বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার

ভালাে ঋণগ্রহিতাদের প্রণােদনা প্রদান সংক্রান্ত সার্কুলার

ভালো ঋণগ্রহীতাদের চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট হারে রিবেট দেওয়ার মাধ্যমে তাদের প্রণোদনা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও ভালো ঋণগ্রহীতারা ওই সুবিধা ঠিকভাবে পাচ্ছেন না। ভালো ঋণগ্রহীতাদের প্রতিবছর বিশেষ সনদ দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০১৯ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সার্কুলারে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংক সমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক এই সার্কুলারটি জারি করা হয়েছে। নিম্নে সম্পূর্ণ সার্কুলারটি তুলে ধরা হলো-

প্রিয় মহোদয়,

ভালাে ঋণগ্রহিতাদের প্রণােদনা প্রদান প্রসঙ্গে।

শিরােনামােক্ত বিষয়ে মার্চ ১৯, ২০১৫ তারিখে জারিকৃত বিআরপিডি সার্কুলার নং-০৬, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫ তারিখে জারিকৃত বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং-১৬ এবং ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬ তারিখে জারিকৃত বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং-০৩ এর প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

২. বিআরপিডি সার্কুলার নং-০৬/২০১৫ এর মাধ্যমে ভালাে ঋণগ্রহিতাদের চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট হারে রিবেট দেয়ার মাধ্যমে তাদেরকে প্রণােদনা প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হলেও ভালাে ঋণগ্রহিতারা উক্ত সুবিধা সঠিকভাবে পাচ্ছেন না মর্মে পরিলক্ষিত হয়েছে। ভালাে ঋণগ্রহিতা চিহ্নিতকরণসহ তাদেরকে প্রণােদনা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছেঃ

২.১. প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাস অন্তে নিম্নোক্ত ক্রাইটেরিয়া অনুসরণপূর্বক ভালাে ঋণগ্রহিতাকে চিহ্নিত করতে হবেঃ

২.১.১. চলমান ঋণগ্রহিতার ঋণহিসাব ক্রমাগতভাবে সংশ্লিষ্ট বছরের সেপ্টেম্বর মাস ও পূর্ববর্তী ৪টি ত্রৈমাসিকে অশ্রেণিকৃত-স্ট্যান্ডার্ড অবস্থায় থাকলে এবং মঞ্জুরী পত্র/নবায়ন পত্রের শর্তানুসারে উক্ত ঋণ হিসাবে লেনদেন সন্তোষজনক হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ভালাে ঋণগ্রহিতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

২.১.২. তলবী ঋণগ্রহিতার সংশ্লিষ্ট বছরের সেপ্টেম্বর মাস ও পূর্ববর্তী ৪টি ত্রৈমাসিকে গৃহিত সকল তলবী খণ অশ্রেণিকৃত-স্ট্যান্ডার্ড অবস্থায় সমন্বিত হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ভালো ঋণগ্রহিতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

২.১.৩. মেয়াদী ঋণগ্রহিতার ঋণ হিসাব বিগত ১২ মাসের সকল কিস্তি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে নিয়মিতভাবে পরিশােধিত হলে এবং সংশ্লিষ্ট বছরের সেপ্টেম্বর মাস ও পূর্ববর্তী ৪টি ত্রৈমাসিকে অশ্রেণিকৃত-স্ট্যান্ডার্ড অবস্থায় থাকলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ভালাে ঋণগ্রহিতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

২.১.৪. কোন ঋণগ্রহিতার একাধিক ঋণ থাকলে প্রতিটি ঋণের জন্য পৃথকভাবে উল্লিখিত শর্তসমূহ পরিপালন করলেই তিনি ভালাে ঋণগ্রহিতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

২.১.৫. সকল ক্ষেত্রেই কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিগত ১২ মাসে কোন গ্রাহক বা তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বিরূপমানে শ্রেণিকৃত ঋণ থাকলে উক্ত গ্রাহক ভালাে ঋণগ্রহিতা হিসেবে বিবেচিত হবেন না।

৩. ভালাে ঋণ গ্রহিতাদেরকে প্রণােদনা প্রদানের ক্ষেত্রে নিম্নরূপ নীতিমালা অনুসরণ করতে হবেঃ

৩.১. চলমান/তলবী/মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাস শেষে বিগত ১২ মাসে (অর্থাৎ বিগত বছরের ০১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ভালাে ঋণগ্রহিতার সংশ্লিষ্ট ঋণের বিপরীতে আদায়কৃত সুদ/মুনাফার অন্যূন ১০% রিবেট (Rebate) সুবিধা প্রদান করতে হবে। পরবর্তীতে প্রতি বছর গ্রাহক ভালাে ঋণগ্রহিতা হিসেবে চিহ্নিত হলে একই রকম সুবিধা অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও ভালাে ঋণগ্রহিতার প্রয়ােজনীয়তার নিরিখে বর্ধিত ঋণ সুবিধা প্রদান করা যাবে।

৩.২. উক্ত সার্কুলারের আলােকে ব্যাংকের পর্ষদ কর্তৃক অনুমােদিত ভালো ঋণগ্রহিতাদের প্রণােদনা প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং এতদসংক্রান্ত সুবিধা প্রচারণার্থে প্রতিটি শাখা তা সহজে দৃষ্টিগােচর হয় এরূপ স্থানে প্রদর্শন (Display) করতে হবে।

৩.৩. ভালাে ঋণগ্রহিতা হিসেবে চিহ্নিত হবার পর সংশ্লিষ্ট বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ২ নং ক্রমিক অনুযায়ী ব্যাংক কর্তৃক কেইস-টু-কেইস ভিত্তিতে রিবেট হিসাবায়নপূর্বক প্রাপ্যতা অনুযায়ী ঋণগ্রহিতাদেরকে রিবেট/প্রণােদনা প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে রিবেট/প্রণােদনা বাবদ প্রদত্ত অর্থ সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের নিকট হতে প্রাপ্ত সুদ/মুনাফা খাতকে ডেবিট করে অথবা প্রয়ােজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করে প্রদান করতে পারবে। তবে কোন বিশেষ কারণে কোন ঋণগ্রহিতাকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে রিবেট প্রদান করা সম্ভব না হলে সংশ্লিষ্ট হিসাববর্ষের Financial Statements-এ আবশ্যিকভাবে সমপরিমাণ অর্থের প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে এবং পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে ঋণগ্রহিতার প্রাপ্য রিবেট প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।

৩.৪. রিবেট/প্রণোদনা সুবিধা পাওয়ার জন্য খণগ্রহিতার আবেদনের প্রয়ােজন হবে না। ব্যাংক কর্তৃক স্ব-উদ্যোগে ভালাে ঋণগ্রহিতা চিহ্নিত করে প্রাপ্যতা অনুযায়ী তাদের রিবেট/প্রণােদনা সুবিধা প্রদানের প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে ঋণগ্রহিতাকে রিবেট/প্রণােদনা প্রদান করার পূর্বে ঋণগ্রহিতার নিকট হতে এ মর্মে প্রত্যয়ন গ্রহণ করতে হবে যে, ঋণগ্রহিতার নিজ নামে বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে অপর কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিগত ১২ মাসে বিরূপমানে শ্রেণিকৃত কোন ঋণ ছিল না এবং বর্তমানেও নেই।

৩.৫. ভালাে ঋণগ্রহিতাগণ যাতে সময়মত ঋণের অর্থ পরিশােধ করতে উৎসাহিত হয় সেলক্ষ্যে তাদের প্রাপ্য রিবেট/প্রণােদনা যথাসময়ে প্রদান নিশ্চিতকল্পে রিবেট/প্রণােদনা প্রদানের বিষয়টি শাখা পর্যায়ে বা আঞ্চলিক পর্যায়ে নিষ্পত্তি করার প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে, এক্ষেত্রে সার্কুলারের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষে রিবেট হিসাবায়ন ও প্রদানের বিষয়গুলো ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করার পাশাপাশি অভ্যস্তরীণ নিয়ন্ত্রণেরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৩.৬. ভালো ঋণগ্রহিতাদের ঋণ তথ্য পরবর্তীতে স্ট্যান্ডার্ড থাকা সাপেক্ষে সিআইবিতে STD-GB (Standard-Good Borrower) হিসেবে রিপাের্ট করতে হবে।

৪. পুনঃতফসিলকৃত পুনর্গঠিত ঋণগ্রহিতাদের জন্য উক্ত সার্কুলারের সুবিধা প্রযােজ্য হবে না।

৫. ভালাে ঋণগ্রহিতাদের নিরূপ উৎসাহব্যঞ্জক প্রণােদনা প্রদান করতে হবেঃ

৫.১. ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী ভালাে ঋণগ্রহিতাদের বিশেষ সুবিধা (রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ডিসকাউন্ট সুবিধা ইত্যাদি) প্রদান করতে হবে।

৫.২. ভালাে ঋণগ্রহিতাদের প্রতি বছর ব্যাংক কর্তৃক বিশেষ সনদ প্রদান করতে হবে।

৫.৩. ব্যাংকের সেরা ১০ (দশ) জন ভালাে ঋণগ্রহিতার ছবিসহ তাদের ব্যবসা সফলতার সংক্ষিপ্ত চিত্র ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করতে হবে। এছাড়াও, দীর্ঘ সময় ধরে ভালাে ঋণগ্রহিতা হিসেবে চিহ্নিত গ্রাহকদের ছবি, প্রােফাইল ইত্যাদির সমন্বয়ে ব্যাংক কর্তৃক বিশেষ বুকলেট/ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে হবে।

৫.৪. অধিকন্তু, ব্যাংকগুলাে বার্ষিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভালাে ঋণগ্রহিতাদের স্বীকৃতি পুরস্কার প্রদানকরতঃ তাদেরকে সম্মাননা জ্ঞাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

৬. ভালাে ঋণগ্রহিতাদের প্রদত্ত রিবেট/প্রণােদনা সংক্রান্ত তথ্য সংযুক্তিক মােতাবেক প্রতি হিসাবর্ষ শেষে পরবর্তী বছরের ৩০ এপ্রিল তারিখের মধ্যে অত্র বিভাগে প্রেরণ করতে হবে।

৭. এ নির্দেশনা ২০১৯ হিসাববর্ষ হতে কার্যকর হবে। এই নীতিমালা জারির ফলে এতদসংক্রান্ত ইতােপূর্বে জারিকৃত সকল নির্দেশনা রহিত করা হলাে।

আপনাদের বিশ্বস্ত,

(এ,কে,এম, আমজাদ হােসেন)
মহাব্যবস্থাপক
ফোন: ৯৫৩০২৫২

• সার্কুলারটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে

সূত্রঃ ব্যাংকিং রেগুলেশন এন্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক
বিআরপিডি সার্কুলার নং-০৪, তারিখঃ ১৬ মে, ২০১৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button