ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

“১২ আগস্ট, ১৯৮৩” দেশের প্রথম ইসলামিক ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধনের দিন

ঢাকা কেন্দ্রিক বাঙলার শিল্প-বানিজ্যের বিকাশে ব্যাংকিং খাতের ভূমিকার সূচনা হয় বিশ শতকের মধ্যভাগে। পঞ্চাশের দশকের শুরুতে ব্যাংকিং খাতের পরিসর ছিল ছোট। শাখা ছিল হাতে গণা। এই নবযাত্রার পথিকৃত অল্প ক’জন ব্যাংকারের মধ্যে এম এ করিম (১ আগস্ট ১৯২৭ – ২১ জুলাই ১৯৯১) অন্যতম। ১৯৫০ সালের জুলাই মাসে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে যোগ দিয়ে করাচি হেড অফিসে প্রবেশন শেষে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে রাজশাহী, বগুড়া, ময়মনসিংহ ও ঢাকায় ব্যবস্থাপক ছিলেন। এই ব্যাংক তখন কেন্দ্রিয় ব্যাংকের হয়ে বিভিন্ন জেলায় অন্যান্য ব্যাংকের ট্রেজারি সেবা দিতো।

তখনকার কয়েকটি বৃহত্তর জেলায় এক যুগের বেশি দায়িত্ব পালন করে এম এ করিম ১৯৬৩ সালের আগস্টে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব পাকিস্তানে যোগ দেন। তিনি চট্টগ্রাম বিভাগীয় ম্যানেজার ও পরে পূর্ব পাকিস্তান অঞ্চলের প্রধান হন। বাংলাদেশ আমলে শিল্প ব্যাংক নামে পরিচিত এ ব্যাংকে এম এ করিম জেনারেল ম্যানেজার ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন। ষাটের দশক থেকে এ ব্যাংকের শীর্ষ দায়িত্বে ছিলেন।তিনি শিল্পে অনগ্রসর বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প-কারখানার ভিত্তি গড়তে নেতৃত্ব দেন। উত্তর জনপদের উন্নয়ন এবং বগুড়াকে শিল্প নগরীরূপে গড়তে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

শিল্প ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকে বত্রিশ বছর কাজ করে রূপালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হিসাবে অবসর নিয়ে এম এ করিম ১৯৮৩ সালের ১৭ জুলাই দেশের প্রথম ইসলামী ব্যাংকের প্রথম এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী হিসাবে যোগ দেন। ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (ইডিআই) ও বিশ্ব ব্যাংকের অন্যতম ফেলো এম এ করিম একেবারে শূণ্য থেকে দেশে সুদমুক্ত কল্যানমুখি ব্যাংকিংয়ের ভিত্তি নির্মাণে চার বছর কাজ করেন। তার সময়ে দেশের সার্বিক উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংক বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। সে সব দূরদৃষ্টিপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে ইসলামী ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।। তার নেতৃত্বে ইসলামী ব্যাংক তার পদ্ধতি ও উদ্দেশ্যের একটা অনুসরনীয় মান এবং সার্বজনীন কল্যানের একটি মডেল অর্জন করে।

এম এ করিমের জীবনে জুলাই ও আগস্ট মাস কয়েকটি বড় ঘটনার সাক্ষী। তার জন্ম হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অর্ধ যুগ পর ১৯২৭ সালের ১ আগস্ট। শৈশব ও বাল্য কাটে ঢাকা কেন্দ্রিক পূর্ব বাঙলার নবজাগরণের আবেগময় সময়ে। দু’শ বছরের উপনিবেশিক শাসনের পর নতুন আশার উদয়কালে ১৯৪৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করে তিনি কিছুদিন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ১৯৫০ সালের জুলাই মাসে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালের আগস্টে যোগ দেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে। বানিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকে বত্রিশ বছর কাজ করে তিনি ব্যাংক ব্যবস্থার উন্নয়নে ও অনগ্রসর পূর্ব বাঙলার শিল্প-বাণিজ্য বিকাশে অবদান রাখেন। ১৯৮৩ সালের ১৭ জুলাই তিনি দেশের প্রথম ইসলামী ব্যাংকের প্রথম এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট হসাবে যোগ দেন। চার বছরের বেশি ইসলামী ব্যাংকের সূচনাকালে নেতৃত্ব দিয়ে ১৯৮৭ সালের ৩১ জুলাই অবসরে যান। ১৯৯১ সালের ২১ জুলাই সোমবার ৬৬ বছর বয়সে তার ইন্তেকাল হয়।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

বাংলাদেশের প্রথম ইসলামী ব্যাংকটির পদ্ধতিগত ও উদ্দেশ্যগত সফলতার পেছনে অনেক কারণের মধ্যে একটি হলো এই ব্যাংক কায়েম হয়েছে ‘বটম আপ এ্যাপ্রোচ’-এ। দুনিয়ার নানা দেশে প্রচুর সম্পদ নিয়ে ‘টপ ডাউন এ্যাপ্রোচ’-এ গড়ে ওঠা ইসলামী ব্যাংকগুলির সাথে বাংলাদেশের এই ইসলামী ব্যাংকটির এ ক্ষেত্রে মৌলিক ও তাতপর্যপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। এম এ করিম তিন দশকের বেশি সময় প্রচলিত ধারার টপ ডাউন এ্যাপ্রোচের বানিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকে জনকল্যানের জন্য যে কাজ করেছেন, ইসলামী ব্যাংকে চার বছর কাজ করে তিনি দীর্ঘ মেয়াদী ও সুদূরপ্রসারি কল্যানে তারচে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখতে পেরেছেন।

ব্যাংকিং খাতে সৃজনশীল সংকুলানমূলক উন্নয়নে অবদান রাখতে আগ্রহী ব্যাংকারদের জন্য এম এ করিমের অভিজ্ঞতা যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। যারা দেশে বা দেশের বাইরে ইসলামী ব্যাংকিং উদ্যোগে নেতৃত্ব দেবেন তাদেরকেও এই পথিকৃত ব্যাংকারের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা পথ দেখাবে। (এম এ করিমের জন্মের সাড়ে নয় দশক পর তাকে স্মরন করে এবং তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে এই লেখাটি এখানে শেয়ার করছি। ২০১৫ সালের অক্টোবরে আমার এ লেখা ‘ইসলামী ব্যাংক পরিক্রমা’য় প্রথম প্রকাশিত হয়। ২০১৬ সালে এটি ‘বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার গোড়ার কথা’ নামক আমার বইতে সংকলিত হয়।

‘নিবেদিত ও অনুপ্রাণীত’দের ‘ঐকান্তিক শ্রমের পূর্ণতা’
বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক ও গ্রামীণ ব্যাংকের জন্মের বিশ বছর আগে ১৯৬৩ সালে মিসরের মিটগামার গ্রামে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আহমাদ আল নাজ্জার ক্ষুদ্র জমা ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগের ভিত্তিতে বিশ্বের প্রথম ইসলামী ব্যাংক কায়েম করেন। সে ধারায় এক দশকের মধ্যে বিভিন্ন দেশে কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৭৪ সালের আগস্টে জেদ্দায় ২৬টি মুসলিম দেশের অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলনে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক কায়েমের সিদ্ধান্ত হয়। আইডিবির সনদ সাক্ষর করে সদস্য দেশগুলি নিজ নিজ দেশের ব্যাংকিং কারবার পর্যায়ক্রমে ইসলামী পদ্ধতিতে পুনর্গঠনের অঙ্গীকার করেন। এই সনদে প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের পক্ষে আইডিবির চার্টারে স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজুদ্দীন আহমদ। ১৯৭৫ সালে আইডিবির কাজ শুরু হয়। সনদ স্বাক্ষরকারী দেশগুলি নিজ নিজ ব্যাংকিং খাত পর্যায়ক্রমে ইসলামী শরীয়া মোতাবেক পুনর্গঠনে কাজ শুরু করে। সে ধারায় সত্তর দশকে দুবাই ইসলামী ব্যাংক, কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস, বাহরাইন ইসলামী ব্যাংক ও কাতার ইসলামী ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলি কায়েম হয়।

ইসলামী ব্যাংকিংয়ের এই অধ্যায়ে বাংলাদেশে প্রথম ক’বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বানিজ্যিক ও দু’টি বিশেষায়িত ব্যাংককে ইসলামীকরনের চেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে সকল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের বৈঠকে প্রথম পর্যায়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলির সকল শাখায় ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো চালুর সিদ্ধান্ত হয়। ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো শক্তিশালী করে সুদভিত্তিক কারবার পর্যায়ক্রমে গুটিয়ে ফেলা ছিল লক্ষ। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অগ্রগতি পুনর্মূল্যায়ন করে সব শাখায় উইন্ডো না খুলে প্রতিটি জেলায় সকল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং শাখা চালুর সিদ্ধান্ত হয়।

কেন্দ্রিয় ব্যাংকের উদ্যোগের পাশাপাশি এ নিয়ে গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও প্রচারের বিভিন্ন সহায়ক উদ্যোগ গড়ে ওঠে। ১৯৭৬ সালে মওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীমের নেতৃত্বে ইসলামিক ইকনোমিক্স রিসার্চ ব্যুরো গঠিত হয়। হিজরী চৌদ্দ শতকের প্রথম দিনে ১৯৭৯ সালের ২২ নবেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর ও পুবালি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম খালেদ (জন্ম ২৭ অক্টোবর ১৯২৫; ইনতেকাল ২৭ জুলাই ২০০৪) ও সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজের প্রিন্সিপ্যাল এম আযীযুল হকের নেতৃত্বে ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ ফর ইসলামিক ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ’ গঠিত হয়। ১৯৮২ সালের ১ মার্চ এটি ‘বাংলাদেশ ইসলামিক ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন’ (বিবা) নামে পুনর্গঠিত হয়। বিবা, ইসলামিক ইকনোমিকস রিসার্চ ব্যুরো, বায়তুশ শরফ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়ে সেমিনার, আলোচনা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্ণর নূরুল ইসলাম, ডেপুটি গবর্ণর মোহাম্মদ খালিদ খান ও এম খালিদসহ ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদগণ জন সচেতনতা বাড়াতে এ সব উদ্যোগে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। ১৯৮২ -র মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিবা, ব্যুরো, বি আই বি এম ও সোনালী ব্যাংক ৩১১ জন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদকে ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। বিবা ইসলামী ব্যাংকিং-এর লোকবল তৈরির পাশাপাশি প্রায়োগিক নীতি-পদ্ধতি নিয়ে কাজ করে।

এ সময় ১৯৮০ সালের নবেম্বরে দেশে বেসরকারী খাতে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়া হয়। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য ২৪টি ব্যাংকের জন্য আবেদন করা হয়। তার মধ্যে ৩টি ছিলো ইসলামী পদ্ধতির ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ব্যাংক অব ঢাকা লিমিটেড’কে অনাপত্তি দেয়।

বাংলাদেশে আধুনিক ছাপাখানার স্থপতি, ইস্টার্ন রিগাল ইন্ডাস্ট্রিজ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জাতীয় ফুটবল দলের এক সময়ের নামি ক্রীড়াবিদ আবদুর রাজ্জাক লস্কর, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক মফিজুর রহমান, জামিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান হাজি বশিরউদ্দিন, চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ ফাউন্ডেশন লিমিটেড-এর পীর সাহেব সমাজ সংস্কারক মাওলানা আবদুল জব্বার নতুন ধারার এই নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন।

তাদের আহ্বানে এগিয়ে আসেন রেদওয়ান ইন্টারন্যাশনালের মুহাম্মদ ইউনুছ, দেওয়ান টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড-এর মোহাম্মদ শফিউদ্দীন দেওয়ান, কক্সবাজারের আল্লাহওয়ালা সল্ট ক্রাশিং ইন্ডাস্ট্রিজ-এর আবুল কাশেম, যশোর কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড-এর মোহাম্মদ হোসেন, জাকি-মোশাররফ গ্রুপের জাকিউদ্দীন আহমদ ও মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, বাংলাদেশ প্যাকিং প্রেস লিমিটেড-এর এম এ রশীদ চৌধুরী, মিনার ইনসেক্টিসাইড এন্টারপ্রাইজেস-এর মুহাম্মদ মালেক মিনার, সিভিল এন্ড জেনারেল কস্ট্রাকশনস লিমিটেড-এর ইঞ্জিনীয়ার মুস্তাফা আনোয়ার, রিয়াদ প্রবাসি চট্টগ্রামের ইঞ্জিনীয়ার দাউদ খান ও মোমেনশাহীর এ কে এম ফজলুল হক, চাঁদপুরের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, দুবাই প্রবাসি সিলেটের মোহাম্মদ নূরুয্যামান, মোহাম্মদী হাউজিং লিমিটেড-এর সিরাজউদ্দৌলাহ, হক বিস্কুট ও ব্রেড ফ্যাক্টরিজ লিমিটেড-এর ব্যারিস্টার তমিজুল হক, পার্ক ইন্ডাস্ট্রিজ এন্টারপ্রাইজেস-এর মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন আহমদ। এ উদ্যোগে আরো সাড়া দেয় ইসলামিক ইকনোমিক্স রিসার্চ ব্যুরো, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ও ইবনে সিনা ট্রাস্ট।

ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ব্যাংক অব ঢাকা লিমিটেড নামে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। এই নামেই ব্যাংকের পরিচিতি ও প্যাড ছাপা হয়। আবদুর রাজ্জাক লশকরের ইস্টার্ন রিগ্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ৭১ মতিঝিল বানিজ্যিক এলাকার অফিসটি প্রায় দেড় বছর ব্যাংকের প্রকল্প অফিস হিসেবে ব্যবহারের পর ৭৫, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় ব্যাংকের অফিস নেয়া হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে এ ব্যাংকের নাম হয় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।

দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তখনো ইসলামী ব্যাংকিংয়ের কোন মডেল ছিলো না। মিসর, কুয়েত, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ক’টি দেশে এ পদ্ধতি তখনো ছিল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে বেসরকারী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্নে শরীয়া মোতাবিক একটি ব্যাংক চালুর এ উদ্যোগ ছিল ব্যতিক্রমি ও সাহসি। এর পেছনে তখন আর্থিক লাভের হাতছানি বা ডিভিডেন্ড পাওয়ার লোভ ছিল না। পুরো মূলধন হারানোর ঝুঁকি ছিল। এ অবস্থার মধ্যেই অল্প ক’জন লোক সুদ ছাড়া ব্যাংক চালুর চ্যালেঞ্জ নিয়ে উজান স্রোতের যাত্রী হন। তাদের স্বপ্ন ছিল সুদমুক্ত, কল্যাণধর্মী ব্যাংকের একটি ছোট মডেল গড়ে তোলা।

ব্যাংকের উদ্যোক্তা জাকিউদ্দীন আহমদ স্মৃতিকথায় লিখেছেন: ‘মূলত আবদুর রাজ্জাক লশকরের অনুরোধেই আমি ও মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ইসলামী ব্যাংকের স্পনসর হই। তিনি আমাদেরকে বললেন, ‘মনে করুন ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য এ টাকা আপনারা আল্লাহর পথে দান করছেন। এটি সদকায়ে জারিয়া। সুদ ছাড়া ব্যাংক চলতে পারবে এটা তখনো অকল্পনীয়। ব্যাংক সফল না হলে পুরা টাকা হারিয়ে যাবে। তবু আমরা ভাবলাম একটা মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। এ টাকা সদকা হিসেবে আল্লাহর পথেই যাবে। … আবদুর রাজ্জাক লশকর ইসলামী ব্যাংকের অনেক বড় স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। মফিজুর রহমান ছিলেন বিরাট প্রেরণাশক্তির অধিকারী। তাদের কথা শুনে শুনে আমরা উদ্বুদ্ধ হয়েছি। মোহাম্মদ ইউনুস ব্যাংকের জন্য স্থানীয় উদ্যোক্তা যোগাড় করতে বড় অবদান রেখেছেন। এছাড়া মোহাম্মদ মালেক মিনার, মোহাম্মদ হোসেন, নূরুয্যামান, হাজী বশিরউদ্দীন, অধ্যাপক আবদুল্লাহ, ইঞ্জিনীয়ার মোস্তফা আনোয়ার, দাউদ খান, ফজলুল হকসহ সকলেই এই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা ও অগ্রগতির জন্য পরিশ্রম করেছেন।’

ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য তখন আট কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন প্রয়োজন। তার মধ্যে পাঁচ ভাগ বা চল্লিশ লাখ টাকা দেবে সরকার। দশভাগ বা আশি লাখ টাকা আসবে পাবলিক শেয়ার থেকে। বাকি পঁচাশি ভাগ বা ছয় কোটি আশি লাখ টাকার মূলধন যোগতে হবে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের। দেশীয় উদ্যোক্তাদের মধ্যে বায়তুশ শরফ ফাউন্ডেশন দশ লাখ টাকা এবং অন্যরা প্রত্যেকে পাঁচ লাখ টাকা করে মোট এক কোটি বিশ লাখ টাকা যোগাড় করেন।

ইসলামী ব্যাংকিং আদৌ সম্ভব হবে কী-না তা নিয়ে তখন অধিকাংশ ব্যাংকার, ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদের বিস্তর সন্দেহ ছিল। দেশের বড় ব্যবসায়ী বা শিল্প গোষ্ঠিরা উতসাহ দেখায়নি। ইসলামী ব্যাংকের সত্তুর ভাগ মূলধনের জন্য তখন দেশের বাইরে হাত বাড়াতে হয়। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক শুরু থেকেই সহযোগিতা করছিল। বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ও পরে ওআইসির সহকারী মহাসচিব শেখ ফুয়াদ আবদুল হামিদ আল খতীব এ উদ্যোগে যুক্ত হন। আবদুর রাজ্জাক লস্করের নেতৃত্বে ব্যাংকের ক’জন উদ্যোক্তা ব্যক্তিগত খরচে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে স্পন্সর সংগ্রহের চেষ্টা করেন। সৌদি আরবের আল-রাজি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান শেখ সুলাইমান আল-রাজি ত্রিশ শতাংশ শেয়ার নিয়ে এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কাজকে এগিয়ে দেন। তার সাথে চুক্তির সময় আবদুর রাজ্জাক লস্করের সাথে জাকিউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, মুহাম্মদ ইউনুস ও ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ দাউদ খান উপস্থিত ছিলেন। সৌদি আরবের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও জেদ্দার জামজুম গ্রুপের চেয়ারম্যান শেখ আহমদ সালাহ জামজুমের সাথে পরিচয় ও ঘনিষ্টতার সুবাদে মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন তাকে উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করেন। ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস, দুবাই ইসলামী ব্যাংক, বাহরাইন ইসলামী ব্যাংক, লুক্সেমবার্গ ইসলামী ব্যাংক, জর্দান ইসলামী ব্যাংক, কাতারের ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট এন্ড এক্সচেঞ্জ কর্পোরেশন, কুয়েত সরকারের তিনটি মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত হয়। এ ভাবেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর নূরুল ইসলামের ভাষায় ‘একদল নিবেদিত ও অনুপ্রাণীত ব্যক্তির ঐকান্তিক শ্রমের পূর্ণতার প্রতীক’রূপে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরন হয়। ইসলামী ব্যাংকের মূলধনে বিদেশি উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণের পেছনেও লাভের বিষয় প্রধান ছিল না। মূল প্রেরণা ছিল পৃথিবীর এক দশমাংশ মুসলিম জনগণের হালাল লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি।

দেশের আটটি সরকারী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর মধ্য থেকে ইসলামী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী নিয়োগের জন্য চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এ ব্যাংক আদৌ কাজ করতে পারবে কী-না এ নিয়ে অনেকের সন্দেহ ছিল। কেউ বলেন: আপনারা চালু করেন। দেখে সিদ্ধান্ত নেবো। এ অবস্থায় সোনালী ব্যাংকের এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার ও স্টাফ কলেজের প্রিন্সিপাল এম আযীযুল হককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব দিয়ে ব্যাংক চালুর অনুমোদন চাওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রধান নির্বাহী নিয়োগের শর্তে এই সুযোগ দেয়। এম আযীযুল হক সোনালি ব্যাংকে পঁচিশ বছর পূর্তির অল্প ক’দিন বাকি থাকতে সব সুবিধাদি ছেড়ে ইসলামী ব্যাংকি চালুর প্রয়োজনে অবিলম্বে পদত্যাগ করেন। ১৯৮৩ সালের ১ মার্চ তিনি দেশের প্রথম ইসলামী ব্যাংকের প্রথম প্রধান নির্বাহীর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব নেন।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ১৯৮৩ সালের ১৩ মার্চ পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিরূপে নিবন্ধিত হয়। বিধিবদ্ধ বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকরূপে ইসলামী পদ্ধতিতে কাজ করার জন্য ২৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্স ইস্যু করে। ১৯৮৩ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে কাজ শুরু করতে হবে। এই বাধ্যবাধকতার কারণে পঁচাত্তর মতিঝিলের চার তলা ভবনের তৃতীয় তলার উত্তরাংশের একটি কক্ষে ৩০ মার্চ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম এবং বিশ্বের ছত্রিশতম এই ইসলামী ব্যাংকের অনানুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়।

এ ঘরোয়া অনুষ্ঠানে মৌখিক দাওয়াতে বায়তুশ শরফের পীর মওলানা আবদুল জব্বার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের নির্বাহী সভাপতি জনাব কফিলউদ্দীন মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এম খালেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা পরিচালক এ এস এম ফখরুল আহসান, প্রবীণ সাংবাদিক সানাউল্লাহ নূরী ও আখতারুল আলমসহ ঢাকার কিছু বিশিষ্ট কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি হাজির হন।

চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক লশকরের সভাপতিত্বে এম. আযীযুল হকের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মফিজুর রহমান সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর পক্ষে মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব এএফএম ইয়াহিয়া চলতি হিসাবে পঁচিশ লাখ টাকা জমা দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম ইসলামী শরীয়াভিত্তিক ব্যাংকের প্রথম হিসাব খোলেন। প্রথম দিনে মোট ৪৯টি চলতি হিসাবে ৩৫ লাখ ১৩ হাজার পাঁচশো ৯ টাকা জমা হয়। হিসাব গ্রাহকদের মধ্যে ছিলেন মফিজুর রহমান, ধানমন্ডীর মসজিদ-আত্-তাকওয়া সোসাইটি, এম আযীযুল হক ও মিসেস জাহানারা হক, মুহাম্মদ ইউনুছ, এডভোকেট মুজাম্মেল হক, ইঞ্জিনীয়ার মুস্তফা আনওয়ার, মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক লশকর, আকসা শিপিং, এম এ রশিদ চৌধুরী, হাফিজ ফয়েজ মোহাম্মদ, মোঃ আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ হোসেন, শফিউদ্দীন দেওয়ান, আহমদ হোসেন, নূরুল ইসলাম মজুমদার, মুহাম্মদ ইসমাইল হুসাইন, এস.ডি আলম ও এবিএম ফজলুল হক চৌধুরী।

সে দিনই ব্যাংকের প্রথম শাখার ব্যবস্থাপক হিসাবে অ্যাসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রূপালী ব্যাংকের মতিনউদ্দীন আহমদ বারো ভূইয়া এবং এসপিও পদে কেন্দ্রীয় হিসাব বিভাগে সোনালী ব্যাংকের জনাব ফরীদউদ্দীন আহমদ যোগ দেন।

ছোট কক্ষ: বড় স্বপ্ন
ব্যাংকের উপদেষ্টা এম খালেদ ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী এম আযীযুল হককে নিয়ে ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক লশকর ব্যাংকের প্রধান নির্বাহি নিয়োগের ব্যাপারে এই পর্যায়ে আবার রূপালী ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এম এ করিমের সাথে যোগাযোগ করেন। এম আযীযুল হকের মতে, ব্যাংকিং খাতের প্রধান নির্বাহীদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কে সবচে ইতিবাচক মনোভাবের অধিকারি, সৎ ও প্রখর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন এম এ করিম ইসলামী ব্যাংকিংয়ে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার বিষয়টি সামনে আনেন। তার দুই বছরের সিনিয়র ও ঘনিষ্ট এম খালেদ বলেন, ইসলামী ব্যাংকিং পদ্ধতি সম্পর্কে আমিও তো বিশেষ জানি না। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে এই সিস্টেম বাস্তবায়নের জন্য মাঠে আছি। আপনিও ব্যাংকিংয়ের অভিজ্ঞতার সবটুকু কাজে লাগিয়ে এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুন। এম এ করিমের সাথে এম আযীযুল হকের পরিচয় ছিল ১৯৬১ সাল থেকে। তার আট-দশ বছরের মুরুব্বিকে তিনি সব বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এম এ করিম রাযি হন। তিনি বলেন, এই নতুন উদ্যোগে বানিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের অভিজ্ঞতা আমি পুরো কাজে লাগাবো।

এম এ করিমকে এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী নিয়োগ দিতে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ১৯৮৩ সালের ১২ মে সিদ্ধান্ত নেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি ১৭ জুলাই যোগ দেন। তখন ব্যাংকের প্রাথমিক গুছানোর কাজ চলছে। পঁচাত্তর মতিঝিলে মাসুদ রাজা এন্ড কোম্পানির রাজা ভবনের দোতলা ও তিন তলায় ফাইসন্স নামক ঔষধ কোম্পানির অফিস ছিলো। চতুর্থ তলায় ভবন মালিকের দফতর। ফাইসন্স দোতালা আর তিন তলার দক্ষিণ দিক খালি করতে সময় নেয়। নিচ তলায় ‘ঢাকা মেইন ব্রাঞ্চ’ খোলার জন্য প্রস্তুতি চলছিল। ব্যাংকের সাইন বোর্ড ডিজাইন করা হয়। সবিহ উল আলম মনোগ্রাম তৈরি করেন। পরিচালকগণ পরামর্শ দেন ও তত্ত্বাবধান করেন।

তিন তলার উত্তরাংশের ছোট পরিসরে ব্যাংকের হেড অফিসের কাজ শুরু হয়। উত্তর পাশের অংশে অস্থায়ী পার্টিশন দিয়ে একটি খুপড়িতে চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, প্রধান নির্বাহী আর তাদেরই পাশে জনসংযোগ কর্মকর্তার টেবিল বসে। বোর্ড সদস্যগণ এখানে দিন-রাত মিলিত হন। চারটি টেবিল ঘিরে সভা করেন। ছোট কক্ষে বসে তারা বড় স্বপ্ন রচনায় মশগুল। পার্টিশনের বাইরে তিনটি টেবিলে তিনজন এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এম আযীযুল হক, এম ইউসুফ চৌধুরী ও এ এফ এম গোলাম মোস্তফা অপারেশনস, বিনিয়োগ ও ইন্টারন্যাশনাল ডিভিশনের কাজ শুরু করেন। তাদের সাথে একেকটি টেবিল ঘিরে একেক ডিপার্টমেন্ট। সব সীমাবদ্ধতার মধ্যে যেটির অভাব ছিল না তা হলো বড় কাজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অবিচল সংকল্প, আন্তরিক নিষ্ঠা ও বিপুল উতসাহ।

‘ব্যাংক ব্যবস্থার ইতিহাসে স্মরণীয় দিন’
এম. এ. করিমের যোগদানের সাতাশ দিন পর ১৯৮৩ সালের ১২ আগস্ট ইসলামী ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। মতিঝিলের প্রধান সড়কে জনগণের বিপুল উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি জনসভায় পরিণত হয়। বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠানে মুনাজাত শেষে বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী এসএম শফিউল আযম প্রধান অতিথি হিসাবে দ্বারোদ্ঘাটনের আগে মতিঝিলের পীচঢালা সড়কে আসমান ও যমিনের মালিকের দরবারে সিজদা আদায় করে অনেকে কৃতজ্ঞতা জানান।

উদ্বোধনী দিনে দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলার বাণী, দৈনিক সংগ্রাম, বাংলাদেশ অবজারভার ও বাংলাদেশ টাইমস-এ চার পাতা ক্রোড়পত্র ছাপা হয়। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক লে. জেনারেল এইচ এম এরশাদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নূরুল ইসলাম বাণী দেন। প্রফেসর এম এন হুদা বিশেষ নিবন্ধ লেখেন। ব্যাংকের চেয়ারম্যন মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাকের নিবেদন ছাড়াও পরিচালক মুহাম্মদ ইউনুছ এবং এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট এম এ করিম, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এম আযীযুল হক, এম ইউসুফ চৌধুরী ও এ এফ এম গোলাম মোস্তফার নিবন্ধ ছাপা হয়। সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক শুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেন।

প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক লে. জেনারেল এইচ এম এরশাদ বাণীতে বলেন: ‘আমি জেনে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি যে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ১২ই আগস্ট, ১৯৮৩ আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করছে। নতুন ধ্যান-ধারণা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংক আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থার পাশাপাশি এক চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে যথাযোগ্য প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার বেসরকারী খাতে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করে আসছেন। আশা করি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড জাতি গঠনমূলক কাজে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে। জেদ্দাস্থ ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকসহ বেশ কিছু সংখ্যক ইসলামী ব্যাংক ও সরকারী প্রতিষ্ঠান যৌথ উদ্যোগে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর প্রতিষ্ঠাতা হবার প্রেক্ষিতে তাদের এই উদ্যোগ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভ্রাতৃসুলভ দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে। মুসলিম দেশসমূহের পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংক আমাদের দেশে বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগের দিগন্ত আরও প্রসারিত করতে পারে। আমি এই ব্যাংকের উজ্জল ভবিষ্যৎ এবং এই মহতি উদ্যোগের সাফল্য কামনা করছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর এম নূরুল ইসলাম দিনটিকে ‘একদল নিবেচিত ও অনুপ্রাণীত ব্যক্তির ঐকান্তিক শ্রমের পূর্ণতার প্রতীক’ উল্লেখ করে তার বাণীতে বলেন: ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী উপলক্ষে ১২ই আগস্ট ১৯৮৩ সালের এই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকল সেই সব ব্যক্তিবর্গের ঐকান্তিক শ্রমের পূর্ণতার প্রতীক হিসাবে যারা ছিলেন এ ব্যাপারে অত্যন্ত নিবেদিত ও অনুপ্রাণিত। আজকের এই শুভ মুহূর্তে আমি আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই তাদেরকে যাদের অদম্য সাহসিকতা ও অবিচল বিশ্বাসের ফসল হিসাবে বাংলাদেশ সর্বপ্রথম ইসলামী ব্যাংক স্থাপনের অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাল। … ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের আট কোটি টাকার বেশীরভাগই তারা সংগ্রহ করেছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশী উদ্যোক্তার কাছ থেকে। বিদেশী উদ্যোক্তাদের নিকট থেকে এ ধরনের অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ইসলামী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে তাদের মহানুভবতার সুস্পষ্ট আভাস বহন করে। ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের সরাসরি অংশীদারিত্ব এই নব প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটিকে প্রচুর সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার মূলধন যুগিয়ে তাদের সদিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ব্যাংক ও পুঁজি বিনিয়োগের পদ্ধতির উৎকর্ষ সম্পর্কে সরকার অত্যন্ত আশাবাদী। … মাত্র গত কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাংক তার কেবলমাত্র চলতি হিসাবে তিন কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করতে পেরেছে এবং এ আমানত সুদমুক্ত ব্যাংকিং-এ যারা বিশ্বাসী তাদের তরফ থেকেই এসেছে। উন্নতির এই গতি অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে এখন থেকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। … সঠিক ও লাভজনক পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে হবে যাতে ব্যাংকের অংশীদারগণ ও আমানতকারিগণ ন্যায়সংগত লাভ পেতে পারেন। আমার বিশ্বাস, যারা উদ্যোক্তা এবং ব্যবস্থাপনায় যারা আছেন তারা এ ব্যাপারে ভালভাবেই অবহিত আর তাদের অভিজ্ঞান খুব শীঘ্রই সফলতার পসরা বয়ে আনবে। এই লক্ষ্যে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় সাহায্য ও সহানুভুতি প্রদান করে যাবে।’

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রফেসর এম এন হুদা তার নিবন্ধে লিখেন: ‘ইসলামী ব্যাংকিং তাত্ত্বিক যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে। লাভ-ক্ষতির শেয়ারের ভিত্তিতে সুদবিহীন ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার পরিচালনগত যুদ্ধে এবার বিজয়ী হতে হবে।’

চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক লশকর বলেন: ‘আল হামদুলিল্লাহ। সকল প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর যিনি বহু বাধা-বিপত্তি ও নানাবিধ প্রতিকুল অবস্থা অতিক্রম করাইয়া আজ এক মহান উদ্দেশ্যের যথাযথ রূপদান করার সুযোগ দান করিয়াছেন। সকলই সেই মহান আল্লাহর রহমত, যিনি আজ এক নতুন নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন ও তার সম্যক রূপদান করিতে আমাদের সাহায্য করিয়াছেন। আজ আমরা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এমন এক প্রতিষ্ঠান গঠনের চেষ্টায় অগ্রসর হইয়াছি যাহা ইতিপূর্বে কেবল জল্পনা-কল্পনার উপর অধিষ্ঠিত ছিল। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ইসলামের অর্থনৈতিক আদর্শের উপর ভিত্তি করিয়াই প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। আশা করি এই প্রতিষ্ঠান দেশবাসীকে নিষিদ্ধ সুদভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হইতে মুক্তিদান করিবে ও ইসলামী বিধানভিত্তিক ব্যবসায় পরিচালনা করিতে সাহায্য করিবে। আমাদের এই মহান ব্রতে আল্লাহ আমাদের সহায় হোন এবং উত্তরোত্তর উন্নতির পথে পরিচালিত করুন এই একমাত্র প্রার্থনা।’

এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট এম এ করিম তার নিবন্ধে ব্যাংকের ভবিষ্যত রূপকল্প তুলে ধরে বলেন: ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর আবির্ভাব বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে একটি নব অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ইসলামী সম্মেলন সংস্থার প্রতিশ্রুত নীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংক একটি নয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পথ প্রদর্শন করবে। আমাদের মত দরিদ্র দেশসমূহে দারিদ্র, বেকারত্ব, আয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈষম্য এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও মুদ্রাস্ফীতিসহ অসংখ্য অর্থনৈতিক সমস্যা যে হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তা থেকে মানব জাতির মুক্তির জন্য এই নয়া অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরী প্রয়োজন। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসাবে বাংলাদেশের জনগণ এমন একটি আপন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল, যা অর্থনৈতিক লেনদেন ও কর্মকান্ড পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশের ভিত্তিতে পরিচালিত করে সুদমুক্ত হালাল উপার্জনের পথ দেখাবে, নিশ্চয়তা দেবে ও পৃষ্ঠপোষকতা করবে।… এ দেশের খোদাভীরু ও নিষ্ঠাবান মুসলমানগণ এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য সব সময়ই প্রতিক্ষমান ছিলেন।… যুগ যুগ ধরে চলে আশা সুদভিত্তিক ব্যাংকিং-এর সংগে পরিচিত আমাদের অনেকেই বাস্তবে ইসলামী ব্যাংকিং-এর কথা এমনকি চিন্তাও করতে পারতেন না। বিশ্বের অন্যান্য দেশে স্থাপিত ইসলামী ব্যাংকের চেতনা, তৎপরতা ও সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে মুষ্টিমেয় সংখ্যক ত্যাগী মুসলমান সুদমুক্ত ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অদম্য কামনা নিয়ে একত্রিত হলেন…।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃস্থানীয় ইসলামী ব্যাংকিং কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠান এবং দেশের ভেতরের ও বাইরের কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান এবং তাদের আন্তরিক সমর্থন এ নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়নে সাহায্য করেছে। এই সকল প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি সমগ্র বিশ্বের মুসলিম সমাজের ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। বিদেশী ও স্থানীয় উদ্যোক্তাগণের অংশীদারিত্বে ব্যাংকের পুঁজি গঠিত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্দান, বাহরাইন, লুক্সেমবার্গ ইত্যাদি দেশের অংশগ্রহণকারীদের অংশীদারিত্বের ফলে সত্যিকার অর্থেই এটি একটি আন্তর্জাতিক ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। জেদ্দাভিত্তিক ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) এ উদ্যোগে নেতৃস্থানীয় অংশগ্রহণকারী হওয়ার কারণে বিশ্বের ৪২টি মুসলিম দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। ইসলামী বিশ্বের বিপুল অর্থ ও অর্থনৈতিক সম্পদ অব্যবহৃত রয়েছে, কিম্বা পুরোপুরি ব্যবহার হচ্ছে না। শুধুমাত্র নামে নয় বরং সত্যিকার ইসলামী চেতনায় ইসলামী শরিয়তের উপর মৌলিকভাবে প্রতিষ্ঠিত দক্ষ ব্যাংকব্যবস্থা ও অর্থ সংস্থার মাধ্যমেই কেবল এ সব সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব।… বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থার ইতিহাসে আজ একটি স্মরণীয় দিন।

ইসলামী ব্যাংক লাভ-ক্ষতির নীতির ভিত্তিতে সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশে একটি নতুন ধরনের ঋণ ও বিনিয়োগ নীতি গ্রহণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করবে। জনগণের কল্যাণে সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ।… বাংলাদেশের সমগ্র অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ইসলামীকরণে সাহায্য করার আদর্শ নিয়ে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ, কৃষি নির্ভর এবং শিল্পক্ষেত্রে পশ্চাদপদ বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প থেকে শুরু করে বৃহৎ আকারের শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করার মাধ্যমে পরিকল্পিত উপায়ে শিল্পায়িত করার জন্য ইসলামী ব্যাংক কাজ করবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করতেও আমরা ওয়াদাবদ্ধ। ক্ষুধামুক্ত একটি সুস্থ্য সামাজিক পরিবেশের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য বেকারত্ব দূর করা প্রয়োজন। তাই শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাও ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম উদ্দেশ্য। ইসলামী ব্যাংক প্রকল্প বাছাইয়ের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারের পুঁজি বিনিয়োগ অনুসূচীর দ্বারা পরিচালিত হবে এবং নিজস্ব বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে সময়ে সময়ে কারিগরি ও অর্থনৈতিক জরিপ চালাবে। … মহান আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রেখে আশা করছি, আমাদের ব্যাংক জনগণ ও সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা পাবে এবং শিগগিরই এর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সক্ষম হবে।’

এই দিন থেকে ব্যাংকে চলতি হিসাব ছাড়াও লাভ-লোকসান অংশীদারী ভিত্তিক সব ধরনের হিসাব চালু হয়। ১৯৮৩ সালের ২৯ আগস্ট চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ব্যাংকের দ্বিতীয় শাখা এবং ২৩ ডিসেম্বরে সিলেটের তালতলায় তৃতীয় শাখা খোলা হয়। এই দু’টি শাখা উদ্বোধন করেন নৌ বাহিনী প্রধান ও উপ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক রিয়ার এডমিরাল মাহবুব আলী খান। আগ্রাবাদ ও সিলেট শাখার প্রথম ব্যবস্থাপক হন যথাক্রমে গোলাম বারী চৌধুরী ও সৈয়দ আবু নসর। ১৯৮৩-র বছর শেষে ব্যাংকের জনশক্তি ছিল ১১৫ জন। তিনটি শাখায় ৮৫৮জন গ্রাহকের হিসাবে জমা দাঁড়ায় ৬ কোটি ৮০ লাখ ১০২.৭৭ টাকা।

লেখকঃ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, সাবেক ম্যানেজিং ডিরেক্টর, আইবিবিএল[প্রকাশিত এই লেখাটি লেখকের একান্তই নিজস্ব। ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ লেখকের মতাদর্শ ও লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখা ও মতামতের জন্য ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ দায়ী নয়।]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button