চাকরিচ্যুত ব্যাংকারদের ফেরানোর নির্দেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

২০২০ সালের ১ এপ্রিল হতে চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বও পর্যন্ত যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোন অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও চাকরিচ্যুত হয়েছেন কিংবা চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন, তাদেরকে বিধি মোতাবেক চাকরিতে বহাল করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আজ বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার (বিআরপিডি সার্কুলার নং-২১) জারি করে বাংলাদেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংকসমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

আরও দেখুন:
◾ করোনায় সােশ্যাল ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তার ইন্তেকাল

উক্ত সার্কুলারে ২৮ মে ২০১৫ তারিখে জারিকৃত বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং-০৭ এবং ১৮ জুন ২০২০ তারিখে জারিকৃত বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং-৩২ এর প্রতি ব্যাংকগুলোকে দৃষ্টি আকর্ষন করতে বলা হয়েছে।

বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং-০৭/২০১৫ এর মাধ্যমে ব্যাংক কর্তৃক ইচ্ছামাফিক ঢালাওভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই রদ করতে হবে মর্মে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নং-৩২/২০২০ এর মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং কাংখিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের নিমিত্ত ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ যাতে অধিকতর উজ্জীবিত হয়ে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে পারে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

কিন্তু সম্প্রতি কিছু সংখ্যক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিকট হতে এ মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোন অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও কোভিডকালীন শুধুমাত্র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করা বা অদক্ষতার অজুহাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে চাকুরীচ্যূত করা হচ্ছে ও চাকুরী হতে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পদত্যাগ করার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে না, যা উল্লিখিত সার্কুলার লেটার এর উদ্দেশ্য ও নির্দেশনার পরিপন্থি।

কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি হতে দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিতকরণের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে বিপুল অংকের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে যা তফসিলি ব্যাংকসমূহের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ সকল প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নসহ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ নিরবচ্ছিন্নভাবে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।

ব্যাংকিং সেবা প্রদান করতে গিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন এবং অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে চাকুরীচ্যূত করা হলে ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের মাঝে আতংকের সৃষ্টি হবে এবং তাদের মনোবল ও কর্মস্পৃহা হ্রাস পাবে। ফলে, ভবিষ্যতে মেধাবী ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ ব্যাংকে যোগদানে অনীহা প্রকাশ করবে যা দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকিং খাতের জন্য ক্ষতিকর হবে মর্মে আশংকা করা হচ্ছে।

বর্ণিত প্রেক্ষাপটে, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বিবেচনায় এবং এ সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের কর্মস্পৃহা অটুট রাখার স্বার্থে নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ অনুসরণ করার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে:
(ক) সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোন অভিযোগ না থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে চাকুরীচ্যূত না করা;
(খ) কোভিডকালীন শুধুমাত্র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা বা অদক্ষতার কারণ প্রদর্শন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে চাকুরীচ্যূত অথবা পদত্যাগ করতে বাধ্য না করা;
(গ) ০১ এপ্রিল ২০২০ তারিখ হতে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকের যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোন অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও চাকুরীচ্যূত হয়েছে কিংবা চাকুরী হতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে তাদেরকে (আবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে) বিধি মোতাবেক চাকুরীতে বহাল করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
(ঘ) ০১ এপ্রিল ২০২০ তারিখ হতে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকের যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকুরীচ্যূত করা হয়েছে কিংবা যারা চাকুরী হতে পদত্যাগ করেছেন তাদের তথ্যাবলী আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখের মধ্যে ‘সংযোজনী-ক’ অনুযায়ী ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে প্রেরণ করতে হবে (সফটকপি [email protected] ইমেইল ঠিকানায়)।

এছাড়া উক্ত সার্কুলারে এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করতে বলা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।