ব্যাংকার

তুষারে আবৃত ব্যাংকার, খালি কলসের বড় বেশী ঝংকার!

তুষারে আবৃত ব্যাংকার সম্প্রদায় খালি কলসের বড় বেশী ঝংকার! “এবং সার্কাস চলছে”….. এমন একটি ক্যাপশনসহ ডাক্তার তুষারের একটি পোস্ট অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ক্যাপশানের নীচে সোনালী ব্যাংকের (তবে আমার মতে এটি ইসলামী ব্যাংকের কোন একটি শাখা) একটি ছবি। যেখানে দেখা যায়- ব্যাংক কর্মকর্তাগণ এপ্রোন ও মাস্ক পরিহিত অবস্হায় তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।

পোস্টটা দেখে যে কোন সাধারন লোকেরও পোস্ট দাতার পোস্ট দেয়ার উদ্দেশ্য বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। “এবং সার্কাস চলছে”- কথাটায় দায়িত্বরত ব্যাংকারদের প্রতি কটাক্ষ আছে, বিদ্রুপ আছে, অবজ্ঞা আছে, আরও আছে ঔদাসীন্য! তিনি ব্যাংকারদেরকে কিম্ভুতকিমাকার পোষাক পরিহিত কতিপয় জোকার (Joker) বলতে চেয়েছেন। কারন সার্কাসের জোকারগণই অদ্ভুত ধরনের পোষাক পরে থাকেন। সেজন্যই এ ধরনের মন্তব্য! বিষয়টিতে স্বেচ্ছায় একটি পেশাজীবিদেরকে আঘাত করা হয়েছে। অনেকেই এর জোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ প্রসংগে কতিপয় বিষয়ে আমি ভদ্রলোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

প্রথমেই বলি- দেশে আমার প্রচুর ডাক্তার বন্ধু/ আত্নীয় আছেন- যাঁরা সত্যিকার অর্থেই নিবেদিত প্রান- দায়িত্বশীল ডাক্তার। এছাড়া এদেশে অনেক মহাপ্রাণ ডাক্তার আছেন- যাঁরা চিকিৎসা দেওয়াকে একটি আদর্শ সেবা এবং পেশা মনে করেন। যদি তা না হতো- তবে দেশের প্রায় ১৭ কোটি লোককে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো। সুতরাং সৎ, নির্লোভ ও দরদী চিকিৎসকগনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই সে চিকিৎসককে বলছিঃ

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

১) দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব প্রাক্কালে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ যখন হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে নিয়তির কাছে নিজেদেরকে সপে দিয়েছিলেন- তখন আপনারা কিছু সংখ্যক ডাক্তার সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন। বলেছিলেন- PPE সহ শতভাগ সুরক্ষা সামগ্রী না পেলে আপনারা হাসপাতালে যাবেন না! ওসব ডাক্তারদের মুখপাত্র ছিলেন আপনি।

অথচ সে সময় কোনরূপ সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই জীবন বাজি রেখে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর ভাইরাস উপেক্ষা করে ব্যাংকারগণ জাতিকে সেবা দিয়েছে। এর বিনিময়ে তারা কোন বাড়তি আর্থিক সুবিধা পাবেন না। বলতে পারেন কার সার্থে এরা জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করলো?

২) ঈদের ছুটিতে বিত্তবানগণ যখন প্রিয়জন নিয়ে বিদেশের সমুদ্র সৈকতে জলকেলিতে মত্ত- তখন ব্যাংকারগণ মধ্যরাত অবধি অফিসে হিসাব মিলাতে গলদঘর্ম! বলুনতো জীবন উপভোগ করার একক অধিকার কী শুধু আপনাদের?

৩) নির্বাচনসহ জাতির যে কোন জরুরি মূহুর্তে ব্যাংকারদেরকে বন্ধের দিনসহ সারা সপ্তাহ অফিস করতে হয়। বলুন তো কাদের স্বার্থে তাদের এ ত্যাগ স্বীকার?

৪) করোনা প্রকোপে সারা বিশ্বে যখন লকডাউন চলছে- তখন এ দেশের সকল ব্যাংকার কর্মমুখর প্রহর পার করছে! আর ঠিক সে মূহুর্তে ওরা আপনার বিদ্রুপ আর উপহাসের পাত্র হলো!

পোস্ট দেয়া চিকিৎসক এক সময়ের জনপ্রিয় উপস্হাপক। তিনি সার্টিফিকেটধারী ডাক্তারও বটে। শুনেছি সরকার বদলে তিনি সব সময় স্রোতের প্রতিকূলে নয়, বরং অনূকূলে থাকতেই নিরাপদ বোধ করেন। এ অবস্থাটা অবশ্য একটি অতীব লাভজনক তৈলমর্দন পদ্ধতি বলে জনশ্রুতি আছে! অবশ্য এসবই আমার লোকমুখে শুনা। তবে যদি এর কিয়দাংশও সত্যি হয়, তাহলে ডাক্তার সাহেবকে বলতে চাই- Who am I to judge another, when I my self walk imperfectly?

ডাক্তারদের প্রতি আমার অসীম শ্রদ্ধা। কারন জীবন সায়াহ্নে চোখের পাতা খোলা অবস্হায় যদি শেষ নিঃশাস ত্যাগ করি- তবে যিনি পাতা দুটি মুদিয়ে দিবেন সম্ভবত তিনি একজন ডাক্তার।

কারো পেশাকেই কিংবা জীবন রক্ষার জন্য নেয়া ব্যবস্থাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। অন্যের পেশাকে সম্মান দেখানোর মাধ্যমে নিজের পেশাকে নেয়া যায়- উচ্চ চূড়ায়। আসা করি ডাক্তার সাহেবের বোধোদয় ঘটবে।

সবশেষে আমার অনুজ ব্যাংকারদের উদ্দেশ্যে বলবো- নিজের পেশাদারিত্বের চরম উৎকর্ষতা প্রমানই হতে পারে অন্যের অশিষ্টাচারের উপযুক্ত জবাব।

কার্টেসিঃ মুহাম্মদ উল্লাহ, ব্যাংকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button