ব্যাংকিং

ব্যাংকিং ল এ্যান্ড প্রাকটিসঃ কেইস স্টাডি-২

ব্যাংকিং ল এ্যান্ড প্রাকটিস-কেইস স্টাডি-২: কোনো একটি হিসাবে দুই লাখ টাকার একটি A/C Payee চেক জমা হলো একই শাখার একটি current account এর। যথারীতি পরিশোধ হওয়ার এক সপ্তাহ পরে উল্লেখিত current account holder একই সিরিয়ালের একটি চেক পরিশোধের জন্য উপস্থাপন করলে, প্রয়োজনীয় ব্যালান্স নেই বলে ব্যাংক চেকটা ফেরত দিল। গ্রাহকের অভিযোগের প্রক্ষিতে তদন্তে দেখা গেল একই সিরিয়াল ও ক্রমিক নম্বরের আরেকটি চেকের মাধ্যমে দুই লক্ষ টাকা অন্য একটি হিসাবে এক সপ্তাহ আগে স্থানান্তর হয়েছে। উল্লেখিত গ্রাহককে খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল, তিনি যে ঠিকানায় থাকতেন এখন আর সেখানে থাকেন না। কেউ তার বর্তমান ঠিকানা দিতে পারলো না। এক্ষেত্রে ব্যাংকার, গ্রাহক এবং পরিচয়দানকারী কে দায়ভার বহন করবেন? কি বলেন ব্যাংকার বন্ধুরা?

সমাধান: চেকের মাধ্যমে একটি জালিয়াতির বিষয়ে দায়িত্ব (Responsibility) নিয়ে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম। অনেকেই উৎসাহের সাথে নিজেদের মতামত দিয়েছেন। আমার ভাল লেগেছে যে, কর্মরত অনুজপ্রতিম ব্যাংকার বন্ধুগণ জালিয়াতি প্রতিরোধে যথেষ্ট সতর্ক আছেন এবং এ বিষয়ে সর্বশেষ নিয়ম কানুন তথা প্রাকটিস সম্পর্কে অবহিত আছেন। সকলকে অনেক ধন্যবাদ!

আসলে আমি যে কেইসটা উল্লেখ করেছি তা বেশ আগের। এখন technology ব্যাংকিংয়ের অনেক বড় স্থান দখল করেছে এবং ব্যাংকিংকে অনেকটা গতিশীল ও নিরাপদ করে দিয়েছে। তার পরও জালিয়াত চক্র থাকবে, তারাও technology ব্যবহারের মাধ্যমেই তাদের অপচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। ব্যাংকার হিসেবে আমাদেরকে মৌলিক আইন সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে এবং দৈনন্দিন ব্যাংকিংয়ে তা যথাযথ ভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কিছু কিছু ব্যবস্থা জালিয়াতি রোধে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরেও সেগুলো গ্রাহকের মৌলিক অধিকারকে বাতিল করতে পারে না। যেমন কেউ কেউ SMS এর কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু প্রকৃত পক্ষেই আমরা protection পেতে পারিনা এ কথা বলে যে, আপনাকে তো SMS দেয়া হয়েছে, তো আপনি আগে কেন জানান নি? এখন আপনি টাকা পাবেন না। মৌলিক আইন এবং উচ্চ আদালত এটি গ্রহন করবে না। এটি ব্যক্তির সাংবিধানিক অধিকারের অংশ।

তেমনি positive পে ইনসট্রাকশনের কথা বলা যায়। এটি কেউ না দিলে আপনি তার চেক ফেরত দিতে পারেন না। আমরা অবশ্যই চেষ্টা করবো এমন ইনসট্রাকশন নিতে, অথবা কাষ্টমারকে যোগাযোগ করতে। কিন্তু এ ধরনের বিষয়গুলো অনেকটাই অতিরিক্ত সতর্কতা। আপনি positive pay instruction এর অভাবে কারোর চেক ফেরত দিলেন। তিনি যদি ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেন যে, তার হিসাবে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স থাকা এবং ব্যাংক কর্তৃক সরবরাহকৃত চেক যথানিয়মে উপস্থাপন করা স্বত্তেও টাকা না পেয়ে তার দশ কোটি টাকার সম্মানহানি হয়েছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

আদালত কিন্তু আপনার positive instruction আমলে নিবে না। আমাদের দেশে গ্রাহক সাধারণত আদালতে কম যায়। কিন্তু যারা গিয়েছেন তারা কিন্তু ব্যাংকের বিরুদ্ধে রায় পেয়েছেন। উন্নত দেশে এ ধরনের মামলা হামেশাই হচ্ছে এবং আদালত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যক্তির মৌলিক অধিকারকেই উচ্চকিত করেছেন। আবার যেখানে মিথ্যা কিম্বা ধোঁকা পেয়েছেন সেখানে ব্যাংকের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। আপনাকে দেখতে হবে আপনি পরিশোধের ক্ষেত্রে payment in due course পরিপালন নিশ্চিত করতে পেরেছেন কি না। এটি পারলে, ব্যাংকার নিজে নিরাপদ থাকবেন।

আলোচ্য কেইসটিতে আমরা ইনট্রোডিউসারের উপর কোনো দায়ভার চাপাতে পারি না। কেননা, গ্রাহক ঐ ঠিকানায় এখন থাকে না; কিন্তু হিসাব খোলার সময় সে সেখানে ছিল। বুঝাই যাচ্ছে সে জালিয়াতি করে গা ঢাকা দিয়েছে। এখানে পরিচয়দানকারীর কিছুই করার নেই। চেকটা জাল এতে সন্দেহ নেই। যেহেতু গ্রাহকের নিজের কাছে ব্যাংক কর্তৃক ইস্যাু করা একই নম্বরের মূল চেকটা আছে। এখন ব্যাংকারের পক্ষে একটি জাল চেক সনাক্ত করা খুবই কঠিন। যদি সেটি ছাপাখানার যোগসাজস থাকে অথবা অন্য একটি চেকের সিরিয়াল নম্বর সুক্ষ্মভাবে পরিবর্তন করে দিয়ে থাকে।

ব্যাংকারকে দেখতে হবে, চেকের নিরাপত্তা ইস্যুগুলো ঠিক আছে কিনা, স্বাক্ষর মিলে কিনা, যেটাকে নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনের ভাষায় ‘এ্যাপারেন্ট টেনর’ বলা হয়েছে, সেটি নিশ্চিত করা। যদি এটি ঠিক থাকে, মূল গ্রাহককে টাকা দিতে হবে ব্যাংকের পক্ষ থেকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অফিসারকে দায়ী করার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে আমরা হয়তো তাকে একটা লোক দেখানো শো কজ বা ওয়ার্নিং দিয়ে থাকি যাতে করে অন্যরা সতর্ক থাকে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আসলেই আইনগত কোনো ব্যবস্থা তথা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায় না বা কোনো কর্তৃপক্ষই তা করেন না। হ্যাঁ, যেখানে কোনো যোগসাজস, প্রকৃতই দায়িত্বে অবহেলা, নিয়ম কানুন উপেক্ষা করা ইত্যাদি পাওয়া যাবে সেখানে ব্যবস্থা নেয়া হবেই।

আমাদের আলোচ্য কেইসটা নিষ্পত্তি হয়েছিল, গ্রাহককে তার মূল চেকের টাকা পরিশোধ করার মাধ্যমে। সংশ্লিষ্ট অফিসারকে সতর্ক করা হয়েছিল, যদিও তার কিছু দোষ ছিল না। জালিয়াত গ্রাহকের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল শাখাকে। নিবন্ধটি আপনি পড়ছেন ব্যাংকিং নিউজ বিডি ডটকম-এ। এখানে উল্লেখ্য, তখন গ্রাহকের সঙ্গে এত দ্রুত যোগাযোগ করার মাধ্যম ছিল না।

এখন আপনারা অতিরিক্ত measure গুলো নিবেন হেড অফিসের নির্দেশ মাফিক। তবে পেমেন্ট ইন ডিউ কোর্স কথাটি ভালভাবে মনে রাখবেন ও নিশ্চিত করবেন। তাহলে কমপক্ষে আপনি নিরাপদ। আর এসব অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেয়ার পরও যদি পেমেন্ট ইন ডিউ কোর্স এর কোনো শর্ত অনুপস্থিত থাকে, আপনাকেই দায়ী করা হবে। ধন্যবাদ সবাইকে। এরপরও যদি কারোর কাছে কোনো তথ্য বা আইন জানা থাকে, জানিয়ে দিবেন। কেননা আমার জানাই সবটুকুন না।

লেখকঃ নূরুল ইসলাম খলিফা, সাবেক ডিএমডি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও সাবেক প্রিন্সিপাল, ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, আলআরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button