ব্যাংকার

ব্যাংকারের অ‌ফিস যাত্রা

আমজাদ সাহেব থাকেন মিরপুর। তাকে যেতে হবে মতিঝিল। সেখানেই তার ব্যাংক। তিনি সকাল সকাল বাসা থেকে বের হলেন। রাস্তায় রিকশা খুবই কম। কেউ মতিঝিল যেতে চাচ্ছে না। তিনি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। শেষে তিনগুণ বেশি ভাড়ায় একটা রিকসা পেলেন।

রাস্তায় রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল দিচ্ছে। লোকজনকে ঘরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। বিজয় সরণির কাছাকাছি আসতেই তার রিক্সা আটকানো হলো। একজন পুলিশ কঠোর মুখে এগিয়ে এলো। বাজখাঁই গলায় বলল, রাস্তায় বের হয়েছেন কেন? জানেন না ঘরে থাকতে বলা হয়েছে?

জানি। কিন্তু আমি ব্যাংকে অফিস করতে যাচ্ছি। ব্যাংক খোলা। এই যে আমার আইডি কার্ড দেখুন!
ব্যাংক বন্ধ রাখেন। জানেন না করোনা ভাইরাস।
ভাই ব্যাংক তো আমার কথায় বন্ধ হবে না। আপনারা সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংককে বলুন।
পুলিশ কঠোর গলায় বলল, রিকশা চলাচল বন্ধ। আপনি অফিস করতে চাইলে হেঁটে যান।
এ সময় আরেকজন পুলিশ মারমুখী ভঙ্গিতে এগিয়ে এলো। সে কোনো কথাবার্তা না বলেই রিকশার হাওয়া ছেড়ে দিল এবং লাঠি উঁচিয়ে রিক্সাওয়ালার দিকে তেড়ে এলো। রিক্সাওয়ালা ভাই… ভাই… করতে করতে রিকসা নিয়ে দৌড় দিল।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

আমজাদ সাহেব কি আর করবেন। অগ্যতা হেঁটেই রওনা দিলেন। তার বয়স হয়েছে। গত বছর আটচ‌ল্লিশ পার করেছেন। এই বয়সে এতোটা পথ হাঁটাও কষ্ট! তিনি ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করলেন। রোদ তাঁতিয়ে উঠেছে। চৈত্রের ঠাডা ভাঙ্গা রোদ। এক ঘন্টা পর তৃষ্ণায় তার গলা শুকিয়ে এলো। প্রধান সড়কের আশেপাশে একটা দোকানও খোলা নাই যে এক বোতল পানি কিনে খাবেন।

এ সময় অফিস থেকে ফোন এলো। ম্যানেজার সা‌হেব ফোন করেছেন।
আমজাদ সাহেব আপনি কোথায়?
স্যার আমি রাস্তায়। আসতে একটু দেরি হবে। হেঁটে আসতে হচ্ছে।
এখন কোথায় আছেন?
শাহবাগের মোড়ে।
বাসা থেকে আরও একটু আগে বের হ‌বেন না? জা‌নেনই তো রাস্তাঘাটা‌টের এই অবস্থা! আচ্ছা আসুন। ম্যা‌নেজার ফোন কেটে দি‌লেন। আমজাদ সাহেবের মেজাজ চিড়বিড় করছে। ম‌নে ম‌নে একটা কুৎ‌সিত গা‌লি দি‌লেন। শালা তোকে তো আর হেঁটে আসতে হয় না। তুই তো আসিস গাড়িতে! গাড়িওয়ালাদের ‌তো আর ধরে না।

মোড়ের গলিতে একটা মুদির দোকান খোলা। তিনি দাঁড়ালেন। এক বোতল মিনারেল ওয়াটার কিনলেন। এক চুমুকে পুরো বোতলটা শেষ করে তিনি আবার হাঁটতে শুরু করলেন। প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। ঘামে ভিজে পু‌রো শার্ট জবজবা। এই অবস্থায় অফিসে গিয়ে কি সার্ভিস দেবেন? মা‌স্কের ভেত‌রে গরম নিশ্বাস। মনে হচ্ছে চোখে অন্ধকার দেখছেন। বিশুদ্ধ বাতাস নেয়ার জন্য মাঝে মাঝে মাস্ক খুু‌লছেন। বিশুদ্ধ বাতাস নাকি ক‌রোনাযুক্ত বাতাস ‌নি‌চ্ছেন-‌কে জানে? কেউ কেউ বলে-এই ভাইরাস বাতাসে ভাসে না। কেউ কেউ বলে ভা‌সে। কোনটা ঠিক কে জানে? মুখে হাত লাগানো যাবে না। অথচ মাস্ক এবং হ্যান্ডগ্লাভস পরলে নাকে মুখে চুলকানি বেড়ে যায়।

তিনি এসব ভাবতে ভাবতে মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় চলে এলেন। ব্যস্ত মতিঝিল কি এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ঝিমুচ্ছে!
তিনি ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে অফিসে ঢুকলেন। WHO এর স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করে তার ডে‌স্কে এ‌সে বসলেন। বসতে না বসতেই একজন কাস্টমার এগিয়ে এলো। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স মে‌নে চলার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকারকে দেখলে তারা এত কাছে চলে আসে যেন তারা করোনাভাইরাস মুক্ত!

ভাই ভালো আছেন?
জ্বী ভালো। আপনি কেমন আছেন?
এই রাখছে আল্লায়। সরকার ‌তো ব্যবসাপাতি সব বন্ধ কইরা দিছে। আপনা‌গো তো চিন্তা নাই। মাস শেষে বেতন।
আমজাদ সাহেব গম্ভীর মুখে কাজ করতে লাগলেন। এসব কথার জবাব দিলে কথা বাড়‌তেই থাকে। সেটাও এক বিপদ। মুখ থেকে বেশি ড্রপলেট বের হবার সম্ভাবনা।

আজ কটা পর্যন্ত ব্যাংকিং?
বারোটা। আপনি টাকা উঠাবেন, না জমা দেবেন?
আমার একাউ‌ন্টে কত টাকা আছে?
আমজাদ সাহেব ব্যালেন্স জানিয়ে বললেন, আপনি শুধু ব্যালেন্স জানতে এসেছেন?
না। স্কুল ব্যাংকে কিছু টাকা জমা দেব।

সে তার কারেন্ট একাউন্ট থেকে এক হাজার টাকার একটা চেক কেটে তার ছেলের স্কুল ব্যাংকে জমা দিলো! এরই মধ্যে সে মাস্ক টে‌নে থুতনির নিচে ঝুলিয়ে রেখেছে।
আমজাদ সাহেব বললেন, মাস্ক খুলছেন কেন? মাস্ক পড়ুন।
আরে মাস্ক! আল্লাহর যেদিন হুকুম হইবো তার এক মিনিট আগে বা পরেও আমার মৃত্যু হইব না। কথা ঠিক কি-না ব‌লেন?

আমজাদ সাহেব এবারও কো‌নো জবাব দিলেন না। জবাব দিতে গেলে সে তার বিশ্বাস নিয়ে এমনভাবে ‌ঠে‌সে ধরবে! তাতে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা আরও বাড়বে।

মনে ম‌নে বললেন, হে মালিক, আপ‌নি যা বল‌বেন আপনার কথাই ঠিক! আমরা প্রজা, আমাদের কথার কোনো দাম আছে? দাম থাক‌লে আমা‌দের চাওয়াগু‌লো নীরবে নিভৃতে গুমড়ে গুমড়ে কাঁদ‌তো না!!

কার্টেসিঃ এ.এস. রিপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button