ব্যাংক গ্রাহক

নতুন গ্রাহকের ব্যাংকিং ভাবনা

রিয়াজ উদ্দিনঃ ব্যাংক আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। টাকা জমা, উত্তোলন, বিল পরিশোধ, ব্যবসায়িক কাজ, পেনশন, সঞ্চয়, বিদেশে পড়াশোনা, বিনিয়োগ গ্রহণ করাসহ যেকোন কাজের জন্য ব্যাংকে যেতে হয়। সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে ব্যাংকিং সেবা এখন অনেক উন্নত হয়েছে। বছরের শুরুর দিকে একটি সুন্দর পরিকল্পনা গ্রহণ করলে তা ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ ও সময় বাঁচাতে সহায়ক হবে।

ব্যাংকারের পরামর্শ গ্রহণ করুন:
আপনার প্রয়োজনগুলো নিয়ে ব্যাংকারের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। আপনার সামর্থ্য ও প্রয়োজনকে সামনে রেখে ব্যাংকার আপনার ব্যাংকিং পরিকল্পনায় সহযোগিতা করতে পারবেন। শিল্পোদ্যোক্তা, চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, গৃহিণী ও শিক্ষার্থীসহ প্রতিটি শ্রেণী ও পেশার মানুষের জন্য ব্যাংকগুলোতে আমানত, বিনিয়োগ ও বৈদেশিক বাণিজ্যসহ নানাবিধ সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সেবার বিল ও ফি জমা দেয়ার ব্যবস্থা।

বছরের শুরুতেই ব্যাংক হিসাব খুলুন:
আয়ের পুরোটা ব্যয় না করে সারা বছরের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে সঞ্চয়ের টার্গেট নির্ধাণ করে সে অনুযায়ী প্রতিদিন, সপ্তাহে ও মাসে জমা করুন। বছরের শুরুর দিকে হিসাব খুলতে পারলেই ভাল। তবে সারা বছরই এসব হিসাব খোলা যায়। ভবিষ্যৎ প্রয়োজন পূরণের জন্য পেনশন হিসাব খুলতে পারেন। মাসিক মুনাফাভিত্তিক জমা, মেয়াদী জমা, হজ, মোহর, ওয়াকফ এসব হিসাব খুলেও মুনাফা পেতে পারেন।

আরও দেখুন:
সঞ্চয়ী হিসাব খোলার নিয়ম

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

অধিক মুনাফার লোভ পরিহার করুন:
ব্যাংক বহির্ভূত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের নিকট থেকে সঞ্চয় গ্রহণ করে। একটা সময়ে এসব প্রতিষ্ঠান লাপাত্তা হয়ে যায়। তাই আপনার কষ্টার্জিত অর্থ নিরাপদ রাখতে ব্যাংকে মেয়াদী হিসাবে জমা রাখুন। শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব খোলার ব্যবস্থা রয়েছে। পড়ালেখা ও ভবিষ্যৎ প্রয়োজন পূরণে তারা বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্ত উপহারের অর্থ ব্যাংকে জমা রাখতে পারে। এতে তাদের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে উঠবে। বিদেশে পড়ালেখা করতে গেলে দেশের কোন ব্যাংকে স্টুডেন্ট ফাইল খুলে যাওয়া উত্তম। এতে পড়ালেখার সংশ্লিষ্ট খরচের টাকা পাঠানো সহজ হবে।

ব্যয়ের ক্ষেত্রে:
আয়-ব্যয়ের একটি পরিকল্পনা করে নিন। জরুরী প্রয়োজন, চাহিদা এবং বিলাসিতার বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করে পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। ব্যাংক হিসাবে গচ্ছিত সব টাকা একসাথে খরচ না করে কিছু টাকা রেখে দিন জরুরী প্রয়োজন পূরণের জন্য।

তথ্য প্রযুক্তি সেবা নিন:
ঘরে বসেই ব্যাংকিং সেবা পেতে এটিএম কার্ড, অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, অ্যাপ ভিত্তিক ব্যাংকিং এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা গ্রহণে অভ্যস্ত হোন। বিভিন্ন বিল পরিশোধ করতে তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করুন; তা সময়, শ্রম ও খরচ সাশ্রয়ী হবে।

পাসওয়ার্ড ও পিন শেয়ার করবেন না:
আপনার অর্থ নিরাপদ রাখতে সতর্ক থাকুন। ডিজিটাল ব্যাংকিং কার্যক্রমের ক্ষেত্রে কারো সাথে পাসওয়ার্ড বা পিন শেয়ার করবেন না। ব্যাংক কখনো গ্রাহকের পাসওয়ার্ড বা পিন নম্বর জানতে চাইবে না। তাই কেউ ফোন করে পাসওয়ার্ড চাইলে তা সতর্কতার সাথে এড়িয়ে চলুন।

তাড়াহুড়ো পরিহার করুন:
ব্যাংকে গিয়ে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করবেন না। এতে ভুলত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই সেবা গ্রহণ করুন।

ব্যাংকের মাধ্যমেই রেমিট্যান্স সেবা গ্রহণ করুন:
প্রবাসী স্বজন থেকে রেমিট্যান্স গ্রহণে অবশ্যই ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করুন। এতে আপনার কষ্টার্জিত টাকা দ্রুত ও নিরাপদে পেয়ে যাবেন।

ক্রেডিট কার্ড নির্ভরতা কমান:
ক্রেডিট কার্ড আমাদের অনেক সময় প্রয়োজন হয়। তবে ক্রেডিট কার্ডের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা আপনার আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। তাই ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত ভাবে করার চেষ্টা করুন। অধিক সংখ্যক ক্রেডিট কার্ড একসাথে ব্যবহার না করাই উত্তম।

উচ্চ মুনাফার বিনিয়োগ এড়িয়ে চলুন:
বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান উচ্চ মুনাফায় বিনিয়োগ প্রদান করে। যেসকল বিনিয়োগ প্রোডাক্টে অধিক মুনাফা দিতে হবে সে ধরণের বিনিয়োগ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। আপনার কষ্টার্জিত অর্থ অনেকটাই বেঁচে যাবে।

সামর্থ্য অনুযায়ী বিনিয়োগ গ্রহণ করুন:
ব্যক্তি, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা বড় উদ্যোক্তা প্রত্যেকেরই ঋণ বা বিনিয়োগ পরিশোধের সামর্থ্য অনুযায়ী বিনিয়োগ গ্রহণ করা উত্তম। আপনার মাসিক কিস্তি যদি আপনার আয়ের চেয়ে বেশি হয় তাহলে আপনি কিস্তি পরিশোধ করতে হিমশিম খাবেন। তাই আয়ের সাথে মিল রেখে বিনিয়োগ গ্রহণ করুন।

খেলাপী ঋণ থাকলে পরিশোধ করার পরিকল্পনা করুন:
খেলাপী ঋণ ব্যাংক খাত এবং জাতীয় অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা এর কারণে নষ্ট হয়ে যায়। সমাজে ঋণখেলাপীদের ঘৃণার চোখে দেখা হয়। তাই আপনার গৃহীত বিনিয়োগ যেন খেলাপী না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। হাদীসে বলা হয়েছে ‘শহীদদের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে কিন্তু তাদের ঋণের গুণাহ ক্ষমা করা হবে না’। তাই প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যেই ঋণ পরিশোধ করুন। খেলাপী হয়ে গেলে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে দ্রুত এ বছরের নির্দিষ্ট সময় টার্গেট করে তা পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থা করুন।

অতিরিক্ত তারল্য থাকলে শ্রমঘণ শিল্পে বিনিয়োগ করুন:
ব্যাংকে যাদের অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে তারা শ্রমঘণ শিল্পে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করতে পারেন। এতে অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ব্যাংকে নতুন হিসাব খুলতে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা পাসপোর্টের কপি, দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, নমিনির এক কপি ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্র এবং ইউটিলিটি বিলের কপি নিয়ে নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করুন।

লেখকঃ শেখ মোঃ রিয়াজ উদ্দিন: ব্যাংকার, কলামিস্ট ও ফ্রিল্যান্স লেখক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button