ব্যাংক নোট

বাংলাদেশের কয়েন-মুদ্রা সংক্রান্ত তথ্য

মুদ্রা আবিষ্কারের প্রাথমিক স্তর হচ্ছে কয়েন। মুদ্রার প্রচলন হয় কয়েনের মাধ্যমে। তখনকার সময় অতীব মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি করা হতো এই কয়েন। এক সময় স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার প্রচলন ছিল। এখন তা শুধুই ইতিহাস। ছবিতে যে কয়েন গুলো দেখছেন তা বাংলাদেশী মুদ্রার বিবর্তন ও পরিবর্তন। তার মধ্যে পাঁচটি কয়েন এখন ইতিহাস। প্রথম তিনটি কয়েন অনেকেই দেখেনি। আমাদের পরবর্তী প্রজম্মের কাছে ইতিহাস হতে চলেছে এক ও দুই টাকার কয়েন যা বাংলাদেশের মার্কেট থেকে উঠিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে করে কয়েনের ইতিহাস পরিবর্তন হবে নিশ্চিত, সেই সাথে পরিবর্তন হবে দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাস। পচিঁশ পয়সায় চকলেট পাওয়া যেত এটা যেমন ইতিহাস, তেমনি করে এক ও দুই টাকায় এখন চকলেট পাওয়া যায় এটা কালকের ইতিহাস।

বাংলাদেশের কয়েন-মুদ্রার তথ্য
– বাংলাদেশে ১ম নোট চালু হয় = ৪ মার্চ ১৯৭২ সালে ১০ টাকার নোট সর্বপ্রথম ছাপানো হয়।
– বর্তমানে বাংলাদেশে কাগজের নোট রয়েছে = ৯টি।
– এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নোট = ৬টি।
– বাংলাদেশে প্রচলিত টাকার ব্যাংক নোট নয় = এক, দুই ও পাঁচ টাকার নোট।
– এক টাকার, দুই টাকার ও পাঁচ টাকার নোটে স্বাক্ষর থাকে = অর্থ সচিবের।
– ‘সবার জন্য শিক্ষা’ স্লোগানটি আছে = দুই টাকার মুদ্রায়।
– বাংলাদেশে চালু পলিমার মুদ্রা মুদ্রিত হয় = অস্ট্রেলিয়ায়।
– ৫০০ টাকার নোট কোন দেশে ছাপা হয় = জার্মানিতে৷
– ১ ও ৫ টাকার ধাতব মুদ্রা তৈরি করা হয় = কানাডায়।
– সরকারি নোট = ১, ২ ও ৫ টাকার নোট।
– বাংলাদেশে টাকা ছাপার জন্য বিশেষ কাগজ আমদানি করা হয় = সুইজারল্যান্ড থেকে।
– বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর কাগুজে মুদ্রা = বাংলাদেশের ২ টাকার নোট।
– বর্তমানে বাংলাদেশ বাংকের শাখা আছে = ১০টি (সর্বশেষ ময়মনসিংহ)।
– ১ মার্কিন ডলার তৈরী করতে বাংলাদেশী = ২১ টাকা খরচ হয়।

বাংলাদেশী মুদ্রা ছাপানোর ইতিহাস
বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভের পর কিছু সময় পাকিস্তানী ১, ৫ এবং ১০ রূপী ব্যবহৃত হয় যা পরের দিকে সরকার বাতিল করে দেয়। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের ৪ঠা মার্চ প্রথম নোট চালু হয়। প্রথমে ১, ৫, ১০ এবং ১০০ টাকার নোট ছাপা হয়। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যতগুলো নোট এবং কয়েন বাজারে ছাড়া হয়েছে তার ইতিহাস তুলে ধরা হলঃ

• এক টাকাঃ
– বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর কিছু দিন পাকিস্তানী ১ রূপী প্রচলিত ছিল।
– পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের ৪ঠা মার্চ বাংলাদেশী ১ টাকার নোট ইস্যু হয়।
– ১৯৭৩ সালের ২রা মার্চ প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক সম্বলিত ১ টাকার নোট ইস্যু হয়।
– এরপর ১৯৭৩ সালের ১৮ই ডিসেম্বর পুনরায় আরেকটি ১ টাকার নোট ইস্যু হয়।
– পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর “রয়েল বেঙ্গল টাইগার”-এর জলছাপ সম্বলিত ১ টাকার নোট ইস্যু হয়। এরপর আর কোন ১ টাকার কাগুজে নোট ইস্যু হয়নি।
– মাঝে ১৯৭৫ সালে “নিকেল-কপার” দ্বারা তৈরী ১ টাকার কয়েন ইস্যু হয়েছিল।
– এরপর ১৯৯৩ সালের ৯ই মে পুনরায় ১ টাকার কয়েন ইস্যু হয়। পরবর্তীতে এর আকৃতি এবং রঙ ৩ বার পরিবর্তন করা হয়।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

• দুই টাকাঃ
– ১৯৮৮ সালের ২৯ই ডিসেম্বর দ্বিতীয় “সরকারী নোট” ২ টাকা ইস্যু হয়। এরপর আর কোন ২ টাকার কাগুজে নোট ইস্যু হয়নি।
– পরবর্তীতে ২০০৪ সালে “স্টীল”-এর তৈরী ২ টাকার কয়েন ইস্যু হয়।

• পাঁচ টাকাঃ
– ১৯৭২ সালের ৪ঠা মার্চ প্রথম ৫ টাকার নোট ইস্যু হয়।
– পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর এবং ১৯৭৪ সালে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান” – এর ছবি সম্বলিত আরো দু’টি নোট ইস্যু হয়।
– ১৯৭৬ সালের ১১ই অক্টোবর “তারা মসজিদ”-এর ছবি সম্বলিত নোট ইস্যু হয়।
– ১৯৭৮ সালের ২রা মে “তারা মসজিদ”-এর পরিবর্তে “কুসুম বাগ মসজিদের মেহরাব”-এর ছবি সম্বলিত নোট ইস্যু হয়।
– ২০০৬ সালের ৮ই অক্টোবর, ১৯৭৮ সালের নোটটি ইস্যু হয়। পার্থক্য হল নোটটিতে ৩মিমি চওড়া নিরাপত্তা সূতা ব্যবহার করা হয়।
– মাঝে ১৯৯৩ সালের ১লা অক্টোবর ৫ টাকার কয়েন ইস্যু হয়।

• দশ টাকাঃ
– ১৯৭২ সালের ৪ঠা মার্চ প্রথম ১০ টাকার নোট ইস্যু হয়।
– পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের ২রা জুন এবং ১৯৭৩ সালের ১৫ই অক্টোবর “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান” – এর ছবি সম্বলিত আরো দু’টি নোট ইস্যু হয়।
– ১৯৭৬ সালের ১১ই অক্টোবর “তারা মসজিদ”-এর ছবি সম্বলিত নোট ইস্যু হয়।
– পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালের ৩রা আগস্ট এবং ১৯৮২ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর “আতিয়া জামে মসজিদ” -এর ছবি সম্বলিত ভিন্ন দু’টি নোট ইস্যু হয়।
– ১৯৯৭ সালের ১১ই ডিসেম্বর “লালবাগ কেল্লা মসজিদ”-এর ছবি সম্বলিত নোট ইস্যু হয়।
– ২০০০ সালের ১৪ই ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়া থেকে ১০ টাকার পলিমার নোট তৈরী করে আনা হয় যা বাংলাদেশের জন্য ব্যবহারের অনুপযোগী।
– ২০০২ সালের ৭ই জানুয়ারী ১০ টাকার আরেকটি নোট ইস্যু হয়।
– সর্বশেষ ২০০৬ সালের ২১ই সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা উপাদান বাড়িয়ে পুনরায় আগের নোটটি ইস্যু হয়।

• বিশ টাকাঃ
– ১৯৭৯ সালের ২০ই আগস্ট প্রথম ২০ টাকার নোট ইস্যু হয়।
– পরবর্তীতে হলগ্রাফিক নিরাপত্তা সংযুক্ত করে ২০০২ সালের ১৩ ই জুলাই পুনরায় আগের নোটটি ইস্যু হয়।

• পঞ্চাশ টাকাঃ
– ১৯৭৬ সালের ১লা মার্চ প্রথম ৫০ টাকার নোট ইস্যু হয়।
– ১৯৭৯ সালের ৪ঠা “তারা মসজিদ”-এর পরিবর্তে “ষাট গুম্বুজ মসজিদ”-এর ছবি সম্বলিত নোট ইস্যু হয়।
– ১৯৮৭ সালের ২৪ই আগস্ট প্রথমবারের মত “স্মৃতিসৌধ”-এর ছবি সম্বলিত নোট ইস্যু হয়।
– এরপর ১৯৯৯ সালের ২২ই আগস্ট এবং ঈষৎ পরিবর্তন করে ২০০৩ সালের ১২ই মে একই নোট ইস্যু হয়।

• একশ টাকাঃ
– ১৯৭২ সালের ৪ঠা মার্চ প্রথম ১০০ টাকার নোট ইস্যু হয়।
– ১৯৭২ সালের ১লা সেপ্টেম্বর “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান” – এর ছবি সম্বলিত এবং ১৯৭৬ সালের ১লা মার্চ “তারা মসজিদ”-এর ছবি সম্বলিত দু’টি একই ডিজাইনের নোট ইস্যু হয়।
– ১৯৭৭ সালের ১৫ই ডিসেম্বর সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইনের ১০০ টাকার নোট ইস্যু হয়।
– সালের ১৫ই মার্চ Optical Variable Ink (OVI) ব্যবহার করে নোট ইস্যু হয়।
– ২০০২ সালের ৫ই জুন “স্মৃতিসৌধ”-এর ছবি সম্বলিত নোট ইস্যু হয়।
– ২০০৫ সালের ২৮শে জুলাই পূর্বের ১০০ টাকার “100” শব্দটিকে সোনালী রঙে পরিবর্তন করা হয়।

• পাঁচশত টাকাঃ
– ১৯৭৬ সালের ১৫ই ডিসেম্বর প্রথম ৫০০ টাকার নোট ইস্যু হয়।
– পরবর্তীতে ডিজাইনে ব্যপক পরিবর্তন এনে ১৯৯৮ সালের ২রা জুলাই আরেকটি নোট ইস্যু হয়।
– ২০০০ সালের ১০ই আগস্ট “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান” – এর ছবি সম্বলিত নোট ইস্যু হয়।
– ২০০২ সালের ১৭ই জুলাই “স্মৃতিসৌধ”-এর ছবি সম্বলিত নোট ইস্যু হয়।
– ২০০৪ সালের ২৪ই অক্টোবর পূর্বের নোটের “৫০০” এর পরিবর্তে “পাঁচশত টাকা” শব্দে Optical Variable Ink (OVI) ব্যবহার করে নোট ইস্যু হয়।

• এক হাজার টাকাঃ
– বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মানের নোট। নোটটি ২০০৮ সালের ২৭শে অক্টোবর ইস্যু হয়। এর সামনের অংশে শহীদ মিনার এবং পেছনের অংশে কার্জন হলের ছবি রয়েছে। এতে মোট ১১ টি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

বাংলাদেশের কয়েন-মুদ্রা নিয়ে একটি ভিডিও দেখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button