ব্যাংকিং

অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর টুকিটাকি-১

এই সিরিজে অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ একজন ব্যাংকারের দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হবে। আইন পাঠদান এই সিরিজের উদ্দেশ্য নয়। অর্থ ঋণ আদালত আইন বিষয়ক যে প্রশ্নগুলো বারবার আসে এবং যে বিষয়গুলো একজন ব্যাংকারের জানা থাকা ভালো সেগুলোই আলোচনা করার চেষ্টা করা হবে এই সিরিজে। তবে আইনী যেকোন পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বে আপনার উচিত হবে আইন বিভাগের সাথে পরামর্শ করে কাজ করা। প্রথমেই আমরা কিছু প্রশ্ন আর তার উত্তর দিয়ে শুরু করতে চাই।

প্রশ্নঃ ঋণের শ্রেণীমান SS, তাহলে কি অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা যাবে?
উত্তরঃ অনেকেই মনে করেন, ঋণ হিসাব Bad & Loss মানে শ্রেণীকৃত না হলে অর্থ ঋণ মামলা দায়ের করা যায়না। বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুল। অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এ এমন কোন ধারা নেই যেখানে মামলা দায়েরের সাথে শ্রেণীকরণ মানের সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলা হয়েছে। আপনি এমনকি UC মানে শ্রেণীকৃত ঋণের অর্থ আদায়ের জন্যেও মামলা করতে পারবেন।

আরও দেখুন:
অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর টুকিটাকি-২
অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর টুকিটাকি-৩
অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর টুকিটাকি-৪

প্রশ্নঃ মামলা করার আগে কি ফাইনাল নোটিশ বা লিগ্যাল নোটিশ দিতে হবে?
উত্তরঃ The Negotiable Instruments Act, 1881 এর অধীনে চেকের মামলা দায়েরের পূর্বে ৩০ দিন সময় দিয়ে চেক প্রদানকারীকে নোটিশ দেবার আইনী বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে, কিন্তু অর্থ ঋণ আদালতে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে এরূপ কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তাহলে আমরা কেনো ফাইনাল নোটিশ বা লিগ্যাল নোটিশ দেই? কয়েকটি কারনে এই কাজ করা হয়-

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

(১) এই দুই ধরনের নোটিশেই গ্রাহক ঋণ পরিশোধে এগিয়ে না আসলে মামলা দায়েরের কথা বলা থাকে আর বেশীরভাগ মানুষই মামলার কথা শুনলে ভয় পায় বা বিব্রত বোধ করে (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া), কাজেই সামর্থ থাকলে নোটিশ পেয়ে অনেক ঋণগ্রহীতাই ভয়ে এগিয়ে আসে। কাজেই মামলা দায়েরের প্রয়োজন পড়েনা।

(২) যদি এমন হয়, আপনি যে গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে চান, তাকে দেয়া ঋনটি এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়নি। অর্থাৎ তাকে হয়ত আপনি ঋণ পরিশোধের জন্য ৫ বছর সময় দিয়েছেন, কিন্তু কিছুদিন পরেই বুঝতে পারলেন ঋণটি আদায় হবে না এবং মামলা দায়ের করা জরুরী হয়েছে পড়েছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ফাইনাল নোটিশ (কল ব্যাক নোটিশ আকারে) দিতে হবে। এই নোটিশে আপনাকে সমুদয় পাওনা টাকা চাইতে হবে (শুধু Overdue নয়) এবং উক্ত টাকা পরিশোধের জন্য সময় দিতে হবে (সাধারণত ১৫ দিন সময় দেয়া হয়, তাবে এর কোন নিয়ম নেই। আপনি চাইলে এর চেয়ে কম বা বেশী সময় দিতে পারেন। গুরত্ত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনি সমুদয় পাওনা ফেরত চেয়েছেন কিনা)।

(৩) এই নোটিশগুলো মামলা প্রমাণে কাজে লাগে। অর্থাৎ আপনি আদালতের কাছে প্রমাণ হিসেবে এই নোটিশগুলো জমা দেবেন যে গ্রাহককে যথাযথ এবং বারংবার তাগাদা দেয়া স্বত্ত্বেও গ্রাহক ঋণ পরিশোধে এগিয়ে না আসায় বাধ্য হয়ে আপনি মহামান্য আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছেন।

(৪) প্রশ্নঃ তাহলে মামলা দায়েরের পূর্বে কি কোন অবশ্য পালনীয় কোন বিষয় আছে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ১২ (১) ধারা অনুযায়ী, কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ঋণের বিপরীতে পণ বা বন্ধক (Lien or pledge) রাখা সম্পত্তি যা বিক্রয় করার আইনগত অধিকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পণ বা বন্ধকাদাতা দিয়েছেন, তা বিক্রয় না করে এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ ঋণ পরিশোধ বাবদ সমন্বয় না করে, অর্থ ঋণ আদালতে কোন মামলা দায়ের করবে না৷ ধরুন আপনার কাছে ঋণের বিপরীতে এফডিআর লিয়েন করা আছে এবং গ্রাহক Letter of Authority to encash the FDR দিয়েছেন। তাহলে মামলা দায়েরের পূর্বে আপনাকে এফডিআর ভাঙ্গাতে হবে এবং সেই টাকা ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করতে হবে। এরপরও যদি আপনার পাওনা থাকে, তাহলে সেই টাকার জন্য আপনি মামলা করবেন।

আবার ১২ (২) ধারা অনুযায়ী, কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজ দখল বা নিয়ন্ত্রণে থাকা পণ বা বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রয় না করে মামলা দায়ের করলে অনতিবিলম্বে উক্ত সম্পত্তি পূর্ব-বর্ণিত মতে বিক্রয় করে বিক্রয়লব্ধ অর্থ ঋণের সাথে সমন্বয় করতে হবে এবং বিষয়টি আদালতকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।

১২(৩) ধারা অনুযায়ী, কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিবাদীর কাছ থেকে স্থাবর সম্পত্তি (Immovable Property) বন্ধক (Mortgage) রেখে অথবা অস্থাবর সম্পত্তি (Movable Property) দায়বদ্ধ রেখে (Hypothecated) ঋণ প্রদান করলে এবং বন্ধক প্রদান বা দায়বদ্ধ রাখার সময় বন্ধকী বা দায়বদ্ধ সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষমতা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা হয়ে থাকলে, সেটি বিক্রয় করতে হবে এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ ঋণ পরিশোধ বাবদ সমন্বয় করতে হবে এবং অবশিষ্ট টাকার জন্য মামলা দায়ের করতে হবে। অথবা বিক্রয়ের চেষ্টা করে যদি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়, তাহলে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, জামানত যখন আপনি ভাঙ্গাবেন বা বিক্রয় করবেন, এটি ফাইনাল নোটিশে গ্রাহককে জানিয়ে দেয়া ভালো, যেন ভবিষ্যতে গ্রাহক কোন বিতর্ক তৈরী করতে না পারে (যেমন গ্রাহক বলতে পারে, আমাকে না জানিয়ে এমন একটা কাজ করে ফেললেন, আমাকে বললেই আমি টাকা দিয়ে দিতাম।) এটি ২য় প্রশ্নের ৪ নং পয়েন্ট।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলতে আমরা যেমন শুধুমাত্র Non Bank Financial Institution গুলোকে বুঝাই, এই আইনে কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলতে ব্যাংককেও বোঝায়।

কার্টেসিঃ মাই ব্যাংক বিডি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button