং চা খাইয়ে দিবেন কিন্তু। সে হেসে বললো, স্যার! আমি ওনাকে চিনি এবং এখন যে আপনার চেম্বারে যান না সেটাও লক্ষ্য করেছি।

আমি বললাম, আমার চেম্বারে না গেলেও সমস্যা নেই; ব্যাংকের গ্রাহক থাকলেই হলো। ঘটনাটি মাঝে মধ্যেই স্মরণ হলে এখনও একা একা হাসি। মনে মনে বলি, গ্রাহক সেবা দিতে কোথায় ত্রুটি করলাম বুঝতে পারছি না আজও।

লেখকঃ নুরুল ইসলাম খলিফা, সাবেক ডিএমডি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও সাবেক প্রিন্সিপাল, ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button