এজেন্ট ব্যাংকিং

কোভিড-১৯ বনাম এজেন্ট ব্যাংকিং

গত ১৮/০৫/২০২০ আমাদের একজন নিয়মিত গ্রাহক টাকা উওোলন করতে আউটলেটে এসেছিলেন বেলা ১-১.৩০ এর মধ্যে। ভদ্রলোক ঘর্মাক্ত চেহারায় দুই-তিন জনের ভিড় ঠেলে ক্যাশের সামনে এলেন। আমি ফেসিয়াল টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললাম কাজ পরে হবে আগে ঘামটা মুছে নিন। বিব্রত হয়েই টিস্যু টা নিয়ে ঘাম মুছলেন। তারপর অপেক্ষা না করেই বললেন আমি এখন গেলাম পরে আসছি….বা আপনাকে জানাচ্ছি।

তার মাত্র ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই অন্য একজন গ্রাহক এসে জানালেন ঐ ভদ্রলোকের স্ত্রী করোনা পজেটিভ এসেছে। ঐদিন সকালেই নাকি তারা রেজাল্ট জানতে পেরেছিলেন। খুব অবাক হলাম এরপরেও তিনি ব্যাংকে এলেন কেন? এটা ভেবে! বেলা ২-২.৩০ পেরুতেই খবর পেলাম ভদ্রলোক নিজেও করোনা পজেটিভ! জানার পরে তাকে ফোনে সাহস যুগিয়েছি, অভয় দিয়েছি। তবুও বলতে ইচ্ছে করছিলো আরেকটু সচেতন কি হওয়া উচিৎ ছিলো না?

যেহেতু উনি আমাদের নিয়মিত গ্রাহক তাই ওনার একাউন্ট নাম্বারটা আমার মুখস্থ। ১৯-০৫-২০২০ সকালে অফিসে বসেই ওনার একাউন্ট স্টেটমেন্ট চেক করলাম। ৪-১৮ তারিখের মধ্যেই ওনার একাউন্ট থেকে ৬ বার উওোলন বা ট্রান্সফার হয়েছিল! গতকাল এলেও কোন লেনদেনই করেননি। তার মানে গত ১৪ দিনে উনি নূন্যতম ০৭ বার আউটলেটে এসেছিলেন!

পরিস্থিতি কি হতে পারে আমাদের আউটলেটের সবার চিন্তা করে দেখবেন কেউ? আমাদের এজেন্ট মালিক তথ্যটি জানার পরপরই আমাদের আউটলেট বন্ধের নির্দেশনাই দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ এখনো আমরা সবাই সুস্থ আছি এবং এই তথ্য জানার পরেও আমরা ঈদ এবং মানুষের প্রয়োজনকে গুরত্ব দিয়ে আউটলেট খোলা রাখছি।। আর কটা দিন মানুষের প্রয়োজনে কাজ চালিয়ে যেতে চাই।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

যারা এজেন্টের প্রণোদনা/ স্বাস্থ্য বীমা নিয়ে ব্যাংকের দায়িত্বকে এড়িয়ে যাওয়ার পক্ষে তাদের বলছি আপনারা কি এখন যা পেতে যাচ্ছেন তা ফিরিয়ে দিবেন? এই প্রণোদনার প্রসঙ্গে আপনাদের তো টু শব্দটিও করতে দেখলাম না! বরং চাটুকারিতায় সরব ছিলেন কেউ কেউ! আবার অনেকেই রাগ করে না নেয়ার কথাও ভাবছেন! এটাও ভুল হবে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংক আমাদের পাশে দাঁড়ানোর এটাই প্রথম নজির। তাই এটাকে গ্রহণ করুন এবং ভবিষ্যতে এভাবেই দাবী আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হউন। দাবীর ন্যায্যতা কর্তৃপক্ষ বুঝেছে বলেই তো পদক্ষেপ নিয়েছে। ভালো কিছু যত ছোটই হোক, আসুন তা ভালো ভাবেই গ্রহণ করি।

করোনায় প্রণোদনা/ স্বাস্থ্য বীমার দায়িত্ব ২০১৯ সালেও কোন ব্যাংক নেয় নাই। নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা প্রদানের পরই। তাই সবকিছুতে ট্রেডমার্ক, চুক্তি আর নীতিমালার কথা বলা মানেই দূর্বলের অধিকার এড়িয়ে যাওয়ার নামান্তর। বরং এরকম পরিস্থিতিতে এমন আচরণ এটাই প্রমাণ করে আপনি স্বার্থপরায়ণ।

তাদের কাছেই আমার প্রশ্ন, ব্যাংকিং সেবার কোন পর্যায়ে ব্যবসার কথা ভাবা হয়নি? ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম কি ব্যবসা নয়? ব্যাংকগুলোর কি নীতিমালা নেই? প্রাতিষ্ঠানিক চুক্তি নেই? পরিস্থিতি মূল্যায়নে চুক্তির বাইরে এসে কি কখনোই কিছু হয়নি বা হচ্ছে না? ব্যবসায় পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্তৃত্ববাদী পক্ষই সিদ্ধান্ত নেয়। চুক্তির বাইরে এসেও কর্তৃত্ববান পক্ষই গুরত্ব দেয় করণীয় নির্ধারণে।

আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমরা যেমনি সমৃদ্ধ হতে পারবো তেমনি বিচ্ছিন্ন চিন্তা ভাবনায় অধিকার বঞ্চিত হবো। অবাক হলাম প্রণোদনা কম-বেশি বা না দিলে কি করতেন এসব নিয়ে কথা বলাবলি হচ্ছে! অথচ কেউই বললেন না আমাদের স্বাস্থ্য বীমা কি হবে..?

আমি মনে করি প্রণোদনা না দিয়ে স্বাস্থ্য বীমা দিলে সেটাই উওম হতো। হয়তো আমরা অনেকেই এই দুই-এক হাজার টাকার প্রণোদনা পেতাম না। তাছাড়া পরিমাণে কম বিধায় এই টাকার আপেক্ষিক গুরত্বও সবার কাছেই কম। কিন্তু আমাদের কোন সহকর্মী করোনায় আক্রান্ত হলে অন্তত যদি স্বাস্থ্য বীমার টাকাটা তার পরিবার পেতো তা কি ভালো হতো না?

লেখকঃ আফসার জাভেদ, ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট আউটলেটে কর্মরত

প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংক, ব্যাংকার ও ব্যাংকিং বিষয়ক চলমান খবর বা সমসাময়িক বিষয়ে আপনার লেখা ও মতামত ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ প্রকাশ করতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন- [email protected] আমরা আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে তা প্রকাশ করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button