ব্যাংক হিসাব

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ওপেনিং: কিছু ভুল, কিছু সতর্কতা

মোশারফ হোসেনঃ অ্যাকাউন্ট ওপেনিংয়ের মাধ্যমেই ব্যাংকের সাথে কাস্টমারের আনুষ্ঠানিক ব্যাংকার-কাস্টমার রিলেশনশিপ শুরু হয়। অ্যাকাউন্ট ওপেনিংয়ের মাধ্যমে মূলত ব্যাংক তার গ্রাহকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। তাই অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফরমটিকে আমরা ব্যাংক এবং গ্রাহকের মধ্যকার চুক্তিপত্রও বলতে পারি। তাছাড়া মানি লন্ডারিং ও জাল-জালিয়াতি প্রতিরোধে গ্রাহকের পূর্ণ পরিচিতি সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বলা হয়ে থাকে, ব্যাংকে মানি লন্ডারিং এবং জাল-জালিয়াতির মূল বা উৎস হচ্ছে অ্যাকাউন্ট ওপেনিংয়ে গাফিলতি ও দুর্বলতা। আবার ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রেও গ্রাহকের পূর্ণ পরিচিতি প্রয়োজন। আর উভয় ক্ষেত্রেই গ্রাহকের পরিচিতি সংরক্ষণের প্রাথমিক ও অন্যতম উপায় হচ্ছে অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফরম এবং কোর ব্যাংকিং সিস্টেমে (সিবিএস) খোলা কাস্টমারের ইউনিক আইডি।

তাই অ্যাকাউন্ট ওপেনিংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংকারকে অভিজ্ঞ, দক্ষ ও বিচক্ষণ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, বেশিরভাগ অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ডেস্কেই শাখার নবীনতম কর্মকর্তাকেই বসানো হয়। কখনো কখনো ইন্টার্ন দিয়েও সারা হয় অ্যাকাউন্ট ওপেনিং। তাই শেখার আগেই ভুল করে ফেলি আমরা, সতর্ক হওয়ার আগেই অনেক অসতর্ক স্টেপ নিয়ে ফেলি।

আবার আমরা যারা কয়েক বছর অ্যাকাউন্ট ওপেনিংয়ে কাজ করে মুটামুটি একটা লেভেলের দক্ষতা অর্জন করেছি, তাদেরও প্রায় ৯০ শতাংশই একটা অ্যাকাউন্ট ফরমের এ-টু-জেড সবকিছু পড়ে দেখেছি কিনা সন্দেহ আছে। কারণ, আমরা সবাই ভাবি, ‘অ্যাকাউন্ট ওপেনিং- এটা আর কী এমন কাজ যে পড়াশোনা বা বিশেষ কোনো ট্রেনিং দরকার আছে!’ তাই অনভিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ- উভয় শ্রেণির ব্যাংকাররাই অ্যাকাউন্ট ওপেনিংয়ে বেশ কিছু ভুল করে থাকেন। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, আমরা যারা অ্যাকাউন্ট ওপেনিংয়ে কাজ করি, তারা অবশ্যই কিছু না ভুল করছি, কিন্তু বুঝতে পারছি না যে, আমরা কোথায় কোথায় ভুল করছি। আমিও আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেক ভুল করেছি৷ এখন অধীনস্থদের অনেক ভুল লক্ষ করি প্রতিনিয়ত। তাই নিজের অভিজ্ঞতা ও গবেষণার আলোকে অ্যাকাউন্ট ওপেনিংয়ে ব্যাংকারদের ভুল এবং সতর্কতাসংবলিত অর্ধশত করণীয় তুলে ধরব।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

✓ প্রথমেই অ্যাকাউন্ট ওপেনার গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে ভেরিফাই করে নিবেন। ব্যস্ততার অজুহাতে কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট ওপেন করার পরে এনআইডি ভেরিফাই করেন, যা অনুচিত ও ঝুঁকিপূর্ণ।
✓ নির্বাচন কমিশনের সার্ভার হতে প্রাপ্ত পার্টিকুলারস-এর সাথে গ্রাহক প্রদত্ত পরিচয়পত্রের সব পার্টিকুলারস মিলিয়ে নিন।
✓ স্যাংকশন স্ক্রিনিং সফটওয়্যারে গ্রাহকের নাম স্ক্রিনিং করে দেখে নিন- সংশ্লিষ্ট গ্রাহক জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্যাংকশন লিস্ট বা বাংলাদেশ সরকারের কালো তালিকাভুক্ত কিনা।

✓ অ্যাকাউন্ট হোল্ডার ও নমিনির আইডি ক্রস চেক করুন। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট হোল্ডার তার ছেলে/মেয়ে/বাবা/মা/ভাই/বোন/স্বামী/স্ত্রীকে নমিনি করেন। কিন্তু দেখা যায়- অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের পরিচয়পত্রের সাথে নমিনির পরিচয়পত্রে গড়মিল। যেমন- ধরছি, অ্যাকাউন্ট ওপেনার গ্রাহক তার আপন ছোট ভাইকে নমিনি দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু অ্যাকাউন্ট ওপেনার-এর এনআইডিতে তার বাবার নাম ‘জসিম উদ্দিন’। কিন্তু তার ছোট ভাইয়ের এনআইডিতে বাবার নাম ‘জমসু’। অর্থাৎ, হিসাবধারী গ্রাহক এবং নমিনি উভয়ের পিতা এক ও অভিন্ন ব্যক্তি, কিন্তু দুইজনের এনআইডিতে সেই একই পিতার নাম এসেছে ভিন্ন ভিন্নভাবে! এসব ডিসপিউটেড ডকুমেন্টস দিয়ে হিসাব খুলবেন না। নামের এ ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও যদি হিসাব খুলতেই চান, তাহলে বাবার সব নামের ঘোষণা সংবলিত এফিডেভিট বা স্থানীয় চেয়ারম্যান/মেয়র/কমিশনার এর কাছ থেকে সনদ নিতে হবে।

✓ গ্রাহকের নামে টিআইএন আছে কিনা- নিজ থেকে জিজ্ঞেস করে নিবেন। টিআইএন থাকলে কী সুবিধা- সেটা বুঝিয়ে বলবেন। গ্রাহক যদি টিআইএন জমা করেন, তাহলে সেটা হিসাব ফরমে উল্লেখ করার পাশাপাশি সিবিএসেও এন্ট্রি নিশ্চিত করতে হবে।
✓ জন্ম সনদ দিয়ে হিসাব খুললে সাথে অন্য যেকোনো একটি ফটো আইডি, যেমন- স্কুল/কলেজের রেজিস্ট্রেশন সনদ, স্টুডেন্ট আইডি বা প্রফেশনাল আইডির কপি নিবেন।

✓ জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে হিসাব খুললে এখন আর পরিচয়দানকারী লাগে না। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র বাদে অন্য কোনো আইডি দিয়ে হিসাব খুললে পরিচয়দানকারী লাগবে– এটাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ নির্দেশনা। তাই জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া অন্য কোনো আইডি, যেমন- পাসপোর্ট, জন্ম সনদ দিয়ে হিসাব খুললে ইন্ট্রোডাকশন করিয়ে নিতে হবে।

✓ পরিচয়দানকারী যেন ব্যাংকের কোনো transactional account-ধারী (সঞ্চয়ী ও চলতি) হয় এবং তার অ্যাকাউন্টটি যেন অবশ্যই operative account হয়। তবে অ্যাকাউন্ট না থাকলেও, এনআইডিধারী যেকেউ এখন পরিচয়দানকারী হতে পারে।
✓ পরিচয়দানকারী প্রযোজ্য হলে হিসাব ফরমে পরিচয়দানকারীর স্বাক্ষর, হিসাব নম্বর ও মোবাইল নম্বর লিপিবদ্ধ করবেন।

✓ গ্রাহকের ছবি পরিচয়দানকারী কর্তৃক সত্যায়ন করে নিবেন। হিসাব ফরম ও হিসাব খুলতে আসা গ্রাহকের ছবিতে দেয়া পরিচয়দানকারীর স্বাক্ষর ব্যাংকের অনুমোদিত কর্মকর্তা কর্তৃক ভেরিফাই করতে হবে। জমাকৃত কাগজপত্রের সব ফটোকপি সত্যায়ন করুন। এমনটাও দেখা যায়, ব্যাংকাররা এনআইডির সাথে জমাকৃত অন্য কোনো কাগজপত্র, যেমন- টিআইএন, ট্রেড লাইসেন্স, বিদ্যুৎ বিলের কপি ইত্যাদি থাকলে সেগুলো সত্যায়ন করেন না। কিন্তু এনআইডিসহ সব ডকুমেন্টসই সত্যায়িত করতে হবে।

✓ অফলাইনে হিসাব খুলতে চাওয়া সম্ভাব্য গ্রাহককে অবশ্যই সশরীরে ব্যাংকে উপস্থিত হতে হবে। যদি কোনো কারণে হিসাব ফরম গ্রাহককে বাসায় নিয়ে যেতে দেয়া হয়, তাহলে তাকে স্বাক্ষরগুলো অন্তত আপনার সামনে ব্যাংকে এসে দিতে বলবেন। বিশেষ গ্রাহকের ক্ষেত্রে (শারিরীক প্রতিবন্ধী, অসুস্থ), গ্রাহক যদি ব্যাংকে না আসতে পারেন, সেসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ব্যাংকের কোনো প্রতিনিধিকে গ্রাহকের বাসায় পাঠিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে আনবেন। তা না হলে, একজনের স্বাক্ষর আরেকজন করে দিতে পারেন এবং ফলশ্রুতিতে জাল-জালিয়াতির ঘটনা ঘটতে পারে।

✓ প্রতিষ্ঠানের হিসাব হলে এনআইডি, ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন ও করপোরেট সিলে হিসাবের/প্রতিষ্ঠানের নাম, মালিকের নাম, ঠিকানা ইত্যাদি যেন পরস্পর মিল / অভিন্ন থাকে।
✓ গ্রাহককে যদি পড়াশোনা কম বা পড়াশোনা না জানা লোক বলে মনে হয়, তাহলে তিনি স্বাক্ষর করতে পারেন কিনা- তা জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়ে নিবেন।
✓ কেউ যদি ইংরেজি ক্যাপিটাল লেটারে স্বাক্ষর করতে চায়, তা এ্যালাউ করবেন না।

✓ গ্রাহকের ‘পেশা’ ও ‘অর্থের উৎস’ স্পষ্ট ও ডিটেইলড আকারে লিখবেন। কেউ যদি শিক্ষক হয়ে থাকেন, তাহলে তার পেশা হিসেবে শুধু ‘শিক্ষক’ বা ‘শিক্ষকতা’ না লিখে এভাবে লিখতে পারেন, ‘প্রধান শিক্ষক, মতিঝিল হাই স্কুল।’

✓ আবার অর্থের উৎস হিসেবে আমরা অনেক সময় লিখি, ‘ফ্যামিলি ইনকাম’, ‘হাসব্যান্ড’স ইনকাম’, ‘ব্যবসা’, ‘টুকটাক ব্যবসা’ ইত্যাদি। এভাবে অর্থের উৎস লেখাও অনুচিত। কারণ শুধু ‘ব্যবসা’ লিখলে এটা কিসের ব্যবসা সেটা ক্লিয়ার হয় না। ব্যবসা তো মাদকের বা অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসাও হতে পারে। তাই অর্থের উৎস ‘ব্যবসা’ হলে এভাবে লিখতে পারেন, ‘ধান-চালের পাইকারি ব্যবসা’ / ‘উডেন ফার্নিচারের খুচরা ব্যবসা’।

✓ টিপি পূরণ করার আগে গ্রাহকের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে সম্ভাব্য লেনদেনের একটা ধারণা নেয়ার চেষ্টা করবেন।
✓ প্রাথমিক জমা পোস্টিং হওয়ার আগেই গ্রাহকের লেনদেনের এসএমএস এ্যালার্ট প্রাপ্তি নিশ্চিত করুন, অর্থাৎ হিসাবধারী গ্রাহকের মোবাইল নম্বরটি আলাদা রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন হলে, জমাকৃত টাকা সিবিএসে পোস্টিং দেয়ার আগেই গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল নম্বরটি এসএমএস পোর্টালে রেজিস্টার্ড করে দিন।

✓ এসবি/সিডি-জাতীয় হিসাবের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন জমাস্লিপের মাধ্যমে প্রাথমিক জমা না করিয়ে গ্রাহককে একটি পূর্ণ জমা বই ইস্যু করুন।
✓ হিসাব খুলার পরপরই গ্রাহকের ছবি ও নমুনা স্বাক্ষর সিবিএসে আপলোড করুন।
✓ প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্টের জন্য ব্যক্তিক ফরম ব্যবহার করবেন না।

✓ যৌথ ও করপোরেট অ্যাকাউন্টে লেনদেনের বিশেষ নির্দেশনা (special instructions) জেনে নিবেন। হিসাব ফরমে বা গ্রাহকের আবেদন বা রেজুলেশনে বিশেষ নির্দেশনা সংক্রান্ত ঘোষণা স্পষ্ট করে উল্লেখ থাকতে হবে এবং সিবিএসেও তা নোট দিয়ে রাখতে হবে।
✓ অস্পষ্ট ছবি বা ছবি থেকে তোলা ছবি বা অতিমাত্রায় এডিট করা ছবি নেয়া যাবে না।
✓ মোবাইল নম্বর ও ইমেইল আইডি সতর্কতার সাথে সিবিএসে রেকর্ড করবেন। কারণ, মোবাইল ও ইমেইলের কোনো ডিজিট বা ক্যারেক্টার ভুল করলে, একজনের অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ আরেকজনের হাতে চলে যেতে পারে।

✓ এনআইডিতে উল্লিখিত ঠিকানার সাথে স্থানীয় ঠিকানার অসামঞ্জস্যতা লক্ষ্য করবেন। স্থানীয় কোনো ব্যক্তির এনআইডিতে বাইরের ঠিকানা উল্লেখ থাকলে, তার স্থানীয় ঠিকানার ইউটিলিটি বিলের কপি নিবেন। আবার শাখার স্থানীয় এলাকার বাইরের এলাকার কারোর অ্যাকাউন্ট খোলার সময় তার প্রফেশনাল আইডি বা আয় সংক্রান্ত ডকুমেন্টস গ্রহণ করবেন।

✓ নাবালকের হিসাবে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। হিসাব ফরমের কোথাও কোনো তথ্যে কাটাকাটি হলে কারেকশন করে হিসাবধারীর পূর্ণ স্বাক্ষর নিবেন, কিন্তু ফ্লুইড ব্যবহার করবেন না এবং গ্রাহকের অথারাইজেশন ছাড়া নিজে কোনো কাটাকাটি / সংশোধন / পরিবর্তন করবেন না।
✓ কেওয়াইসি সম্পাদন করা হয় রিস্ক এ্যাসেস করার জন্য। কিন্তু আমরা অনেক সময় কেওয়াইসি করি ঠিকই, কিন্তু রিস্ক স্কোর লিখি না। রিস্ক স্কোর অবশ্যই লিখবেন এবং অ্যাকাউন্টের যথাযথ রিস্ক গ্রেডিং করবেন।

✓ কাস্টমারের স্বাক্ষর দেয়ার জায়গা চিহ্নিত করতে কালো কালির ব্যবহার করবেন না, কারণ এতে আপনার আকা দাগটি কাস্টমারের স্বাক্ষরের অংশ হয়ে যেতে পারে।
✓ কাস্টমার কর্তৃক সেল্ফ ফিল্ড-ইন ইনফরমেশন ক্রস চেক না করে হিসাব খুলবেন না।
✓ এনআইডি ভেরিফাই না করেই ‘ভেরিফাইড’ সিল মারবেন না।

✓ ইমেইলে বিভিন্ন ফরেন একচেঞ্জ হাউজ এবং ব্যাংকের ফরেন অফিসের মাধ্যমে আসা প্রবাসীদের অ্যাকাউন্ট ফরমে কোনো ল্যাপসেস থাকলে ইমিডিয়েটলি ফিরতি মেইলে তা জানিয়ে দিবেন। হিসাব খোলা হয়ে গেলে যথাসময়ে এসব হিসাবের স্ট্যাটমেন্ট, চেক বই, আমানত রশিদ ইমেইল/কুরিয়ার/প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রবাসীর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
✓ প্রবাসীদের এসব অ্যাকাউন্টের মূল ফরম বাংলাদেশে শাখায় আসলে, ভালোভাবে চেক করবেন এবং ব্ল্যাংক অংশগুলো পূরণ করে তারপর গাট ফাইলে রাখবেন। মূল হিসাব ফরমটি বিদেশ থেকে শাখায় না আসা পর্যন্ত হিসাবটিকে ফলো-আপে রাখতে হবে।

✓ প্রবাসী এসব হিসাব ফরমে পরিচয়দানকারীর স্বাক্ষর থাকলে, হিসাব খোলার আগে পরিচয়দানকারীর স্বাক্ষরটি ভেরিফাই করে নিবেন।
✓ অ্যাকাউন্ট খোলার পর গ্রাহককে চেক বই, ডেবিট কার্ড কালেকশন সংক্রান্ত পরবর্তী করণীয় বুঝিয়ে বলবেন।
✓ জমা বই ও চেক বইয়ের যত্ন ও সঠিকভাবে সংরক্ষণ পদ্ধতি বুঝিয়ে বলবেন।

✓ করপোরেট অ্যাকাউন্টে সিগনেটরি পরিবর্তনের রিকোয়েস্ট আসলে, আগে দেখে নিন- তা যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্বাক্ষরিত কিনা। সবকিছু ঠিক থাকলে রিসিভ ডেট এবং টাইম নোট করে অনতিবিলম্বে তা সিবিএসে হালনাগাদ করবেন এবং রিকোয়েস্ট লেটারটি পূর্বের রিকোয়েস্ট লেটারের সাথে ক্রমানুসারে হিসাব ফরমে সংরক্ষণ করবেন। সিগনেটরি পরিবর্তন সংক্রান্ত পুরনো রিকোয়েস্টগুলো পেনসিল দিয়ে ক্রসড করে দিতে পারেন।
✓ এনআইডির সাথে মিল রেখে অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফরম, সিবিএস, চেক রিকুইজিশন ইত্যাদি সব জায়গায় একাউন্টের নাম অভিন্নভাবে লিখবেন।

✓ একই গ্রাহকের একাধিক ইউনিক আইডি ওপেন করবেন না। হিসাব খুলতে আসা গ্রাহককে শুরুতেই জিজ্ঞেস করে নিন, আপনার ব্যাংকে তার ইতিমধ্যে কোনো অ্যাকাউন্ট আছে কিনা বা পূর্বে ছিল কিনা। গ্রাহক যদি তার বিদ্যমান বা বন্ধ করে ফেলা হিসাবের নম্বর বলতে না পারেন, তাহলে ব্যাংকের এমআইএসে আপনি তার এনআইডি নম্বর, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি দিয়ে সার্চ দিয়ে তার হিসাব নম্বর এবং ইউনিক আইডি বের করে নিবেন। অর্থাৎ নতুন অ্যাকাউন্টটি বিদ্যমান ইউনিক আইডি (যদি থাকে) ব্যবহার করেই খুলবেন।

✓ এফডিআর খুলার সময় সুদের হার, মেয়াদ ও নবায়ন অপশন সঠিকভাবে সিলেক্ট করবেন।
✓ মান্থলি সেভিংস স্কিমে টার্ম এবং টার্মিনাল ভ্যালু উল্লেখ করবেন। একইভাবে সব স্কিম হিসাবের ক্ষেত্রেই গ্রাহক কী পাবেন, কীভাবে পাবেন ইত্যাদি অপশনগুলো যথাযথভাবে পূরণ করবেন এবং গ্রাহকের স্বাক্ষর নিয়ে নিবেন। তা না হলে, মেয়াদান্তে এগুলো নিয়ে গ্রাহকের সাথে অনেক তর্কের সৃষ্টি হয়। কারণ, হিসাব ফরম প্রিন্ট দেওয়ার সময় যে সার্কুলার কার্যকর ছিল, হিসাব খোলার সময় সেটা কার্যকর না-ও থাকতে পারে।

✓ হিসাব ফরমের যেসব যায়গায় অল্টারনেটিভ সার্ভিস চ্যানেলের (এসএমএস সার্ভিস, ডেবিট কার্ড ইত্যাদি) কথা বলা আছে, তা গ্রাহকের চাহিদা মত সিলেক্ট করবেন এবং গ্রাহকের স্বাক্ষর নিয়ে নিবেন।
✓ ইকেওয়াইসির মাধ্যমে হিসাব খুলার আগে গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ করে নিবেন এবং গ্রাহকের দেয়া তথ্যগুলো তার সংযুক্ত ডকুমেন্টস এর সাথে মিলে কিনা দেখে নিবেন। একইসাথে ইউনিক আইডি ক্রিয়েট হওয়ার পর সেখানেও কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে মিসিং আছে কিনা চেক করে নিবেন।

✓ অন্ধ ব্যক্তির বা টিপসইয়ের হিসাব গ্রহণযোগ্য স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে খুলবেন এবং এসব হিসাবের যেকোনো চেক পেমেন্টের সময় অ্যাকাউন্ট হোল্ডার এবং স্বাক্ষী- উভয়ের সশরীর উপস্থিতিতে এবং উভয়ের স্বাক্ষর নিয়ে তারপর পেমেন্ট করবেন।
✓ PEPs এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্ট খোলার আগে প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি নিবেন।
✓ চেকিং অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট খুলার ৬ মাস পর টিপি রিভিউ করে হালনাগাদ করে নিন।

✓ অ্যাকাউন্টগুলো বিএফআইইউ’র সার্কুলার মতে নির্দিষ্ট সময় পরপর (হাই রিস্ক একাউন্ট এক বছর পরপর, লো রিস্ক একাউন্ট ৫ বছর পরপর) রিভিউ করে প্রয়োজনীয় তথ্য হালনাগাদ করে নিতে হবে।

✓ নাবালকের একাউন্ট, ফরেন একাউন্ট, অন্ধ ব্যক্তির একাউন্ট, টিপসই দিয়ে খুলা একাউন্ট এবং ইকেওয়াইসির মাধ্যমে খুলা একাউন্টগুলোর জন্য মূল অ্যাকাউন্ট ওপেনিং রেজিস্টারের অতিরিক্ত আলাদা আলাদা রেজিস্টার সংরক্ষণ করবেন।
✓ ভিজিটর এবং ওয়াক-ইন-কাস্টমারদের দেয়ার জন্য শাখায় হিসাব খুলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা এবং হালনাগাদ প্রডাক্ট ব্রশিউর রাখবেন।

আরও দেখুন:
কারেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
সঞ্চয়ী হিসাব খোলার নিয়ম

মোশারফ হোসেনঃ ব্যাংক কর্মকর্তা ও ফ্রিল্যান্স লেখক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button