প্রবাসী ব্যাংকিং

ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড

প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগের নতুন সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে একক নামে তিনটি প্রবাসী বন্ডে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ এক কোটি টাকার বেশি হতে পারবে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের বিপরীতে সমন্বিত বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা হবে এক কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।

বিদেশে অবস্থান করেন, এমন যে কোনো বাংলাদেশি চাইলেই এই তিন ধরনের প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগ করে ১২ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা নিতে পারেন। ১৯৮৮ সালে চালু হওয়া পাঁচ বছর মেয়াদি ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ২০০২ সালে চালু হওয়া তিন বছর মেয়াদি ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগ করে এ সুবিধা পাওয়া যায়।

ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড
বাংলাদেশ সরকার ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড বাংলাদেশী Wage Earner কর্তৃক প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রার সমমূল্য বাংলাদেশী টাকায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত এক প্রকার সঞ্চয় Bond। এই বন্ড এর মেয়াদ ৫ (পাঁচ) বছর।

ওয়েজ আর্নার বন্ডের মূল্যমানঃ
✓ ২৫,০০০/- টাকা;
✓ ৫০,০০০/- টাকা;
✓ ১,০০,০০০/- টাকা;
✓ ২,০০,০০০/- টাকা;
✓ ৫,০০,০০০/- টাকা;
✓ ১০,০০,০০০/- টাকা; এবং
✓ ৫০,০০,০০০/- টাকা।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ওয়েজ আর্নার বন্ডের মুনাফাঃ
✓ মেয়াদান্তে মুনাফা ১২%।
✓ বন্ড ধারক ১২% হারে প্রত্যেক বছরে ষান্মাসিকভিত্তিতে মুনাফা উত্তোলন করতে পারবেন। তবে ষান্মাসিকভিত্তিতে মুনাফা উত্তোলিত না হলে, মেয়াদপূর্তিতে মুল অংকের সাথে ষান্মাসিকভিত্তিতে ১২% চক্রবৃদ্ধি হারে উক্ত মুনাফা প্রদেয় হবে।
✓ মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়ন করলে-
– ছয় মাসের পূর্বে – কোন মুনাফা নেই।
– ছয় মাস পূর্তিতে কিন্তু এক বছরের পূর্বে – ৮.৭% (ছয় মাসের জন্য)।
– এক বছর পূর্তিতে কিন্তু দেড় বছরের পূর্বে – ৯.৪৫% (এক বছরের জন্য)।
– দেড় বছর পূর্তিতে কিন্তু দুই বছরের পূর্বে – ১০.২০% ( দেড় বছরের জন্য)।
– দুই বছর পূর্তির পর কিন্তু পাঁচ বছরের পূর্বে – ১১.২০% (সাড়ে চার বছরের জন্য)।

ওয়েজ আর্নার বন্ডে মৃত্যু ঝুঁকি সুবিধাঃ
✓ একজন ওয়েজ আর্নার প্রাথমিকভাবে ন্যূনতম টাকা ২৫,০০০/- বা ততোধিক মূল্যের বন্ড ক্রয় করলে নির্ধারিত হারে মৃত্যু ঝুঁকি সুবিধা পাবে। তবে উক্ত ক্রয় সংশ্লিষ্ট ওয়েজ আর্নারের মৃত্যুর পূর্বেই সংঘটিত হতে হবে।
✓ ওয়েজ আর্নারের মৃত্যুর পূর্বেই যদি বন্ডের মেয়াদপূর্ণ হয়, তা হলে মৃত্যু ঝুঁকি সুবিধা প্রাপ্য হবে না।
✓ বন্ড ধারকের মৃত্যুর ৬-মাসের মধ্যে মৃত্যু ঝুঁকি সুবিধা দাবী করতে হবে। এর পর মৃত্যু ঝুঁকি সুবিধার বিপরীতে কোন দাবী গ্রহণযোগ্য হবে না।
✓ মৃত্যু ঝুঁকি সুবিধার পরিমাণ টাকা ৫,০০,০০০/- এর অধিক হবে না।
✓ ওয়েজ আর্নারের বয়স ৫৫-বছরের অধিক হলে মৃত্যু ঝুঁকি সুবিধা প্রাপ্য হবে না।

ওয়েজ আর্নার বন্ড কারা ক্রয় করতে পারেঃ
✓ বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী ‘ওয়েজ আর্নার'[1] নিজ নামে অথবা; আবেদনপত্রে উল্লিখিত তার মনোনীত ব্যক্তির নামে অথবা প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রার ‘বেনিফিসিয়ারী'[2]-এর নামে এ বন্ড ক্রয় করা যায়।
✓ বিদেশে লিয়েনে কর্মরত বাংলাদেশী সরকারী, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, স্বায়ত্বশাসিত ও আধা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
✓ বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাসে কর্মরত বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, যারা বৈদেশিক মুদ্রায় বেতন-ভাতাদি পেয়ে থাকেন, তারা এ বন্ড ক্রয় করতে পারবেন।

ওয়েজ আর্নার বন্ড কোথায় পাওয়া যাবেঃ
✓ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তফসিলী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ ঐ সকল শাখা, যারা ওয়েজ আর্নারদের বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব পরিচালনা করে থাকেন।
✓ বিদেশস্থ বাংলাদেশী ব্যাংকসমূহ ও তাদের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যাংকসমূহ।

ওয়েজ আর্নার বন্ড ক্রয় পদ্ধতিঃ
✓ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তফসিলী ব্যাংকের অথরাইজড ডিলার (এ.ডি) শাখাসমূহে এবং বাংলাদেশী কোন ব্যাংকের বিদেশস্থ শাখা অথবা তাদের আওতাধীন বিদেশে কার্যরত এক্সচেঞ্জ কোম্পানীসমূহে বন্ড ক্রয়ের আবেদনপত্র ডি.বি-১ ফরম পুরণ ও স্বাক্ষর করে বন্ড ক্রয়ের আবেদন করা যায়। *ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড ফরম
✓ ওয়েজ আর্নারের আবেদনের সূত্রে অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে, ব্যাংক ওয়েজ আর্নার কর্তৃক পরিচালিত বৈদেশিক মুদ্রা হিসাবে জমাকৃত অর্থ বিকলন করে বন্ড ইস্যু করতে পারে।
✓ কোন বেনিফিসিয়ারী ওয়েজ আর্নারের নিকট হতে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের বিপরীতে দালিলিক প্রমানাদি উপস্থাপন সাপেক্ষে বন্ড ক্রয় করতে পারেন।

আরও পড়ুন:
 প্রাইজবন্ড এর টুকিটাকি
 প্রাইজ বন্ড কী? প্রাইজ বন্ড কোথায় পাওয়া যায়?
 রেমিটেন্স বেনিফিসিয়ারী মূলত ডলার বিক্রেতা
 প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের ক্ষেত্র

ওয়েজ আর্নার বন্ডের মূল্য পরিশোধ পদ্ধতিঃ
✓ নগদ বৈদেশিক মুদ্রায় অথবা রেমিট্যান্স হিসেবে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা হতে রুপান্তরিত বাংলাদেশী টাকায়।
✓ ওয়েজ আর্নার কর্তৃক বিদেশ হতে প্রেরিত এবং তাঁর এফ.সি একাউন্টে জমাকৃত অর্থ দ্বারা অথবা।
✓ বৈদেশিক মুদ্রায় চেক, ড্রাফট বা প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকা ড্রাফট-এর মাধ্যমে।

ওয়েজ আর্নার বন্ড নগদায়ন পদ্ধতিঃ
✓ এ বন্ডের ইস্যু অফিস[3]-ই হবে এর প্রদানকারী অফিস।
✓ বিদেশেস্থ ইস্যু অফিস থেকে বন্ড ক্রয় করা হলে সেখান থেকে নগদায়ন করা যায় না।
✓ বিদেশ থেকে বন্ড ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতাকে আবেদনপত্রে বাংলাদেশে প্রদানকারী অফিসের নাম উল্লেখ করতে হয়।

ওয়েজ আর্নার বন্ডের নমিনী সংক্রান্তঃ
✓ বন্ড ধারকের মৃত্যু হলে নমিনী বন্ডের মূল্য, সুদ এবং মৃত্যুঝুঁকি সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
✓ বেনিফিসিয়ারী কর্তৃক ক্রয়কৃত বন্ডে একই পদ্ধতিতে নমিনী নিয়োগ করা যাবে।
✓ প্রতি সনদের জন্য একজনের অধিক নমিনী প্রদান করা যাবে না।
✓ বন্ড ধারকের মৃত্যুর পূর্বে নমিনীর মৃত্যু হলে, নমিনীর কার্যকারিতা থাকবে না।
✓ নমিনী বাতিল বা পরিবর্তন করা যাবে।
✓ বন্ড ধারকের মৃত্যুর পূর্বেই যদি নমিনীর মৃত্যু ঘটে, তবে মৃত বন্ড ধারকের উত্তোরাধিকারীগণ বন্ডের মেয়াদপূর্তিতে মূল্য ও মুনাফা প্রাপ্য হবেন।
✓ উত্তোরাধিকারীগণ শুধুমাত্র মেয়াদপূর্তিতে মূল্য ও মুনাফা গ্রহণ করতে পারবেন।

ওয়েজ আর্নার বন্ডের অন্যান্য বৈশিষ্টসমূহঃ
✓ এ বন্ডের আসল অংক স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃবিনিয়োগযোগ্য।
✓ ৪০% থেকে ৫০% পর্যন্ত মৃত্যু-ঝুঁকির সুবিধা রয়েছে।
✓ ষান্মাসিকভিত্তিতে মুনাফা প্রদেয়।
✓ বন্ডের বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ঋণ গ্রহণের সুবিধা রয়েছে।
✓ হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে ডুপ্লিকেট বন্ড ইস্যুর সুযোগ রয়েছে।
✓ এফসি একাউন্ট থাকার কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
✓ এ বন্ডে বিনিয়োগকৃত মূল অংক বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশে প্রত্যাবাসিত করা যাবে।
✓ বন্ডের বিপরীতে প্রাপ্র মূল অংক, মুনাফা এবং মৃত্যু ঝুঁকি সুবিধা ইত্যাদি বাংলাদেশে এবং কেবলমাত্র বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রদেয়।
✓ ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড-এ বিনিয়োগকৃত এবং অর্জিত মুনাফা আয়করমুক্ত।
✓ বন্ডের একটি এককের ক্ষেত্রে একজনের বেশী ধারক ও নমিনীর মনোনয়ন দেয়া যাবে না।
✓ অসুস্থতাজনিত কারনে বন্ড ধারক স্বাক্ষর করতে অপারগ হলে এবং একজন গেজেটেড অফিসার কর্তৃক তার বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ প্রত্যয়ন করা হলে প্রদানকারী অফিসার কর্তৃক সরেজমিন যাচাইয়ান্তে, বন্ড উপস্থাপনকারীর পরিচয় ও উপস্থাপিত বন্ডের সঠিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে বন্ড ধারকের হাতে ছাপ গ্রহন করে মেয়াদপূর্তি মূল্য অথবা সুদ পরিশোধ করবে।
✓ বন্ডের ক্রেতা শরিরীকভাবে পঙ্গু, স্বাক্ষর প্রদানে সম্পূর্ণ অক্ষম হলে এবং এর পক্ষে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট প্রদান করা হলে প্রদানকারী অফিসার কর্তৃক যাচাইয়ান্তে, বন্ড উপস্থাপনকারীর পরিচয় ও উপস্থাপিত বন্ডের সঠিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে উক্ত বন্ডের মেয়াদপূর্তি মূল্য অথবা সুদ নমিনী অথবা উত্তরাধিকারীকে পরিশোধ করবে।

[1] ওয়েজ আর্নার বলতে- একজন বাংলাদেশী নাগরিক, যিনি লাভজনকভাবে বিদেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে নিয়োজিত কিন্তু কোন সরকার বা সরকারী সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, স্বায়ত্বশাসিত বা আধা-স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা হতে বেতন-ভাতাদি প্রাপ্ত হয় না। তাছাড়া যিনি আদতে বাংলাদেশী নাগরিক কিন্তু যে কোন কারণেই হোক, বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।

[2] বেনিফিসিয়ারী বলতে- একজন বাংলাদেশীকে বুঝাবে, যিনি বিদেশে কর্মরত ওয়েজ আর্নারের নিকট হতে প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা প্রাপ্ত হন এবং যিনি ওয়েজ আর্নার বিনিময় হার প্রাপ্তির অধিকার লাভ করেন।

[3] ইস্যু অফিস বলতে- বাংলাদেশের তফসিলী বাংকের প্রধান কার্যালয়সহ ঐ সকল শাখা, যারা ওয়েজ আর্নারদের বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব পরিচালনা করে থাকে; বিদেশস্থ বাংলাদেশী ব্যাংকসমূহ ও তাদের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যাংকসমূহ এবং বাংলাদেশী কোন ব্যাংকের আওতাধীন বিদেশে কার্যরত এক্সচেঞ্জ কোম্পানীসমূহ।

সূত্রঃ বাংলাদেশ ব্যাংক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button