ব্যাংক

ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য সমূহ

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশঃ একটি দেশের আর্থিক ব্যবস্থার মধ্যমনি হিসেবে ব্যাংকের বিভিন্ন রকম কার্যাবলী সম্পাদন করতে হয়। এর ফলে একটি দেশের সকল ক্ষেত্রে তথা ব্যবসায়-বাণিজ্যের জগতে ব্যাংক একটি বিশেষ স্থান অর্জনে সক্ষম হয়ে থাকে। তাছাড়া এর কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে বর্তমান যুগে এর জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়নি বরং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নে ব্যাংকের প্রধান বৈশিষ্ট্য সমূহ তুলে ধরা হলো-

১) Organizational Structure (সাংগঠনিক কাঠামো)
ব্যাংক যেকোন মালিকানার ভিত্তিতে গঠিত হতে পারে। যেমন- একক মালিকানা, অংশীদারি, যৌথ মূলধনী কোম্পানি অথবা সরকারি মালিকানাধীন। অংশীদারি ভিত্তিতে গঠিত হলে এর সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। কোম্পানি হিসেবে গঠিত হলে ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠা অর্জন করতে পারে। তবে সব ক্ষেত্রেই গঠনের পূর্বে অবশ্যই দেশের ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী সরকারের অনুমোদন গ্রহণ করতে হয়।

২) Nature (প্রকৃতি)
ব্যাংক একক বা শাখা ব্যাংকিং যেকোনো ধরনের হতে পারে। একক ব্যাংক হলে একটি মাত্র অফিস দিয়ে একে নির্দিষ্ট এলাকায় ব্যাংকিং কার্য সম্পাদন করতে হয়। দেশে ও বিদেশে শাখা স্থাপনের মাধ্যমে শাখা ব্যাংক ব্যাংকিং কার্যাবলী সম্পাদন করে। এছাড়া ব্যাংক চেইন বা হোল্ডিং ব্যাংক হিসেবে গঠিত হতে পারে।

৩) Number of Members (সদস্য সংখ্যা)
একক মালিকানা হিসেবে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হলে সদস্য বা মালিক একজনই হয়ে থাকে। অংশীদারি ব্যাংকে ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা আইন অনুযায়ী ১০ জনের বেশি হতে পারে না। আর প্রাইভেট কোম্পানির ক্ষেত্রে ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা ২ থেকে ২০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

৪) Ownership (মালিকানা)
সরকারি ও বেসরকারি এবং যৌথ মালিকানায়ও ব্যাংক গঠিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে বর্তমানকালে অধিকাংশ দেশে বেসরকারি মালিকানায় অধিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হতে দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নেই।

৫) Business Goods (কারবারের উপাদান)
ব্যাংক একটি আর্থিক কারবারি প্রতিষ্ঠান। তাই অর্থ ও বিভিন্ন ধরনের হস্তান্তরযোগ্য দলিল যেমন- চেক, হুন্ডি, বিনিময় বিল, শেয়ার সিকিউরিটি ইত্যাদি ব্যাংক এর উপাদান। বিভিন্ন প্রকার সেবা প্রদান করাও ব্যাংকের কারবারি উপাদান বা ব্যবসায়িক পণ্য। Prof. Cairn Cross তাই বলেছেন-
“Bank is a financial intermediary institution which deals in loans and advances”.

৬) Creation of Medium of Exchange (বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি)
ব্যাংক অর্থ বা মুদ্রা প্রচলন না করলেও বিভিন্ন প্রকার চেক, হুন্ডি, পে অর্ডার, ভ্রমণকারীর চেক, এলসি বা প্রত্যয় পত্র ইত্যাদির মাধ্যমে বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে থাকে। ফলে ব্যাংকের গ্রাহকদের নগদ অর্থ বহন করার ঝুঁকি গ্রহণ করতে হয় না।

৭) Encourage to savings (সঞ্চয় উৎসাহ প্রদান)
ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে অধিক সঞ্চয়ে আগ্রহী করার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এতে অধিক আমানত সংগ্রহ নিশ্চিত হয়। এর ফলে দেশে মূলধন গঠন করা সম্ভব হয়।

৮) Investment of Savings (সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ)
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে মানুষের উদ্বৃত্ত অর্থ ও বিক্ষিপ্ত আমানত সংগ্রহ করে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন গঠনে সহায়তা করে। যা পরবর্তীতে লাভজনক ও উন্নয়নশীল খাতে বিনিয়োগ করা হয়। তাই উক্ত খাতগুলো উন্নয়নের ফলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব হয়।

৯) Collection of Deposit (আমানত সংগ্রহ)
ব্যাংকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিভিন্ন ধরনের হিসাবের মাধ্যমে জনগণের সঞ্চিত অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণ করা। জনগণ তাদের সুবিধা অনুযায়ী হিসাব খুলে তাদের সঞ্চিত অর্থ ব্যাংকে জমা দিতে পারে। এই হিসাব গুলো হলো চলতি হিসাব, সঞ্চয়ী হিসাব ও স্থায়ী হিসাব।

১০) Investment and Sanction of Loan (বিনিয়োগ ও ঋণদান)
সংগৃহীত সঞ্চয় হতে ব্যাংক একটি অংশ তারল্য হিসেবে সংরক্ষণ করে। আর অবশিষ্ট অর্থ লাভজনক খাতে বিনিয়োগ এবং স্বল্পমেয়াদি ঋণ দান করে থাকে। সংরক্ষিত তারল্য থেকে ব্যাংক আমানতকারীদের দৈনন্দিন দাবি মিটিয়ে থাকে।

১১) Creation of Loan Deposits (ঋণ আমানত সৃষ্টি)
ব্যাংক শুধু স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রদান করে না অভিনব কায়দায় ঋণ-আমানত সৃষ্টির মাধ্যমে দেশীয় মুদ্রার অধিক ব্যবহার, মুদ্রার গতিশীলতা ও বিনিয়োগ নিশ্চিত করা ব্যাংকের আরো একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

১২) Relation with the Central Bank (কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে সম্পর্ক)
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতিক্রমে ঘটিত হয় বলে একে নিজ স্বার্থে বাধ্যতামূলকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলতে হয়। যে কারণে বিশেষ শর্তাধীনে সাধারণ ব্যাংক তালিকাভুক্ত ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

১৩) Representatives of Customer (গ্রাহকদের প্রতিনিধি)
আধুনিক ব্যাংকসমূহ তার গ্রাহকদের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন প্রকার প্রতিনিধিত্ব হল কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে যেমন গ্রাহকের হয়ে চেক, বিল, বেতন, সুদ বা মুনাফা ইত্যাদি বাবদ অর্থ পরিশোধ করে থাকে এবং বিনিয়োগের সুদ বা মুনাফা, শেয়ার সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি বাবদ পাওনা সংগ্রহসহ আরও বিভিন্ন প্রকার কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে।

১৪) Earning Profit (মুনাফা অর্জন)
ব্যাংক বিভিন্ন প্রকার হিসাবের মাধ্যমে জনগণের সঞ্চিত অর্থ আমানতের মাধ্যমে সংগ্রহ করে থাকে এবং সংগৃহীত অর্থের একটি বিরাট অংশ অধিক সুদ বা মুনাফায় সমাজে যাদের অর্থের প্রয়োজন তাদেরকে ঋণ বা বিনিয়োগ হিসেবে প্রদান করে থাকে। এ উভয় সুদ বা মুনাফার পার্থক্য হলো ব্যাংকের মুনাফা। মুনাফার জন্য ব্যাংক পরিচালিত হয় যা ব্যাংকের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে ব্যাংক প্রতিষ্ঠান বিশ্বে নিজের আসনকে শক্তিশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button