ব্যাংকার

রাষ্ট্রের সংকটময় মুহূর্তে ব্যাংকাররাও পিছিয়ে নেই

করোনাভাইরাসের মহামারীতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেও বাংলাদেশের সকল তফসিলি ব্যাংক সীমিত আকারে লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে যথাযথভাবে জনবল রোস্টারিংসহ সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত WHO গাইডলাইনস পরিপালন করে প্রতিটি ব্যাংককে লেনদেন পরিচালনা করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছে।

এরই ধারবাহিকতায় দেশের সকল তফসিলি ব্যাংকসমূহের বেশ কিছু শাখা জেলা, উপজেলা ও মহানগরীতে প্রয়োজন নিরিখে সপ্তাহে অন্ততঃ ২ থেকে ৪ দিন খোলা রাখছে। এক্ষেত্রে ঢাকার মতিঝিল/ দিলকুশা এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ/ আগ্রাবাদ এলাকার তফসিলি ব্যাংকের সকল শাখা সমূহ সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসেই খোলা রাখার জন্য বিশেষ পরিপত্র জারী করা হয়েছে।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সম্মুখে সমর যোদ্ধা বা ফ্রন্টলাইন ফাইটার হিসেবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অবদান অনস্বীকার্য। বর্তমানে দেশের এই কঠিন সংকটকালে চিকিৎসক, নার্স, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, প্রশাসন, পুলিশ, বিশেষায়িত বাহিনী RAB সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দেশের ৫৯টি তফসিলি ব্যাংকের প্রায় আড়াই লক্ষ ব্যাংক কর্মকর্তা, কর্মচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে নিরবিচ্ছিন্ন গ্রাহক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখে চলেছেন।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

ঢাকা,চাট্টোগ্রাম সহ দেশের অনেক জায়গায় দেশের অর্থনীতির চাকা সচল সীমিত অাকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।তন্মধ্যে প্রাচ্যের ম্যানচেষ্টার খ্যাত নরসিংদীর মাধবদীও অন্যতম একটি শিল্প এলাকা যেখানে প্রায় ৩৮ টি ব্যাংক তাদের কার্যক্রম সীমিত আকারে চালু রেখেছে। তন্মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক,পূবালী ব্যাংক,ইউসিবিএল,ডাচ বাংলা ব্যাংক উল্লেখযোগ্য।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ব্যাংককে বলা হয় দেশের অর্থনীতির ধারক ও বাহক। বলতে গেলে যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বড় চালিকাশক্তি হলো ব্যাংকিং খাত। জনগনের আমানত গ্রহন ও বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা। সেই সাথে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংক অসামান্য ভুমিকা পালন করে। এমনকি আজকাল বিভিন্ন প্রতিনিধিত্বমূলক সেবা প্রদান করেও ব্যাংক জনগণের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করে থাকে। জনগনের আস্থার্জনের মাধ্যমে খুব কাছে চলে এসেছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, করোনাভাইরাস রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রমে সরকারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহ এগিয়ে আসছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছেন। দেশের একটি স্বনামধন্য বেসরকারি ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় ব্যাংকার্স এসোশিয়েশন বাংলাদেশ এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঁচ (৫) কোটি টাকা আর্থিক অনুদান দেয়। একই ব্যাংকের সকল কর্মীরাও একদিনের মুল বেতনের সমপরিমান ২৮ লাখেরও বেশি টাকায় ৩০ হাজার দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন।

বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম মরণঘাতী এই করোনাভাইরাস ধরা পরে। যা বর্তমানে মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করেছে। সরকার করোনাভাইরাস রোগ রোধকল্পে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। একই সাথে সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখার জন্য লকডাউন ঘোষণা করে। প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারন ছুটি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ছুটি বাড়িয়ে তা ১১ এপ্রিল করা হয়। তৃতীয় দফা ছুটি বাড়িয়ে করা হয় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর চতুর্থ দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়।এরপর পঞ্চম দফায় ছুটি বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত করা হয়। এবার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ষষ্ঠ দফায় আবারও ছুটি ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হল।

সরকার ধারাবাহিকভাবে সাধারণ ছুটি বাড়ালেও থেমে নেই দেশের ব্যাংকিং সেবা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে সীমিত আকারে চালু থাকছে দেশের প্রতিটি ব্যাংকের কার্যক্রম। দেশের কঠিন এ সংকটকালীন মুহূর্তে সারা দেশ স্তবির। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দেশের সরকারি, বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান। গার্মেন্টস কলকারখানা। মার্কেট, শপিংমল। নামীদামী সব ব্র্যান্ডের শো-রুম। মসজিদ, মাদরাসা সহ সব উপাসনালয়।

ব্যাংকারদের জীবনে এমনও ঘটছে যে, প্রতিদিন সকালে অফিস যাওয়ার সময় অবুঝ সন্তান পা ঝাঁপটে ধরে থাকে। বলতে থাকে- “আব্বু যেওনা”। প্রিয়তমা স্ত্রী বলে- “আজ অফিস না গেলে হয়না”! মমতাময়ী মা’ ছলছল চোঁখে নিরাপদে ঘরে ফিরার কামনায় মাথায় হাত বুলায়। দোয়া করে। বলে- “সাবধানে যাইস বাবা”। যেন যুদ্ধের ময়দানে যাচ্ছে তাদের প্রিয় মানুষটি। হুম যুদ্ধই তো। যেখানে বিশাল ধনসম্পদ, সম্রাজ্য আর পারমানবিক শক্তি ও কোন কাজে আসছে না। প্রকৃতির কাছে মানুষ অসহায়। গোটা বিশ্ব আজ করোনা নামক অদৃশ্য শক্তির তান্ডবে পর্যুদস্ত। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। মৃত্যুর মিছিল। বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে করোনার ভয়ংকর থাবা। কে কখন এ থাবায় আক্রান্ত হয়ে যায়! তাই বুঝি স্বজনের এই হাহাকার। প্রিয়োজন হারানোর ভয়। অজানা শঙ্কা।

একজন ব্যাংকারের প্রতিটি দিনই শুরু হয় এক অনিশ্চয়তা, নানা উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায়। চলার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা তো আছেই। আবার অনেকে শত কষ্ট করে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েও অফিস করেন। কখনো সিএনজি বা অটোরিকশার মাধ্যমে যাতায়াত করেন। গ্রাহক সেবায় নিবেদিত প্রাণ একজন ব্যাংক কর্মকর্তা লেনদেনের সময় কত ঝুঁকিতে থাকেন। সীমিত আকারে ব্যাংকিং সেবার কথা বলা থাকলেও অনেক সেবাগ্রহীতা নগদ লেনদেন ছাড়াও অহেতুক কাজ যেমন- নতুন হিসাব খোলা, হিসাব বন্ধ করা, নমিনি পরিবর্তন, মোবাইল ব্যাংকিং চালু, নতুন চেক বহি উত্তোলন ইত্যাদি করতে যাচ্ছেন। এর ফলে অনেক শাখায় ব্যাংকারদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লেনদেন শেষ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তারপরও মানবিকতার কথা চিন্তা করে অনেক ব্যাংক কর্মকর্তারা এসব কম গুরুত্বপূর্ণ সেবাও দিয়ে যাচ্ছেন। আবার গ্রাহকদের মধ্যে কে আগে সেবা নিবে আর কে পরে নিবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেক ব্যাংককে হাতাহাতি হচ্ছে অতীতের মতোই। যেখানে ব্যাংক কর্মকর্তার সামনে সেবা নেওয়ার সময় গ্রাহকদের নিজেদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্বে থাকার কথা। সেখানে একজনের ঘাড়ের উপর দিয়ে আরেকজন চেক দিয়ে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করছে। এভাবেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে একজন ব্যাংকার প্রতিদিন হাসি মুখে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

একজন ব্যাংকারের কার্যপরিধি কেবল ব্যাংকের কোনো শাখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পরিধি আরও ব্যাপক। আরও বিস্তৃত। যেমন, আজকাল প্রত্যেকটি ব্যাংকেরই রয়েছে ২৪ ঘন্টা সেবাদানকারী নিজস্ব এটিএম বুথ, মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ই-কমার্স সহ আধুনিক সব ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা। প্রতিটি সেবার পিছনেই রয়েছে অসংখ্য আত্মনিবেদিত দক্ষ অফিসার বা কর্মকর্তা। কলাকুশলী। যারা দেশের এই আপদকালীন সময়ে মানুষের হাতে পর্যাপ্ত নোট সরবরাহ নিশ্চিত করছেন। নিশ্চিত করছেন অনলাইন ব্যাংকিং সেবা। ছাঁয়া শরীর হয়ে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। যাতায়াত কালে তারাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।

দেশের এ মহামারী দূর্যোগে একজন ব্যাংকারকে এমন ভয়ানক ঝুঁকি আর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতিদিন। ইতোমধ্যেই একজনকে আমরা হারিয়েছি। করোনাভাইরাসে প্রথম শহীদ ব্যাংকার। আমার ভাই। আমার সহকর্মী সিটি ব্যাংকের জনাব “মুজতবা শাহরিয়ার”, এসএভিপি কে। করোনা যুদ্ধে গ্রাহক সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন বিভিন্ন ব্যাংকের অনেক ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারী। তারা সবাই মারাত্বক করোনাভাইরাস প্রতিরোধ যুদ্ধে আত্মত্যাগী নিবেদিত বীর। যারা দেশের এই সংকট কালে মানুষের সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। শহীদ হয়েছেন। আক্রান্তদের দ্রুত রোগমুক্তি কামনা করি।

কেবল করোনাভাইরাসের মহাসংকটকালীন দিনগুলোতে নয়। দেশের যেকোন সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিটি ব্যাংক কর্মকর্তা হাসি মুখে এগিয়ে আসছেন। গ্রাহক সেবা দিচ্ছেন। কখনও গার্মেন্টস শ্রমিকের বেতন প্রদান। নির্বাচনী নমিনেশন পেপার জমা দেওয়ার পে-অর্ডার। কখনও বা আয়কর রিটার্ন দাখিলের পে-অর্ডার জমা ইত্যাদি জাতীয় ইস্যুতেও বন্ধের দিনগুলোতে যেমন শবে-বরাত, শবে-কদর এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ঈদের দিনেও সেবা দিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা দেশের প্রয়োজনে অনন্য উদাহরণ রেখে চলেছেন। নিজের ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা, সুখ, চাহিদা এমনকি পরিবার পরিজনকে সময় দেয়ার চেয়েও যেখানে দেশ এবং জাতির স্বার্থটাকেই বড় করে দেখেছেন।

তারপরেও কোন ব্যাংক কর্মকর্তার উৎসাহের কমতি নাই। কমতি নাই সেবার মনমানসিকতারও। তারা অসন্তুষ্টিতে ভোগে না। অতৃপ্তিতে ভোগেন না। কিছু পাবার আশাও করেন না। যেখানে সকালে ঘর থেকে বের হওয়ার সময়ও নিজ সন্তানকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে আসে। আবার অফিস শেষেও ঐ ঘুমন্ত অবস্থায়ই দেখতে হয়। তারপরও দিন শেষে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মুখে তৃপ্তির হাসি যে- অন্ততঃ জাতির বিপদের সময় তো পাশে থাকলাম!

একই সাথে দেশের সকল ব্যাংকার আশা করে যে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়িত হবে। সেই সাথে সাধারণ মানুষ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহকে সহায়তা করবে এবং সরকারের নির্দেশ মত মানুষ ঘরে অবস্থান করবে এবং খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশ এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে।

লেখক: মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, ব্যাংকার

প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংক, ব্যাংকার ও ব্যাংকিং বিষয়ক চলমান খবর বা সমসাময়িক বিষয়ে আপনার লেখা ও মতামত ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ প্রকাশ করতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন- [email protected] আমরা আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে তা প্রকাশ করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button