এজেন্ট ব্যাংকিং

ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারেই পাওয়া যাচ্ছে সকল ব্যাংকিং সেবা

আরাফাত হোসাইনঃ নওগাঁ সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের ০৫ ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোসাঃ রাবেয়া খাতুন পেশায় একজন দিনমজুর। সরকারের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর একজন লেবার হিসেবে কাজ করেন। অনেক বছর ধরে তিনি এই পেশার সাথে জড়িত আছেন। আগে মজুরীর টাকা ঠিক মত হাতে পেতেন না। চেয়ারম্যান বা মেম্বাররা বিভিন্ন কাট ছাঁট করে তার হাতে সামান্য কিছু টাকা তুলে দিতেন। তার জানারও সুযোগ ছিলোনা কত টাকা বেতনে কাজ করেন আর কি কি বাবদ টাকা কাটা হয়েছে।

কিন্তু এখন সব কিছুই তার কাছে পরিস্কার। তিনি এখন মধুমতি এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে তার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ডিজিটাল উপায়ে হাতের ছাপ যাচায়ের মাধমে শ্রম মজুরীর টাকা নিজ হাতে গ্রহন করছেন। কত টাকা মজুরি পেলেন, কত টাকা তুলতে পারলেন সব হিসাব খুদে বার্তার মাধমে চলে যাচ্ছে তার মুঠোফোনে। এরকম সেবা পেয়ে একদিকে তিনি যেমন খুশি তেমনি সরকারী প্রল্পের টাকা বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে।

একই ভাবে পার্শের গ্রামের মোসাঃ আকলিমা আক্তার একজন মাতৃত্ব ভাতাভোগী। এলাকায় ব্যাংকের শাখা না থাকায় শহরে গিয়ে টাকা তুলতে হত। তাতে করে যাতায়াত খরচ, বাচ্চা সামলানো সহ সারাটাদিন তার নষ্ট হত। কিন্তু এখন হাতের কাছেই ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে মধুমতি এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধমে ভাতা গ্রহন করছেন। এ ব্যপারে শিকারপুর ইউনিয়নের উদ্দেগতা মোঃ বিপ্লব হোসেন জানান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে আমরা জনগনের দোর গোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। তারই ধারাবাহিকতায় মধুমতি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগণকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আয়তায় নিয়ে আসতে মধুমতি ব্যাংকের সাথে নিরলস ভাবে কাজ করছি। তাতে করে জনসাধারণের পাশাপাশি আমরাও লাভবান হচ্ছি।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেই ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা খরচে মিলছে আর্থিক অনুদান ও ভাতা। সম্প্রতি ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকা সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এ ভাতা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের অধীনে এ সেবা চালু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রতিটি গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দরিদ্রমুখী প্রযুক্তিভিত্তিক আর্থিক সেবা কার্যক্রম জোরদারে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যাস্টনির টাকা প্রদানের জন্য পাইলট প্রকল্প হিসেবে পাঁচটি ব্যাংক দেশের কয়েকটি জেলায় কাজ শুরু করেছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ব্যাংকগুলো হলো- ব্যাংক এশিয়া, মধুমতি ব্যাংক, ডাচ বাংলা, ব্রাক ও এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক। এর মধ্যে নওগাঁ জেলায় সর্বমোট ১৬টি ও সদর উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড। এরই মধ্যে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে গ্রামে–গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট। এতে যে কোন ধরনের ব্যাংক একাউন্ট খোলা, নগদ টাকা জমা,নগদ টাকা তোলা, টাকা স্থানান্তর, ইএফটিএন, আরটিজিএস, ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়াম জমা, পাসপোর্টের ফি জমা, এনআইডি ফি জমা,পরিষেবা বিল পরিশোধ সহ প্রবাসী আয় তুলতে আর ব্যাংকের শাখায় দৌড়াতে হচ্ছে না।

নিজ বাড়ির পাশের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে থাকা এজেন্ট বা আউটলেট থেকে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা মিলছে। টাকা জমা বা তোলা হলে তাৎক্ষণিক বার্তা যাচ্ছে নিবন্ধিত মুঠোফোনে। যাতে হিসাব সম্পর্কে সব সময় হালনাগাদ থাকছে গ্রাহক। এভাবে ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের আনাচে কানাচে। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা সর্ম্পকে নওগাঁ মধুমতি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মোঃ আরাফাত হোসাইন জানান- এজেন্ট ব্যাংকিং বলতে বুঝায় একটি বৈধ এজেন্সি চুক্তির মাধ্যমে এজেন্ট নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে সীমিত আকারে যাবতীয় ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা।

বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত ভিশন ২০-২১ বাস্তবায়নের লক্ষে পৃথিবীর অন্যন্য দেশের মত বাংলাদেশেও এটি একটি সময় উপযোগী পদক্ষেপ। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার দ্বারা সহজেই দ্রুততম সময়ে ব্যাংকিং সেবাকে মানুষের দোর গোড়ায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। হাতের কাছেই সহজলভ্য ও মানসম্মত সেবা প্রদানের জন্য দিন দিন এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা দ্রুততার সাথে বেড়ে যাচ্ছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মাঝে ব্যংকিং সুবিধা ছড়িয়ে দিতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা।

প্রথম দিকে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষের কথা মাথায় রেখেই এই ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রণয়ন করা হয়। কারন এখনও আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে ব্যাংকের শাখা খোলা সম্ভব হয়নি আর সেটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। তাই ব্যাংকিং সেবা নিতে গ্রামের মানুষকে এখনও শহরমুখি হতে হয়। তাতে করে গ্রাহকের সময় ও আর্থ দুটোরই অপচয় হয়। তাই ঘরের পাশেই একান্ত নিরিবিলি পরিবেশে স্থানীয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

এখন গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি শহরের আনাচে কানাচে, সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা এলাকাতেও এজেন্ট শাখা খোলা যাচ্ছে। তাতে করে এলাকার জনসাধারনকে হাতের কাছেই স্বল্প আকারে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।মধুমতি ব্যাংকের আগামীর পরিকল্পনা হল ইউনিয়ন পরিষদের যাবতীয় সরকারী সুবিধা মধুমতি ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়া। যাতে করে গ্রামিন জনসাধারণকে শহরে আসতে না হয়।

লেখকঃ মোঃ আরাফাত হোসাইন, মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড, নওগাঁ শাখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button