ব্যাংকার

ব্যাংকারের চাকুরী ও জীবন যাপন

মুরাদ হোসেন (ছদ্মনাম)। পেশায় একজন ব্যাংকার। বাংলাদেশের প্রথম শ্রেনীর একটি ব্যাংকে এ ভি পি হিসাবে চাকুরী করেন। ছদ্মনামের এই ব্যক্তি ২০১৬ সাল থেকে মোহাম্মদপুর বছিলা হাউজিং-এর একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। ১৮০০ স্কয়ার ফিটের এই ফ্ল্যাট তিনি ২০১৬ সালে ভাড়া নিয়েছিলাম ১৭,৫০০ টাকায়। এখন গত মাস পর্যন্ত উনি ভাড়া দিতেছিলেন ১৮,০০০ টাকা।

ফ্ল্যাট ওনারের সাথে এ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী মার্চ/২০১৯-এ ভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়ে বাসা ভাড়া এ মাস থেকে হওয়ার কথা ১৮,৫০০ টাকা। ভদ্রলোক বাসা ভাড়া আর বাড়িয়ে নিতে চান না। কেন তিনি বাসা ভাড়া বাড়াতে চান না। পূর্ব পরিচয়ে তিনি আমার এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে গল্প করছিলেন কারওয়ান বাজারের একটি রেষ্টুরেন্টে আর আমি শুনতেছিলাম। তিনি এখন কি করবেন এই গল্প শোনাতে এসেছিলেন কারওয়ান বাজারে।

১৯৯৬ সালে এই ভদ্রলোক এসএসসি পাশ করার পর ২০০১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় সম্মান থেকে পাশ করেন। পরে তিনি সাউথইষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন। ভদ্রলোক দুই ছেলের জনক। বড় ছেলে থ্রিতে ইংলিশ মিডিয়ামে (তার স্ত্রীর কথা অনুযায়ী) ছোট ছেলেকে প্লে-তে দিয়েছেন একটা কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে। ব্যাংকের চাকুরী করার কারনে পজিশন অনুযায়ী তিনি ব্যাংক থেকে একটি ফ্ল্যাটের ও গাড়ীর জন্য লোন পেয়েছেন।

অফিস কলিগের কথা অনুযায়ী এই ভদ্রলোক ব্যাংক লোনের ফ্ল্যাট কিনেছেন মুগদা ষ্টেডিয়ামের পিছনে। ১২৫০ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাট তিনি কিনেছেন ৮২ লাখ টাকায়। পুরো টাকা তিনি ব্যাংক লোন পাননি। তিনি এই ফ্ল্যাট থেকে প্রতি মাসে ভাড়া পান ১৭,০০০ টাকা। তিনি ২০১৬ মডেলের সাদা ফিল্ডার গাড়ী কিনেছেন। যেটাতে তিনি চড়তে পারেন না। তিনি একজন ড্রাইভার রেখেছেন ১৫,০০০ টাকা দিয়ে। অবশ্য এই টাকা তিনি ব্যাংক থেকেই পান।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

মুরাদ সাহেবের স্ত্রী একটি বেসরকারী কলেজে শিক্ষকতা করেন। বেতন পান ৩৩,০০০ টাকা। দুজনের বাড়ী রংপুর বিভাগে হওয়ার কারনে মোহাম্মদপুর এলাকায় থাকতে পছন্দ করেন দুজনেই। স্ত্রীর চাকুরী, দুই ছেলের পড়ালেখা মোহাম্মদপুরেই।

মুরাদ সাহেবের বাবা ও মা তার সাথেই থাকেন। তাদের আর কোন ছেলে নাই। শুধু চার মেয়ে। মেয়েগুলোর সবাইকে বিয়ে দিয়ে তিনি একমাত্র ছেলে ও বউমার কাছে থাকেন। চার মেয়ের নাতি-নাতনি এই মুহূর্তে এগারজন। এর মধ্যে দুজন নাতি তার ছেলের বাসা থেকেই পড়ালেখা করছেন। একজন বিবিএ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে, আরেকজন ইন্টারমেডিয়েট রেসিডেনসিয়াল স্কুল ও কলেজে।

মুরাদ সাহেব সব মিলিয়ে আয় করেন ১,৮৫,০০০ (নিজের বেতন + স্ত্রীর বেতন + ফ্ল্যাট ভাড়া) টাকা। ওনার খরচ বাসা ভাড়া ও প্রতি মাসের বাজার ৪০,০০০ টাকা। এক ছেলের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলসহ দুই ছেলের খরচ প্রতি মাসে ২০,০০০ টাকা। ফ্ল্যাট লোন ও গাড়ীর লোনসহ ব্যাংক কেটে নেয় ৭১,৯৩৫ টাকা। বাবা ও মায়ের চিকিৎসা বাবদ প্রতি মাসে এ্যাভারেজে ১০,০০০ টাকা। আত্মীয়-স্বজন ও দুই ভাগিনার পড়ালেখার খরচ (মাঝে মাঝে) ১০,০০০ টাকা।

ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংকের বিশ লাখ ও বিশ লাখ করে চল্লিশ লাখ টাকা লোনের কিস্তি ৯১,৪৫০ টাকা। মুরাদ সাহেবের ছয়টি ব্যাংকের মোট ক্রেডিট কার্ড আটটি। লিমিট ২৭,৭৫,০০০ টাকা। বর্তমানে আউটষ্টেনডিং প্রায় ১৬ লাখ। এই ১৬ লাখের ওনাকে প্রতি মাসে মিনিমাম বিল দিতে হয় ৮০,০০০ টাকা।

মুরাদ সাহেব ব্যাংকের এ ভি পি হওয়ার কারনে অফিসিয়াল বিভিন্ন প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকতে হয়। কারো জন্মদিনে থাকতে হয়। কারো বাচ্চা হলে যেতে হয়। কারো পরিবার অসুস্থ হলে দেখা করতে যেতে হয়। এই অবস্থায় মুরাদ সাহেবকে অনেক হাসিখুশি থাকতে হয়। তা না হলে বউ বাসায় বলবে “তুমি সবসময় রেগে থাক কেন?” “বাবা ও মা বলবে আমরা আছি এ জন্য ছেলে ঠিকমতো কথা বলে না” অফিসে বলবে যদি সিনিয়র হয় “তোমার কি চাকরী বাকরী ভাল লাগতেছে না- নাকি?” ইত্যাদি ইত্যাদি।

মুরাদ সাহেবের বাসায় রান্না ও বাচ্চাদের ঠিকমত খাওয়ার জন্য একজন স্হায়ী মহিলা আছে (শ্বশুর বাড়ীর মাধ্যমে, তার সাথে বেশী কথা বলা যাবে না)। যার থাকা খাওয়া ফ্রী এবং প্রতি মাসের বেতন ৬,০০০ টাকা। এর বাইরে ভদ্রলোকের বাসায় পার্টটাইম একজন কাজের মহিলা কাজ করেন কাপড়-চোপড় ধোওয়া, ঘড় মোছা ও বাথরুম পরিস্কার করা এই তিনটি কাজের জন্য তাকে দেন প্রতি মাসে ২,১০০ টাকা।

মুরাদ সাহেবকে অফিসে যাওয়ার জন্য কোট, টাই, সুন্দর জুতা, ক্লিন সেভ, চুলে কালি, আইরন করা কাপড়, এক কাপড় দুই দিন পড়া যাবে না। এই সব মেইনটেইন করতে ওনার মাসে খরচ যায় ১০ হাজার টাকা।

মুরাদ সাহেবের অফিস লোনের গাড়ীতে তার দুই ছেলে, বউ (কলেজ আসা ও যাওয়া) এবং ওনার বাবা ও মায়ের চিকিৎসায় হসপিটাল আসা ও যাওয়ার কাজে ব্যবহার হয়। ওনার বউ যেহেতু কলেজের শিক্ষক তাই মাঝে মাঝে ঐ গাড়ী আবার ঐ কলেজের অন্য শিক্ষকও যে কোন বিপদে পড়লে ব্যবহার করেন। কারন স্বামীতো এ ভি পি অসুবিধে কিসের।

মুরাদ সাহেব দেখতে অনেক সুন্দর এই কারনে তিনি বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করতে পেরেছেন। বড়লোক শ্বশুর বাড়ী হওয়ার কারনে জামাই মেয়ের জন্য রংপুর শহরে মেয়ের নামে দশ কাঠা জমি দিয়েছেন শ্বশুর। মুরাদ সাহেবের বউ এই গর্ব করে সবসময় বিশেষ করে ওনার বাবা ও মায়ের সামনে যখন রাতে সবাই একসাথে খেতে বসে। এই জমিতে এখনও কেন বাড়ি করছে না বাবার বাড়ির এই প্রেসারে আছে বউ, আর বউয়ের প্রেসারে আছে দেখতে সুন্দর এই ভদ্রলোক।

মুরাদ সাহেব একজন মিশুক স্বভাবের। সবার সাথেই মিশে থাকেন এর জন্য সিগারেট টানতে হয় কমপক্ষে দৈনিক বিভিন্ন সময়ে কাজের ফাঁকে কমপক্ষে দশটা। আর চা কম পান করেন সেটা অফিসেরই।

উপরোক্ত খরচ গুলো বাদ দিয়ে মুরাদ সাহেবের আরো প্রতি মাসে খরচ প্রায় ২০ হাজার টাকা। ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্ট ঠিক না থাকার কারনে মুরাদ সাহেবের সি আই বি এখন এসএমএ। এর আগে বিভিন্ন সময়ে ওনার সি আই বি নাকি এস এস ছিলো।

মুরাদ সাহেবকে প্রতি মাসে ধার করতে হয় প্রায় আশি থেকে নব্বই হাজার টাকা। কোন মাসে এর চেয়ে কম কোন মাসে এর চেয়ে বেশী।

প্রায় তিন ঘন্টা ভদ্রলোকের কথা শোনার পর আমি পরামর্শ দিলাম আপনি আগামী শুক্রবারে আমার সাথে দেখা করবেন।

(গল্পটি সত্য এবং বাস্তব এর সাথে কোন ব্যাংকার ভাইয়ের মিলে গেলে এর জন্য ভাই আমাকে গালাগালি করবেন না)

Courtesy: Abir Rahman’s FB Wall

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button