ব্যাংক ক্যারিয়ারব্যাংকার

ব্যাংকিং পেশা দূর হতে যেন স্বপ্নিল এক আবেশ!

গিয়াস উদ্দিন আহমেদঃ অনেক দূর হতে যেন স্বপ্নিল এক আবেশ! গত ক’দশকে ব্যাংক চাকরি প্রত্যাশীদের এক অদ্ভুত আকর্ষণ যেন! এ নিয়ে আমার মজার দুটো অভিজ্ঞতা আছে। ১ম ঘটনা, সেদিন সবে এপয়েন্টেড হয়েছি। সাথে অনেক নতুন জয়েন করতে আসা কলিগ একজন আরেকজনকে বলছে, আচ্ছা ব্যাংকে চাকুরীতে এক্সট্রাওর্ডিন্যারি কি আছে এমন? আরেকজন প্রতি উত্তরে বলল, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আর্মি অফিসার এর পাশাপাশি ব্যাংকারের চাহিদাও দেয় পাত্র চাই বিজ্ঞাপনে!

সবাই হো হো করে উঠলো। ২য় ঘটনা, চাকরীতে জয়েন করার পর একদিন এক ক্যাশ অফিসার কে জিজ্ঞাস করলাম, ক্যাশে কাজ করার বিশেষত্ব কি? উত্তর আচমকাই এলো, ‘…তোর বাপ দাদা কেউ এই জন্মে এত টাকা চোখে দেখেছে? বলার কোন সুযোগ নেই। কারণ, ক্যাশ অফিসাররাই শুধু চোখে নয়; হাতেও টাকা চেখে দেখে।’

ব্যাংক আর ব্যাংকার একই সূত্রে গাথা মালা; হয়তো ব্যাংকারের মর্যাদা আশি/ নব্বইয়ের দশকের মতো দাপুটে নয়; কিছুটা মলিন সে মালা (একান্ত ব্যক্তিগত ধারণা)। ব্যাংকার গ্রুপে মাঝে মাঝে ব্যাংকারদের সুখের ঘটনাগুলোর পাশাপাশি বেদনা, হতাশা, আর অপ্রাপ্তির আক্ষেপ গুলোও চোখে পড়ে।

গত প্রায় দু’যুগ ধরে প্রাইভেট/ বেসরকারি ব্যাংকগুলো ব্যাংকারদের কাছে আকর্ষণীয় ছিলো এর বেতন কাঠামো, কর্ম পরিবেশ, আর চ্যালেঞ্জ এর কারণে। কিন্তু ধীরে ধীরে সে আকর্ষণ কমছে, ব্যাংকারদের প্রকাশিত অনুভুতি তা-ই মনে হয়। এক্ষেত্রে সরকারী ব্যাংকারদের কথা ভিন্ন।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

চাকুরী ক্ষেত্রে দুটো বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ-
১. প্রেষণা ও
২. পেষণা!

প্রেষণা হচ্ছে প্রেরণা। যেটা বেতন, বোনাস, ইনক্রিমেন্ট, পদোন্নতি, ট্রেনিং ইত্যাদির মাধ্যমে কর্মীকে উদ্দিপ্ত করে। আর পেষণা হচ্ছে, কর্মীকে কাজে মনোযোগী করতে, হালকা বকা, ট্রেনিং থেকে শুরু করে চাকুরীচ্যুতি পর্যন্ত।

কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকারদের অনুভুতিগুলো পর্যালোচনা করলে প্রেষণা বিষয়ে খুব কমই তথ্য মেলে! যদিও গত ক’দিনে দেখলাম অনেক বেসরকারি ব্যাংকই প্রমোশন ছেড়েছে।

একটি প্রমোশন কর্মীকে যতটা উদ্দিপ্ত করে আর কোন কিছুই হয়তো এতটা উদ্দিপ্ত করে না। কিছু ব্যাংক এমন যে ইনক্রিমেন্ট দেয় সমভাবে, আবার কেউ পার্সেন্টেজ ধরে; চিঠিতে খুব সুন্দর করে লেখা থাকে “পারফর্মেন্স এর ভিত্তিতে” যদিও “পার্রফর্ম” বিষয়টাই বিতর্কিত, প্রশ্নাতীত নয়, বরং প্রশ্নবিদ্ধ হয় নানা কারণেই।

আরও দেখুন:
ব্যাংকাররাই ব্যাংকারদের ক্ষতি করছে
ব্যাংকারদের লেন‌দেন সময় ও টা‌র্গেট ক‌মা‌নো উচিত
ব্যাংকার হতে চান? আরেকবার ভাবুন
একজন ব্যাংকারের যে সকল গুণাবলী থাকা জরুরী
ব্যাংকারদের দেরিতে অফিস ত্যাগ সিস্টেম নাকি অদক্ষতা

ইদানিং প্রমোশন যেন সোনার হরিণই নয় মরীচিকা! অনেক ব্যাংকই কর্মীদের দীর্ঘদিন প্রমোশন বঞ্চিত রাখেন। এটা কেমন “ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত” আমার ধারণা নেই! তবে বোধ করি অনেক ম্যানেজমেন্ট মনে করেন এতে কৃচ্ছসাধন হয়, সাশ্রয় হয়! কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ধারণা প্রমোশন পেলে কর্মী উদ্যমী হয়ে ওঠে, আত্নবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। বেশির ভাগ ব্যাংকই কর্মীদের পেছনে খরচ করেন অথচ সঠিক আউটপুট পান না, এ কারণেই! কর্মীকে ট্রেনিং করালেন, দিক নির্দ্দেশনা দিলেন, সব করলেন কিন্তু তাকে ঝুলিয়ে রাখলেন সেই কর্মী কি করে শতভাগ দেবে, যেখানে তার আত্নবিশ্বাসেই চিড় ধরে!

আর একটা বিষয় হচ্ছে, দাপুটে বাঘের যামানা শেষ হয়ে বিড়ালের যামানা শুরু হয়েছে! সামগ্রিক বিভিন্ন কারণেই ব্যাংকার এর জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, খারাপ লোন। ইদানিং অনেকেই মনে করেন ব্যাংকের টাকা না দিলেও চলে! যে ক্লায়েন্টকে এক সময়ে ভালো মনে করা হয় সে ক্লায়েন্ট-ই যখন ব্যাংকের টাকা ঘোরাতে থাকেন তখন সত্যিই অসহ্য হয়ে ওঠে! তবে অনেক ব্যাংক-ই সাপের মুখেও চুমু খেতে বলে আবার ব্যাং এর মুখেও চুমু খেতে বলে; সত্যি কি বিচিত্র!

পরিশেষে, সব চাকুরীতেই ভালো, মন্দ, আছে, সবকিছুর পরেও ব্যাংকারের সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে, সামাজিক মর্যাদা কম নয়; বরং সন্মানের, শ্রদ্ধার। কোথায় যেন শুনেছিলাম কোর্টে নাকি অন্যান্যের মতো টিচারদেরও শপথ করতে হয় সত্য বলার, কিন্তু ব্যাংকারদের শপথ লাগে না!

নোট: বিতর্কের জন্য এ লিখা নয়! একান্ত ব্যক্তিগত ধারণা শেয়ার করার উদ্যেশ্যে লিখা; সবার জন্য শুভ কামনা।

লেখকঃ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, ব্যাংকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button