এজেন্ট ব্যাংকিং

এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যাংকের খরচ বাঁচিয়েছে

এজেন্ট ব্যাংকিং ধারণা উদ্ভাবনের পর থেকে সবাই বুঝতে পেরেছে এটার সুবিধাই বেশি। এর মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এটা ব্যাংকের খরচও বাঁচিয়েছে। গ্রাহকরাও কম খরচে দ্রুত প্রায় সব সেবা পাচ্ছে এজেন্ট বুথে। এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শামস্-উল ইসলাম।

অগ্রণী ব্যাংকের এমডি বলেন, ব্যাংকের একটা শাখা পরিচালনা করতে যে খরচ সেটার নগণ্যও খরচ নেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। ফলে ব্যাংকগুলো ফরমাল শাখা খোলার চেয়ে বিকল্পভাবে ব্যাংকের কাস্টমারের কাছে যেতে চাচ্ছে। এর অন্যতম হলো এজেন্ট ব্যাংকিং। তিনি বলেন, অগ্রণী ব্যাংক দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ২০১২ সালে কাজ শুরু করে ২০১৩ সালের ১৫ মে পাইলট প্রকল্প শুরুর মধ্য দিয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। ইন্ডিয়া, ব্রাজিল, কেনিয়া বিভিন্ন দেশের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজারে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করে ভারতের FINO ও EKO মডেলের আদলে একটি এজেন্ট নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে অর্থাৎ মাস্টার এজেন্টকে সঙ্গে নিয়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম শুরু করে। অগ্রণী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নামকরণ হয়েছে অগ্রণী দুয়ার ব্যাংকিং।

অর্থাৎ সবার দুয়ারে ব্যাংকিং। তিনি বলেন, সেবা বঞ্চিত সাধারণ জনগণকে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করতে এরই মধ্যে ২০০টি এজেন্ট বুথ খুলতে সক্ষম হয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি গ্রাহক এসব আউটলেটে সেবা নিতে আসছে। এখনে সবাই খুব সহজে টাকা জমা ও উত্তোলন, অন্য কারো অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো, বিদেশ থেকে আসা টাকা তোলা, বিদ্যুৎ বিল জমা দেওয়ার মতো সব ব্যাংকিং সেবা নিরাপদে গ্রহণ করতে পারছে। আবার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অগ্রণী ব্যাংক তৃণমূল পর্যায়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিভিন্ন ভাতা অনলাইনে সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে দিয়ে যেমন ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়ন করছে, তেমনি শাখা পর্যায়ে কাজের চাপ হ্রাসকরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে এমডি বলেন, অ্যাকাউন্ট খোলার পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি আমানত লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়ছে। এ পর্যন্ত ৯১ হাজার ৬৮০টি নতুন হিসাব খোলা হয়েছে; যার মধ্যে ৯৭ শতাংশই গ্রামীণ গ্রাহক। দেড় শ কোটির বেশি টাকা আমানত সংগৃহীত হয়েছে। সহজলভ্য হওয়ায় এ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসার প্রবাহ দিন দিন বেড়েই চলছে। এ পর্যন্ত এক লাখ ৩০ হাজারটি রেমিট্যান্সের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আসা প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। সংখ্যাগুলো দেখে বোঝাই যায় যে ব্যাংকের আর্থিক খাতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অবদান দিন দিন বেড়ে চলছে। তিনি বলেন, ব্যাংকিং সময় ছাড়াও নন-ব্যাংকিং আওয়ারেও এজেন্ট বুথ ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে থাকে। এ পর্যন্ত ১.৫ লাখেরও বেশি গ্রাহক নন-ব্যাংকিং আওয়ারে লেনদেনের সুযোগ পেয়েছে এবং ৩২ হাজারেরও বেশি রেমিট্যান্স বিতরণ করা হয়েছে; যার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা আরো সহজলভ্য করা সম্ভব হয়েছে। ঋণসহ আরো কয়েকটি ব্যাংকিং সেবা এজেন্ট আউটলেটে অচিরেই চালু করা হবে। এ ছাড়া সাশ্রয়ী খরচে কোর ব্যাংকিং সেবা বিস্তৃত করার সুযোগ এবং ব্যাবসায়িক সম্ভাবনা দৃশ্যমান হওয়ায় আরো ২০০টি নতুন এজেন্ট বুথ স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ঝুঁকি নিয়ে এমডি বলেন, ‘এ সেবায় সুবিধার পাশাপাশি ঝুঁকিও আছে। এটা হলো দ্বিমুখী ঝুঁকি। প্রথমটা হলো—এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সব অ্যাকাউন্ট ব্যাংকের কোর ব্যাংকিং সিস্টেমের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ফলে কোর ব্যাংকিংয়ে কোনো ধরনের ব্যারিকেড দেওয়া না থাকলে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা সফটওয়্যার এমনভাবে করেছি, যেখানে গ্রাহক তার স্বাভাবিক সব লেনদেন করতে পারবে; কিন্তু কোর ব্যাংকিংয়ে কোনো ধরনের আক্রমণের শিকার হবে না। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে ঝুঁকি থেকেই যায়। আরেকটা হলো—ব্যাংক যাকে এজেন্ট বানাল সে ব্যাংকের পক্ষে গ্রাহকের টাকা জমা ও উত্তোলনের সুযোগ পায়। সে ব্যাংকের অর্থ ঠিকভাবে জমা করছে কি না সেই ঝুঁকি। সে ১০ টাকার জায়গায় ৫ টাকা জমা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সব বুথে লেনদেনের তথ্যসংবলিত রিসিপ্ট ও এসএমএস তত্ক্ষণাত্ প্রদান করা হয়। তা ছাড়া গ্রাহক লেনদেনের তথ্য বাংলায় শুনতেও পায়। ’ তিনি বলেন, লাইভ কার্যক্রমের শুরু থেকেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সব লেনদেন ব্যাংকের কোর ব্যাংকিং সার্ভারের সঙ্গে রিয়েলটাইম ভিত্তিতে সংঘটিত হওয়ায় গ্রাহক যেমন নিরাপদে ব্যাংকের সব শাখা ও পয়েন্টেই সেবা নিতে পারে, তেমনি প্রতিটি লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।

অগ্রণী ব্যাংকের মাত্র ৫ শতাংশ এজেন্ট শহরে, বাকি ৯৫ শতাংশ গ্রামীণ এজেন্ট পয়েন্ট। ১৮টির মতো এজেন্ট লোকেশন রয়েছে প্রত্যন্ত ও ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন এলাকায়। এ পরিসংখ্যান তুলে ধরে এমডি বলেন, ব্যাংকবিমুখ জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় এনে আমানত উত্তরোত্তর বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের আর্থিক খাতে এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। অগ্রণী ব্যাংক প্রতিটি ইউনিট এজেন্টের জন্য সুদূরপ্রসারী, ব্যবসাবান্ধব ও লাভজনক কার্যক্রম প্রণয়ন করেছে; মাস্টার এজেন্টের মাধ্যমে সারা দেশে উদ্যোক্তা তৈরি করছে। প্রথম অবস্থায় উদ্যোক্তারা এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসায় কিছুটা অনভিজ্ঞতার পরিচয় দিলেও এবং ব্যাবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে তাদের সংশয় থাকলেও বর্তমানে অনেকটাই গুছিয়ে এনেছে এবং অত্যন্ত দক্ষতা ও দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তিনি আরো বলেন, অগ্রণী ব্যাংক বরাবরই উইমেন এম্পাওয়ারমেন্টে বিশ্বাস করে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মোট নতুন হিসাবের মধ্যে ৩৯ হাজার ৪৫৫টি অ্যাকাউন্ট অর্থাৎ ৪৩ শতাংশই নারী গ্রাহক। এরই ধারাবাহিকতায় এজেন্ট ব্যাংকিং এ পর্যন্ত ১০ জন নারী উদ্যোক্তাকে এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছে; যাঁরা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে এ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। এ ছাড়া অতি দ্রুতই এ কার্যক্রমে নারী উদ্যোক্তা ও গ্রাহকদের আগ্রহ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে উইমেন ওনলি এজেন্ট বুথ সংস্থাপনের পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে শামস্-উল ইসলাম বলেন, এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা খুবই ভালো। একটা শাখাকে লাভজনক করতে কয়েক বছর লেগে যায়। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে এ চিন্তা করতে হয় না।

সোর্সঃ কালের কন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button