বিকজ উই আর ব্যাংকার
আমি ব্যাংকার। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রকৃত অংশিদার। অর্থ প্রবাহ, পুঁজি গঠন, বিনিয়োগ/ অর্থায়ন, বৈদেশিক বাণিজ্য এবং বৈদেশিক রেমিটেন্স এর সবের পেছনে আমি এবং আমার মতো হাজার হাজার ব্যাংকারের নিরলস অবদান আছে।
আমার পেশায় ঝুঁকি বেশী, পরিশ্রম বেশী এবং বেশী সময় কাজ করতে হয়। আমি পরিবারকে সময় দিতে পারি না। সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যেতে পারি না। পারিবারিক এবং সামাজিক অনেক ইভেন্টে আমার থাকা হয় না। এ নিয়ে নানা সমালোচনা হয়। তবু আমি খুশি। কারণ আমার হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। শিল্প কারখানা স্থাপন, উৎপাদন অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান কোনোটাই আমাকে বাদ দিয়ে নয়।
জাতীয় বাজেটে আমার মত ব্যাংকারের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অবদান ব্যাপক। আমার ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে অর্জিত ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার বড় অংশ হিসেবে ট্যাক্স হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যায়। ব্যাংকিং সেবার বিপরীতে গ্রাহকের নিকট থেকে আদায়কৃত ট্যাক্স এবং ভ্যাটের যে টাকায় রাষ্ট্রীয় কোষাগার স্ফীত হয় সেখানেও আমার সরাসরি অবদান অনেক।
ব্যাংকার গ্রাহকের অর্থের ট্রাস্টি, আমানতদার। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকার আমানতকারির পরিবারের সদস্যদের চাইতেও বিশ্বস্ত। অনেকের যে অর্থের খবর পরিবারের অন্য কেউ জানে না ব্যাংকার সেটা জানে। ব্যাংকার উদ্যোক্তার পরামর্শক এবং পূঁজির সহায়ক। গ্রাহকের হাসিতে ব্যাংকার হাসে আর গ্রাহকের কান্নায় সে কাঁদে। ব্যাংকারের কাছে তার পেশা মহৎ। সে সবসময় আমার গ্রাহকের কল্যাণ কামনা করে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
একজন চিকিৎসক চেম্বারে রোগি বেশী আসলে খুশি। মানুষও একজন ডাক্তারকে তখনই ভালো এবং সফল মনে করেন যখন তার চেম্বারের সামনে রোগির ভীড় লেগেই থাকে। আইনজীবির কাছে মামলা বেশি আসলে খুশি। যে আইনজীবির মামলার ফাইল যত বেশী তিনিই তত বড় মাপের আইনজীবি হিসেবে বিবেচিত। তার মানে এ দু’টি পেশার একটা বড় দিক হলো ডাক্তারের রোগি পাবার জন্য সমাজে রোগি আর আইনজীবির মামলার ফাইল বাড়ানোর জন্য সমাজে ক্রাইম থাকতে হবে এবং বাড়তেই হবে। (কাউকে হেয় করার জন্য নয়, বাস্তবসম্মত কারণে দু’টি পেশার কথা উল্লেখ করতে হয়েছে। বিতর্ক কাম্য নয়।)
অথচ ব্যাংকার সবসময় চায় আমার আমানত কিংবা বিনিয়োগ/ ঋণ গ্রাহক শারিরিকভাবে সুস্থ থাকুক। তার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকুক। কারণ আমানত গ্রাহকের সবদিক থেকে ভালো থাকা মানে ব্যাংকে আরো আমানত পাবার নিশ্চয়তা। বিনিয়োগ/ঋণ গ্রাহক ব্যক্তিগতভাবে এবং তার ব্যবসা ভালো থাকা মানে ব্যাংকের বিনিয়োগ/ ঋণের টাকা বমুনাফা ফেরৎ আসার নিশ্চয়তা।
ব্যাংকার ছুটি কম পায়। ঈদ পার্বণে অন্যরা যখন স্বজনদের কাছে ছুটতে ব্যস্ত তখন আমি ব্যাংকে বসে সেবা দেই সহাস্যবদনে। ঈদের আগে পরের কোনো টানা ছুটির ব্যনিফিশিয়ারি আমি মোটেও নই। এসব নিয়ে মনোকষ্ট থাকলেও কারো প্রতি ক্ষুব্ধ নই। আমি নিজেই নিজেকে ম্যানেজ করি। কারণ আমি এসব বাস্তবতা মেনেই ব্যাংকার।
বর্তমান করোনাসময়ে ডাক্তার, সাংবাদিক এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর মতো আমরাও কর্মক্ষেত্রে আছি। একদিনের জন্যও কর্মক্ষেত্র ছেড়ে পালাইনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আমরা আগের মতোই সেবা দিয়েছি। তবে শুরু থেকে আমরা আমাদের সুরক্ষা দাবি করে আসছিলাম। এটা আমাদের নায্যতা।
দেশে হঠাৎ করোনা পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ায় আমাদের সুরক্ষামূলক প্রস্তুতি ছিল না। এ নিয়ে উদ্বেগ তো আমাদের ছিলই। কারণ আমরা তখনো সুরক্ষাবিহীন গ্রাহকের ফেস টু ফেস এবং শতভাগ অনিরাপদ। এসব গ্রহকদের মাঝে বিদেশফেরতরাও ছিল। নিজের সুরক্ষার স্বার্থে কারো কারো নিজ উদ্যোগে পিপিই সংগ্রহ করে ব্যবহার করা নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। আর বাড়তি খড়গ ছিল যাতায়াতের বিড়ম্বনা। ব্যাংকারমাত্রই এসময়টাতে বিচলিত ছিলেন।
পরিস্থিতির বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে অনতিবিলম্বে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের অভিভাবক বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগী হয়। কর্মদিবস এবং কর্মীদের ডিউটি রোস্টারিং বিন্যাসসহ নানাভাবে দিকনির্দেশনামূলক পরিপত্র দিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে থাকে। এর মাঝে সবচেয়ে বড় খবর হয় করোনাসময়ে ব্যাংকারের দায়িত্ব পালনের বিশেষ ভাতা ও বীমা প্রণোদনার সিদ্ধান্ত। এসব বাস্তবায়নে অনতিবিলম্বে প্রতিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় উদ্যোগী হয়।
ভাতা এবং বীমা প্রণোদনায় ব্যাংকারের জন্য নি:সন্দেহে বাড়তি পাওয়া। তবে ব্যাংকাররা কর্মস্থল ছেড়ে দিয়ে, দাবি কিংবা বিক্ষোভ করে এটা আদায় করেনি। অথচ এটা নিয়ে কিছু অপমানজনক নিজউ বিট করছে একটি জাতীয় দৈনিক। প্রণোদনার লোভে নাকি ব্যাংকাররা ভীড় করছে ব্যাংকে। ইয়ার্কি আর কাকে বলে?
আমার মতে এটা মিডিয়ার স্বভাবসুলভ ট্যান্টবাজি। কম কর্মদিবস, কম কর্মী এবং কম সময়ের ব্যাংকিংয়ের ভীড় সামলাতে যেখানে ব্যাংকারদের হিমশিম অবস্থা তখন সমস্যা সমাধানের কোনো দিকনির্দেশনা না দিয়েই ফালতু রিপোর্টিং। অথচ দু’ দু’বার ভুল টেস্টের শিকার একজন ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু নিয়ে এদের মোটেও তৎপর হতে দেখা যায়নি।
মিডিয়ার প্রতি একটি বিশেষ অনুরোধ রেখে শেষ করতে চাই এই মর্মে যে, পারলে গ্রাহকদের অসচেতনতামূলক আচরণ নিয়ে নিউজ করুন যারা জীবন নয়, সেবা নিয়ে মরিয়া। ডিস্টেনিসং এর রুলে আমার ব্যাংকের ভেতরটা সামলাতে পারলেও গেটের বাইরেরটা পারি না। সেখানে সকলকে নিজের নিরপাত্তা নিজে নিশ্চিত করতে হবে সেটা অন্তত: তাদের বুঝা দরকার। আরো নিউজ করুন ব্যাংকের সামনের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে। যাতে সবাই আগেভাগেই মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারে। আমানত-বিনিয়োগের ছয়-নয় ফ্যাক্টর, এবং করোনার ক্ষত ব্যাংকিং সেক্টরক কতটা ঝুকির মুখে ফেলেছে তার আঁচ তো আমরা করতেই পারছি।
লেখক: মো: মোসলেহ উদ্দিন
কবি, প্রাবন্ধিক ও বিশিষ্ট ব্যাংকার