ব্যাংকার

ব্যাংকারের যোগ্যতার মানদন্ড প্রয়োজন

“He sometimes pan superi khai” (সে মাঝে মাঝে পান সুপারি খায়)। শাখার একজন কর্মকর্তা অফিসের মধ্যে পান সুপারি খায়। এমতাবস্থায় অভিযোগটি ব্যাংকের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানাতে শাখা ব্যবস্থাপক ইংরেজিতে একটা পত্র লিখতে গিয়ে উপরোক্ত ইংরেজি বাক্য লিখেছিলেন। বাক্যের মান বা ভুল-ত্রুটি বিষয়ে আপাতত কথা না বলাই শ্রেয়। একজন ব্যবস্থাপকের সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে পত্র মারফত বিভিন্ন যোগাযোগ করার প্রয়োজন হয়। যদি এমন একটা পত্র অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের হাতে যায় তাহলে ব্যাংকার ও ব্যাংকের মান-সম্মান কোথায় যাবে।

১) গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর কিছু মানুষের জন্য বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরী পাওয়ার মত সহজ আর কিছু নাই। আবেদন করবেন, নামমাত্র ভাইভা দেবেন, তারপর নিয়োগপত্র নিয়ে আসবেন ও চাকুরীতে যোগদান করবেন। এক্ষেত্রে অনেক যোগ্য প্রার্থী তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অপরদিকে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থী চাকুরী পাচ্ছে যার কারনে অনেক সময় প্রতিষ্ঠানকে চরম মূল্য দিতে হয়।

২) অপরদিকে কিছু মানুষের জন্য ব্যাংকে চাকুরী পাওয়া অত্যন্ত কঠিন কারন তীর্থের কাকের মত চেয়ে থাকতে হয় কখন একটা ব্যাংক পত্রিকায় নিয়োগ সার্কুলার দেবে। তারপর সেই সার্কুলারের বিপরীতে ২০-২৫ হাজার মেধাবী প্রার্থী আবেদন করে। এর পর বিআইবিএম অথবা আইবিএ দ্বারা পরিচালিত কঠিন এক লিখিত পরীক্ষায় অবতীর্ন হতে হয়। ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে মেধার ভিত্তিতে ১০০-২০০ জনকে মৌক্ষিক পরীক্ষায় অবতীর্ন হতে হয় এবং সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে ৫০-৭৫ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। তারা প্রকৃতপক্ষে চাকুরীটা ডিজার্ভ করে ও এক্ষেত্রে প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিরা চাকুরী পায়।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

এই বৈষম্যের অবসান হওয়া উচিত। ব্যাংকিং সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্যাংকার হতে হলে ন্যুনতম যোগ্যতা নির্ণয়ের জন্য একটা সম্মিলিত নিয়োগ পরীক্ষা হওয়া উচিত। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণের জন্য ন্যুনতম একটা মার্ক থাকবে যেটা না পেলে কেউ ব্যাংকিং পেশায় ঢুকতে পারবে না। উকিল হতে গেলে যেমন বার কাউন্সিল কর্তৃক ন্যুনতম যোগ্যতা নির্ণয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হতে গেলে যেমন শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় তেমনি ব্যাংকিং পেশায় আসতে হলে তাকে নির্দিষ্ট একটা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ন্যূনতম যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। উক্ত পরীক্ষাটি ইন্সটিটিউট অব ব্যাংকারস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ব্যাংক, অথবা বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) দ্বারা পরিচালিত হতে পারে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

যথাযথ লিখিত পরীক্ষা ও সার্কুলার ব্যতিত যারা নামে মাত্র ভাইভা দিয়ে ব্যাংকিং পেশায় যোগদান করবেন তারা উক্ত পরীক্ষায় অবতীর্ন হয়ে ন্যুনতম নম্বর পেয়েছেন কিনা তা যাচাইকরণ পূর্বক সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়োগ দেবেন। তাহলে সকল কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগ্যতার একটা মান বজায় থাকবে এবং অনেক মেধাবী জনশক্তি ব্যাংকিং পেশায় প্রবেশ করবে এবং দেশে অনেক অনেক দক্ষ ব্যাংকার গড়ে উঠবে। কাচামাল যদি ভালো না হয় তাহলে যতই পরিচর্যা করা হোক না কেন ফিনিশড গুড ভালো হবেনা। বছরের পর বছর প্রশিক্ষণ দিয়েও কোন পরিবর্তন করানো যায়না কারন মানুষ তার সীমাবদ্ধতার বা ক্ষমতার বাহিরে যেতে পারেনা।

বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টরের অনেক সমস্যার মধ্যে দক্ষ জনশক্তির অভাব অন্যতম একটা ফ্যাক্টর। চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো অপারেশন চালু করার পর হঠাৎ করেই ব্যাংকিং সেক্টর অনেক বড় হয়ে যায়। যে পরিমাণ অভিজ্ঞ লোকবল দরকার মার্কেটে তার ঘাটতি ছিলো। নতুন ব্যাংকগুলো তাদের অপারেশন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ ব্যাংকার নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। অভিজ্ঞ জনশক্তির ঘাটতি থাকায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান কম থাকা সত্বেও অন্য ব্যাংক থেকে অনেক অফিসারকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ বা পদায়ন করা হয়েছে।

দেখা গেছে, শুধুমাত্র ২/৩ বছর জেনারেল ব্যাংকিং এ কাজ করে একটা শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের আইটি বিভাগে মাত্র ৫ বছর অভিজ্ঞতা থাকা একজন মধ্যম পর্যায় লেভেলের অফিসারকে আইটি বিভাগের প্রধান করা হয়েছে, কোন কোর ব্যাংকিং জ্ঞান না থাকা অফিসারকে অডিট বিভাগের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। যার ফলাফল অনেক সময় খারাপ হয়েছে এবং এর প্রভাব পুরো ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির উপর পড়েছে এবং সবাইকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভুক্তভোগী হতে হয়েছে। সবার প্রথমে লেখা ইংরেজি বাক্যটি তার প্রমান।

সেজন্য সবার নিজেদের স্বার্থেই ব্যাংকিং সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা প্রয়োজন। যাতে করে দেশের ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রি একটা শক্তিশালী ইন্ডাস্ট্রিতে পরিনত হয় এবং এখানে কর্মরত সকলের স্বার্থ অক্ষুন্ন থাকে। এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। সবার কাছে গ্রহনযোগ্য নাও হতে পারে। না হলে গঠনমূলক সমালোচনা করুন অথবা এড়িয়ে চলুন। অযাথা ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বিবাদ না করার জন্য ধন্যবাদ।

লেখকঃ ডালিম হাসান, ব্যাংকার[প্রকাশিত এই লেখাটি লেখকের একান্তই নিজস্ব। ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ লেখকের মতাদর্শ ও লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখা ও মতামতের জন্য ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ দায়ী নয়।]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button