অর্থনীতি

বাংলাদেশে করোনাঃ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের অর্থনীতি

তৈরী পোশাক শিল্প ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এই দুটি সেক্টর আমাদের বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিগত তিন দশক ধরে অনেকটা একচ্ছত্রভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আজ স্বল্প সময়ের ব্যবধানে উভয় সেক্টর আজ বিরাট চালেঞ্জের মুখোমুখি।

তৈরী পোশাক শিল্প কাঁচামালের জন্য প্রায় পুরোপুরি আমদানি নির্ভর, আর সেগুলোর সিংহভাগ আসে চীন থেকে। আবার আমাদের তৈরী পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপ। করোনা ভাইরাস এর সংক্রমনে প্রথমে চীন এরপর ইউরোপ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। চীনের কারখানাগুলো বন্ধ, আর ইউরোপে ক্রেতারা অবরুদ্ধ হয়ে আছে।

এমতাবস্থায়, একদিকে গত জানুয়ারি থেকে আমাদের কাঁচামাল আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে ফেব্রুয়ারি থেকে ইউরোপের কার্যাদেশগুলো স্থগিত করা হচ্ছে। তাই আমাদের অর্থনীতির মুল চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প এখন উভয় সংকটে। চীন হয়তো ঘুরে দাড়াচ্ছে যা একদিকে আশাব্যঞ্জক আবার অন্যদিকে ইউরোপের ক্রমবর্ধমান অচলাবস্থা হতাশার কালো মেঘ হয়ে ভয় দেখাচ্ছে।

এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠলেও চীন, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র তথা সারা বিশ্বব্যাপী দেখা দিতে পারে অর্থনৈতিক মহামন্দা, এমনটিই আশঙ্কা করছেন Moody’s এর বিশ্লেষকরা। আল্লাহ না করুন, যদি সত্যিই এমনটি ঘটে তাহলে আমাদের শুধু ৪০ লক্ষ পোশাক শ্রমিকেরা আক্রান্ত হবেনা বরং আমাদের পুরো অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিল্পগুলো (ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিঙ্কেজ)।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ব্যাংকগুলো ইতোমধ্যে ওই কার্যাদেশগুলোর বিপরীতে যে ঋণ সুবিধা দিয়েছে (ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র, প্যাকিং ক্রেডিট অন্যান্য) বা প্রতিষ্ঠানগুলোর চলতি বা মেয়াদি ঋণসমুহের রিপেইমেন্ট অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সর্বোপরি, এসব শিল্পে অর্থায়নকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মন্দ ও শ্রেনীকৃত ঋণের পরিমান আরো বেড়ে যেতে পারে।

সামনে পবিত্র ইদ-উল-ফিতর এ কারখানাগুলো শ্রমিকদের বেতন ভাতা ঠিকমত না দিতে পারলে যে ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হবে সেটাও আমাদের জন্য সুখকর হবেনা।

আমাদের প্রবাসী আয়ের সিংহভাগ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে এবং এই দেশগুলো প্রায় পুরোপুরি জ্বালানি তেল নির্ভর অর্থনীতি। বর্তমান করোনা মহামারীতে বৈশ্বিক তেলের বাজার ইতোমধ্যে নিম্নগামী হতে শুরু করেছে (প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের মূল্য এখন কমে দাড়িয়েছে ৩০ ইউএস ডলারে)। তার উপর এই দেশগুলোতে যে হারে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তা মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।

আবার সৌদি আরবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়ের উৎস ধর্মীয় পর্যটন এবং কাতারের এয়ার ওয়েজ কার্যত এখন বন্ধ। অন্য দেশগুলোও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সীমিত করে ফেলেছে। ফলে, সেখানেও মন্দা দেখা দিতে পারে এবং আমাদের শ্রম বাজার সংকুচিত হবার আশঙ্কা রয়েছে।

এরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে কি না এবং এই ধাক্কাগুলো আমাদের অর্থনীতি কিভাবে সামলে নিবে তা ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। আমাদের অর্থনীতি যদি সত্যিই করোনায় আক্রান্ত হয়, সেক্ষেত্রে আমরা তার চিকিৎসায় আইসিইউ তৈরি রাখছি তো?

লেখকঃ আশিক মাহমুদ, সিনিয়র অফিসার, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, বাতাকান্দি শাখা, কুমিল্লা। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button