ব্যাংকার

ব্যাংকারদের সামাজিক জীবন

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশঃ ব্যাংকারদের সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের কৌতুক প্রায় সবাই বলে থাকে, মধ্যরাতে রাস্তায় কাদের দেখা যায়, সন্তানেরা কত বড় হয়েছে? আসলেই বিষয়টা কি আদৌ কৌতুক প্রদ? তথ্য প্রযুক্তির এই চরম উৎকর্ষের দিনে আসলেই কি ব্যাংকারদের কোনো পরিবর্তন এসেছে! এটা নিয়ে ভাবিবার সময় এসেছে।

• আমরা বাহ্যিক দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পাই, বর্তমান প্রজন্মের ব্যাংকাররা বিশাল লেজার বই, টোকেন বা স্ক্রল, কম্পিউটার বিহীন হিসাব এসব কোনো কিছুর সঙ্গে পরিচিত নন। নতুন প্রযুক্তি আসার আগে ব্যাংকের লেজারে ব্যালেন্সিং না মিললে ব্যাংকারদের বহু সন্ধ্যা… রাত অবধি গড়িয়ে গেছে ভূল খুঁজে বের করার জন্য। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর জুন এবং ডিসেম্বর মাসের ৩০ তারিখ ছিল অতি ভয়ংকর দিন। কিন্তু এখন মাসের শেষ দিন আর প্রথম দিনের মধ্যে কোনো পার্থক্য টের পান না ব্যাংকাররা। অথচ তথ্য প্রযুক্তির পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার পরও ব্যাংকারদের জীবনযাত্রার তেমন পরিবর্তন এসেছে বলে প্রতীয়মান হয় না।

• প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বাত্মক হওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যাংকারদের দায়িত্ব। এক সময় ব্যাংকের মূল দায়িত্ব ছিল আমানত গ্রহণ ও ঋণ দেওয়া, দিনে দিনে বেড়েছে সেবার পরিধি তার সঙ্গে বেড়েছে দায়িত্ব এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারী। ব্যাংকিং নিয়মচারকে কঠোর শৃঙ্খলায় বেঁধে মুলধন ভিত্তি শক্ত করার জন্য ব্যাসেল ১, ২ ও ৩। আবার এর মধ্যে ২০০৩ সালে চালু হওয়া মানি লন্ডারিং আইন, KYC, CTR, এবং STR বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপের ফলে ব্যাংকারদের দায়িত্ব কেবল ব্যাংকের উপর থাকে না, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তার উপরও বর্তায়। তাইতো কোরবানির গরুর হাটে জাল নোট শনাক্তকরণ যন্র বসানো থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষন নিশ্চিত করা, ঈদের ছুটির মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা থেকে কর ও শুল্ক ফাঁকি, কালো টাকা এবং জঙ্গি অর্থায়নের উৎস খোঁজা- সবই ব্যাংকারদের দেখতে হয়। ফলে….

• ব্যাংকারদের বহুমুখী কর্ম পরিধি, ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টা এবং কঠোর নিয়মচার পরিপালনের চাঁপাকলে তাদের সাময়িক ক্ষতিই করে না, দীর্ঘমেয়াদে জন্ম দেয় বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত, মানুষিক ও সামাজিক জটিলতার। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্টানের সমন্বয়ে গঠিত “সিটি মেন্টাল হেলথ অ্যালায়েন্স” নামের একটা সংগঠন এক জরিপে দেখিয়েছে প্রতি ৬ জনের মধ্যে একজন ১ জন উদ্বেক এবং ডিপ্রেশনের শিকার। ব্যাংকারদের এই মানুষিক চাপ সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে ব্যাংকগুলো এখন উদ্বিগ্ন। জরিপে দেখা গেছে, আর্থিক সমস্যা বা উদ্বেগ, গুরুদ্বায়িত্বের চাপ এবং ভবিষ্যতের ভাবনা পরিবার ও কর্মক্ষেত্রের দক্ষতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

• গবেষণায় কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য তিনটি সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে: অনুপভোগ্য চাকুরী, কর্মক্ষেত্র ও পরিবার বা ব্যক্তিগত জীবনের উপর বিরুপ প্রভাবের দুশ্চিন্তা এবং চাকুরী ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা, প্রতিষ্টানটির সংগৃহীত উপাত্ত থেকে জানা যায়, ৬০ শতাংশ ব্যাংকার অনিয়মিত নিদ্রারোগে ভোগেন, ৪৭ শতাংশ থাকেন ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় আর ৪০ শতাংশ অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।

• অদূরদর্শিতার কারনে আমরা খুব দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে পারিনা। কর্মজীবী জনগোষ্ঠীর মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মানব সম্পদ উন্নয়নে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ এটা ভাবতে হবে। কর্ম সময়ের বাহিরে এই সময়টুকু কেবল চাকুরীজীবীদের সন্তানদের দেখাশুনা করা কিংবা পরিবারের সদস্যদের আরো বেশী সময় দেওয়ার প্রয়োজনই না, তারা নিজেরা ও যাতে বাড়তি জ্ঞানার্জনের কিছুটা সময় দিতে পারেন কিংবা যুক্ত হতে পারেন সামাজিক বা বিনোদনমুলক কাজে।

• ব্যাংকারদের বছরে একবার ব্যধতামুলক দীর্ঘ ছুটিতে যাওয়ার বিধানটাও এ জন্যই জারি করা হয়েছে যাতে তারা কিছুদিন সব মানসিক চাপমুক্ত থেকে অবসর যাপন করতে পারেন। কিন্তু কোন কোন ব্যাংকে এই ছুটি ভোগ করার সুযোগ দেয়া হয়না।

সৌজন্যে- মাসুদ ইকবাল রানা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button