ব্যাংকিং

হুমকিতে ব্যাংক ব্যবস্থা

ব্যাংকিং খাত মূলত গ্রাহকের আস্থা ও তাদেরে প্রদত্ত পরিষেবার গুণগত মানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, বিকশিত হয়, ফলবান হয়। আস্থায় চিড় ধরলে মানুষ ব্যাংক ব্যবস্থা তথা আর্থিক খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে যে কোনো সবল অর্থনীতিরও বিকাশ, বিশেষ করে সঞ্চয় বিনিয়োগ বা পুঁজি সৃষ্টি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে বাধ্য।

প্রথমত: ব্যাংকের আর্থিক বুনিয়াদ বা ভিত্তির ঝুঁকিপূর্ণ সংস্কার। বাধ্যতামূলক সংরক্ষিত আমানত অবমুক্তকরণের মাধ্যমে ব্যাংকের আর্থিক বুনিয়াদ বা ভিত্তি দূর্বল হতে যাচ্ছে। সাধারণত দুই ভাবে একটি ব্যাংকের মোট আমানতের একটি নিদিষ্ট অংশ সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এক: SLR- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট আমানতের নির্দিষ্ট অংশ জমা রাখার বিধান হলো SLR। এর রয়েছে ভিন্ন দুটি ধরণ:- নগদ জমা (CRR) ও বন্ডে বিনিয়োগ।
দুই: IDR বা LDR- ব্যাংকে নগদ আকারে আমানতের কত অংশ জমা রাখা বাধ্যতামূলক তা নির্ধারিত থাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত IDR দ্বারা। ব্যাংক স্বীয় ইচ্ছায় আমানতের এ অংশ কোন ভাবেই লোন/ বিনিয়োগ করতে পারেনা।

বতর্মান COVID-19 এর প্রণোদনার প্যাকেজ বাস্তবায়নে CRR ৫.৫০% থেকে কমিয়ে ৪.০০% এবং IDR অনুযায়ী মোট আমানতের ৯০% এর পরিবর্তে ৯২% পর্যন্ত বিনিয়োগ বা লোন বিতরণের পূণঃসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ফলে CRR এর ২৭% (১.৫/৫.৫) এবং IDR এর ২০% {(৯২-৯০)/১০০-৯০)} অতিরিক্ত ফান্ড ব্যাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নতুনভাবে ঋণ বা বিনিয়োগ হিসাবে বিতরণ করতে পারবে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

এখানে লক্ষ্যনীয়- ব্যাংকের সক্ষমতা না বাড়িয়ে বরং তার শেষ রক্ষাকবজের সংরক্ষিত ফান্ড যার আকার প্রায় ছাপ্পান্ন হাজার কোটি টাকা নতুন ঋণ বা বিনিয়োগ হিসাবে বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে কোন ব্যাংকের অস্তিত্ব ঝুকির সম্মুখীন হলে রাষ্ট্রের দারস্থ হওয়া ব্যতীত কোন উপায় থাকবে কি?

দ্বিতীয়ত: আমানত হ্রাস। আমানত হ্রাসের বড় তিনটি কারণ।
এক. আমানতের সুদ বা মুনাফার হার ৬% নির্ধারিত হওয়ায় মুদ্রাস্ফীতি এর বেশি হলেই লিকুউডিটি ট্রাপে পরবে ব্যাংক খাত। কেননা তুলনামূলক কম রেটে আমানতকারীদের অনেকেই ব্যাংকে আমানত রাখবে না।
দুই. স্থবীর অর্থনীতির কারণে পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ করতে আমানত উত্তোলনের পরিমাণ বাড়বে।
তিন. অ-আনুষ্ঠানিক ও উপ-আনুষ্ঠানিক আর্থিক খাতে ঋণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবং তাদের সুদ হার বেশ হওয়ায় ব্যাংক আমানত এ দু’ খাতে স্থানান্তরিত হবে।

তৃতীয়ত: খেলাপি ঋণ ও প্রভিশনে উস্ফলন। ব্যবসায়িক মন্দার কারণে ঋণ খেলাপি বাড়তে পারে ফলে প্রচুর পরিমাণ প্রভিশন রাখতে হবে।

চতুর্থত: তারল্য সংকট। অতিরিক্ত ঋণ বা বিনিয়োগ বিতরণের ফলে ব্যাংকের দৈনন্দিন লেনদেনে নগদ অর্থের সংকট দেখা দিতে পারে।

অতএব অর্থনৈতিক মন্দা আসার পূর্বেই ব্যাংকের আর্থিক বুনিয়াদ মজবুত থাকা সমীচীন। আশাকরি বিষয়টি বিবেচনা করবে যথাযথ কর্তৃপক্ষ। ব্যাংক টিকলে, টিকবে অর্থনীতি বাঁচবে দেশ, সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ।

লেখকঃ বি এম আনোয়ার হোসেন
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button