ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশঃ ব্যাংকের একজন গ্রাহক একটা চেক জমা দিতে গিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করলো: আচ্ছা এই চেকের টাকা আমার হিসাবে জমা হতে কতদিন লাগবে?
ব্যাংকার: ২/৩ দিন।
গ্রাহক: কেন? ব্যাংক দুটো তো খুব কাছাকাছি, রাস্তার এপার আর ওপার, তাহলে এত সময় লাগবে কেন?
ব্যাংকার: ক্লিয়ারেন্স-এর কিছু প্রক্রিয়া আছে, তাই।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
গ্রাহক: ঠিক বুঝলাম না, এত কাছাকাছি ব্যাংক হওয়া সত্ত্বেও…
ব্যাংকার: বুঝলেন না! তাহলে শোনেন। ধরেন, অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে আপনি গোরস্থানের কাছে মারা গেলেন, তাহলে কি লোকজন আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে ওই গোরস্থানে নিয়ে কবর দিয়ে দিবে? না কি প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে যাবে, মারা গেছেন কি না ডাক্তার তা পরীক্ষা করে দেখবে, পুলিশ রিপোর্ট হবে, পোস্ট মর্টেম হবে, আপনার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে, পরিবার আর আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুরা মিলে কান্নাকাটি হবে, জানাজা হবে, ওদিকে কবর খোড়া হবে, তারপর গোরস্থানে নিয়ে লাশ দাফন করা হবে, তাই না?
গ্রাহক: আপনি ব্যাংক কর্মকর্তা না আজরাইলের লাইভ বিজ্ঞাপন?
ব্যাংকার: কেন কেন?
গ্রাহক: যে কেয়ামত টাইপের ভয়াবহ উদাহরণ দিলেন চোক্ষের সামনে হাশরের ময়দান দেখতে পাইতাছি। আমি সাত দিনেও টাকা নিতে আসবো না!
ব্যাংকার: ভয় নেই। এখন ব্যাংক ক্লীয়ারিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আরটিজিএস (RTGS) এর মাধ্যমে।
গ্রাহক: কি ভাবে?
ব্যাংকার: প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে ব্যাংকিং খাতের গ্রাহকসেবার ধরন। আন্তঃব্যাংকে বড় লেনদেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি, চেক জালিয়াতি রোধ, সরকারী সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ, সেকেন্ডারি বন্ড বেচাকেনা, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের (কলমানি) এর লেনদেনগুলো অল্প সময়ে এবং ঝুঁকিমুক্ত ভাবে সম্পন্ন, সার্বিকভাবে দ্রুত পেমেন্ট সিসটেম উন্নয়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স প্রবাহ দ্রুত ও সহজতর করার প্রযুক্তি রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (RTGS) বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাংকিং খাত এখন অনেক উন্নত হয়েছে এবং আরটিজিএস এর অন্যতম অন্তর্ভুক্তি। এটি ওয়ান টু ওয়ান টাকা স্থানান্তরের অনলাইন প্রক্রিয়া যাতে কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই লেনদেন সম্ভব। যদিও ক্যাশ টাকা স্থানান্তরের নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসা এবং তা পরিচালনা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সরকারের কাছে ।
কিন্তু বর্তমানে ঝুঁকি মুক্ত লেনদেন হলো আরটিজিএস এটা এমন একটি প্রাযুক্তিক সলিউশন যার মাধ্যমে গ্রাহক ১ মিনিটেই টাকা এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর করতে পারবেন। ব্যাংক একই হলে অন্যান্য সাধারণ লেনদেনের সঙ্গে এটি বিটুবি (B2B) লেনদেনকে ত্বরান্বিত করবে। তবে পরিচালনা এবং গ্রাহককে ক্যাশ নিশ্চিত করাটাই আরটিজিএসের প্রধান চ্যালেঞ্জ। অনলাইনে জটিলতা মুক্ত তাৎক্ষণিক সেবা প্রদানে একটি কার্যকরী পদ্ধতি আরটিজিএস।
এটি ব্যক্তি পর্যায়ে তাৎক্ষণিক লেনদেন এবং ক্রেতার ডেবিট ক্রেডিট হিসাবে নির্ভুলতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কার্যকর। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ পৃথিবীর শতাধিক দেশে এ পদ্ধতি চালু রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ১৮ লাখ ৯৯ হাজার ৬০০ ডলার ব্যয়ে ‘রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (RTGS) প্রবর্তন করা হয়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তা এবং বিশ্বব্যাংকের কারিগরি সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।
পৃথিবীর অনেক দেশেই নিরাপদ এ পদ্ধতি চালু রয়েছে। বিশ্বব্যাংক শতাধিক দেশে আরটিজিএস বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে। আরটিজিএসের ফলে সব ধরনের হাই ভ্যালু পেমেন্ট সহজ প্রক্রিয়ায় অল্পসময়ে সম্পন্ন হয় তাছাড়া বাংলাদেশে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ইলেক্ট্রনিক্স ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (বিইএফটিএন) এবং বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস (BACH) চালু আছে। তবে বিইএফটিএন ও বিএসিএইচের সঙ্গে আরটিজিএসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিইএফটিএনের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর মধ্যকার ক্লিয়ারিং একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর হয়। এই পদ্ধতিতে রিয়েল টাইম অর্থাৎ সঙ্গে সঙ্গে পেমেন্ট হয় না। আরটিজিএসের মাধ্যমে ওয়ান টু ওয়ান ভিত্তিতে লেনদেন হয়। অন্যদিকে স্বয়ংক্রিয় ক্লিয়ারিং হাউসে দুটি ব্যাংকের চেক ক্লিয়ারিং করতে নেটিং বা সমন্বয় করা হয়।
কিন্তু আরটিজিএস পদ্ধতি চালু হলে যে কোন ধরনের আন্তঃব্যাংক লেনদেন দ্রুত নিষ্পন্ন করা সম্ভব হবে। আরটিজিএসের ফলে সরকারী সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ, সেকেন্ডারি বন্ড বেচাকেনা, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের (কলমানি) লেনদেনগুলো অল্পসময়ে ও ঝুঁকিমুক্তভাবে সম্পন্ন হবে। এটি হবে এমন একটি পদ্ধতি, যা ব্যবহার করে কোন ব্যাংকের নগদ জমা (CRR) সংরক্ষণে ঘাটতি দেখা দিলে অনলাইনে তাৎক্ষণিকভাবে তা মেটানো যাবে। এ ক্ষেত্রে যে ব্যাংকে সিআরআর ঘাটতি থাকবে উদ্বৃত্ত ব্যাংক থেকে তার ঘাটতি মেটানো হবে। এটি ঘাটতি ব্যাংককে উদ্বৃত্ত ব্যাংকের ধার হিসেবে গণ্য হবে। আর ওই দিনের কলমানিতে লেনদেনের গড় সুদ হার হিসাব করে ঘাটতি ব্যাংক সরবরাহকারী ব্যাংককে সুদ দেবে। তাতে দুটি ব্যাংকই লাভবান হবে।
বর্তমানে আরটিজিএস (RTGS) পদ্ধতিতে এখন দৈনিক পরিশোধ হচ্ছে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি। ৫৫টি ব্যাংকের সাড়ে পাঁচ হাজার শাখার গ্রাহকরা তাৎক্ষণিক লেনদেনের এ সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর চালু হওয়া আরটিজিএস (RTGS) এখন বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে সারাদেশে ৯ হাজার ৫৪৩টি ব্যাংক শাখার মধ্যে অনলাইনের আওতায় রয়েছে সাত হাজার ১৬৭টি। আর অনলাইন শাখাগুলোর মধ্যে পাঁচ হাজার ৫৭১টি শাখায় আরটিজিএসে (RTGS) লেনদেন হচ্ছে।
কার্টেসিঃ সংগৃহীত