এজেন্ট ব্যাংকিং

এজেন্ট ব্যাংকিং: সম্ভাবনার ব্যাংকিং

এজেন্ট ব্যাংকিং (Agent Banking) বলতে বুঝায় একটি বৈধ এজেন্সি চুক্তির মাধ্যমে এজেন্ট নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে সীমিত আকারে যাবতীয় ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা। বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত ভিশন ২০-২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পৃথিবীর অন্যন্য দেশের মত বাংলাদেশেও এটি একটি সময় উপযোগী পদক্ষেপ। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার দ্বারা সহজেই দ্রুততম সময়ে ব্যাংকিং সেবাকে মানুষের দোর গোড়ায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মাঝে ব্যংকিং সুবিধা ছড়িয়ে দিতে ২০১৩ সালে ব্যাংক এশিয়ার দ্বারা বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা। প্রথম দিকে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষের কথা মাথার রেখেই এই ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রণয়ন করা হয়। কারন এখনও আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে ব্যাংকের শাখা খোলা সম্ভব হয়নি আর সেটি অত্যান্ত ব্যবহুল ও সময় সাপেক্ষ। তাই ব্যাংকিং সেবা নিতে গ্রামের মানুষকে এখনও শহরমুখি হতে হয়। তাতে করে গ্রাহকের সময় ও অর্থ দুটোরই অপচয় হয়। তাই ঘরের পাশেই একান্ত নিরিবিলি পরিবেশে স্থানীয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখন গ্রামাঞ্চলের পাশাপাশি শহরের আনাচে কানাচে, সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা এলাকাতেও এজেন্ট শাখা খোলা যাচ্ছে। তাতে করে এলাকার জনসাধারনকে হাতের কাছেই স্বল্প আকারে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।

এজেন্ট শাখা থেকে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব খোলা, সীমিত আকারে নগদ টাকা উত্তোলন, জমা প্রদান, ইউটিলিটি বিল প্রদান, বিদেশ থেকে প্রেরিত রেমিটেন্স উত্তোলন, ইএফটিএন, আরটিজিএসসহ কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান, ঋণের কিস্তি সংগ্রহ, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের আবেদন গ্রহনসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির ভাতা প্রদান, মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানসহ সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের ভাতা সহজ ও দ্রুততার সাথে প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।

এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সে অনুযায়ী লেনদেনের পরিমানও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাঙ্কগুলোও গ্রাহক আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে গ্রহন করছে নানামুখি পদক্ষেপ। মুল শাখা খোলার পরিবর্তে এজেন্ট শাখা বৃদ্ধিতে মনোযোগী হচ্ছেন নীতি নির্ধারকরা। পোশাক শিল্প শ্রমিকদের বেতন ভাতা প্রদান, স্কুল কলেজের শিক্ষকদের বেতন প্রদান, প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে থাকা দেশি বিদেশি কোম্পানিগুলোর দৈনিক ক্যাশ কালেনশন, মোবাইল রিচার্জ, পাসপোর্টের ফি প্রদান, এনআইডি ফি প্রদান, বাস ট্রেন ও এয়ার টিকিট সংগ্রহসহ নানান সেবা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। ফলে একদিকে যেমন গ্রাহকরা উপকৃত হচ্ছে তেমনি এজেন্ট ব্যবসার সাথে জডিত এজেন্টরাও লাভবান হচ্ছেন। নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংকিং ব্যবসায়ী হিসাবে এজেন্টদের সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রে ব্যাংকিং এজেন্টদের ভুমিকা অনস্বীকার্য।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

কভিড-১৯ এর এই আপদকালীন সময়ে দেশের তথা গোটা পৃথিবীর অর্থনৈতিক কার্যক্রম যেখানে স্থবির। অধিকাংশ ব্যাংক যেখানে তাদের ভবিষ্যৎ ব্যবসা ও প্রবিধি নিয়ে শঙ্কিত। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা কমিয়ে ব্যাংকিং পাড়ায় তুঘলকি অবস্থা, সেখানে এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা হয়ত হতে পারে আগামীদিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্যতম হাতিয়ার।

মুল শাখা কমিয়ে জেলা পর্যায়ে একটিমাত্র শাখা, প্রত্যেকটা উপজেলায় একটি করে উপ-শাখা আর ইউনিয়ন পর্যায়ে এক বা একাধিক এজেন্ট শাখার মাধ্যমে সেবা প্রদান করলে ব্যাংকের পরিচালনা ব্যয়ভার যেমন কমে আসবে তেমনি সেবার পরিধিও বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি। হয়তবা নীতি-নির্ধারকেরা বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখবেন।

লেখকঃ মোঃ আরাফাত হোসাইন
মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড
নওগাঁ শাখা।

২ মন্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button