এজেন্ট ব্যাংকিং

এজেন্ট ব্যাংকিং লাফিয়ে বাড়ছে

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার পরিসর বাড়ছে দ্রুতগতিতে। গ্রাম বা যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকের শাখা খোলা সম্ভব নয় সেসব অঞ্চলে গড়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং। আর ঘরের কাছে ব্যাংকিং সেবা পাওয়ায় এই মাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে। দেশে কার্যক্রম শুরুর মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরেই এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার গ্রাহক তৈরি হয়েছে সাড়ে ৩৯ লাখের বেশি। আর তারা জমা করেছেন ছয় হাজার ১৬৯ কোটি টাকার আমানত। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈ-মাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার যে কেউ যখন তখন ইচ্ছা করলেই লেনদেন করতে পারছেন। যে কোনো প্রয়োজনে দরকার হলে অল্প সময়েই টাকা পাচ্ছেন। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যয়ও সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর। তাই প্রতিনিয়ত এর প্রসার ঘটছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণও বাড়ছে। এ ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটেন্স সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে গ্রামগঞ্জের উপকারভোগীদের কাছে। যেসব ব্যাংক এ সেবায় জোর দিয়েছিল, তারাই বর্তমান তারল্য সংকটের সময় একটু ভালো অবস্থানে ও স্বস্তিতে আছে। এখন পর্যন্ত ২২টি ব্যাংক লাইসেন্স পেলেও ১৯টি এ সেবা চালু করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দ্রুতই পৌঁছে গেছে গ্রামগঞ্জে। সারা দেশে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এ সেবার এজেন্ট ছিল তিন হাজার ৫৮৮ জন। এক বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫৩১ জন। এ সময় এজেন্ট বেড়েছে ৮২ শতাংশের বেশি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আউটলেট ছিল পাঁচ হাজার ৩৫১টি, বর্তমানে রয়েছে ৯ হাজার ৩৯১টি। এক বছরে বেড়েছে সাড়ে ৭৫ শতাংশ। একই সময়ে হিসাব বেড়েছে ১২৩ শতাংশ। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০টি, এ বছর সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪৬টি। একই সময়ে আমানত জমা বেড়েছে ২০৬ শতাংশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে জমা ছিল দুই হাজার ১২ কোটি টাকা, চলতি বছর সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ছয় হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। অপর দিকে, গত তিন মাসে এজেন্ট বেড়েছে ৫১৮ জন, আউটলেট ৭২০টি গ্রাহক হিসাব পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার ৬৭৪টি এবং আমানত জমা বেড়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

দ্রুত প্রসারের ফলে ইউনিয়নে ইউনিয়নে পাওয়া যাচ্ছে এ ব্যাংকিং সেবা, স্কুলেও বসেছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় দেয়া ভাতাও গ্রামগঞ্জে সহজে পাওয়া যাচ্ছে এজেন্টদের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ-টু-আই প্রকল্পের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা সম্প্রসারণও করছে অনেক ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ সেবায় ১৭ লাখ ৩৮ হাজার গ্রাহক তৈরি করে শীর্ষে রয়েছে ডাচ্?-বাংলা ব্যাংক। এরপরই ব্যাংক এশিয়া তৈরি করেছে ১২ লাখ সাত হাজার। সেবাটি চালুর অল্প দিনেই ইসলামী ব্যাংক পেয়েছে তিন লাখ ২৮ হাজার গ্রাহক। আর শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের সেবার হিসাব খোলা হয়েছে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।

ফলে এর মাধ্যমে ব্যাংক সেবা যে গ্রামে পৌঁছে গেছে, তা প্রতীয়মান হয়। আবার নারী হিসাবধারীর তুলনায় পুরুষ হিসাবধারীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। শুধু গ্রাহক হিসাবের দিক থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক শীর্ষে থাকলেও এজেন্ট ও আউটলেট বিস্তৃতিতে ব্যাংক এশিয়া শীর্ষে অবস্থান করছে। ব্যাংকটির আউটলেট তিন হাজার ১৯৫টি, যা ডাচ-বাংলার তিন হাজার ১২৩টি। ইসলামী ব্যাংকের ৬৪৬টি ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের আউটলেট ৫৬৯টি।

তবে সবচেয়ে বেশি আমানত পেয়েছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। এরপরই ডাচ্-বাংলা, ব্যাংক এশিয়া ও ইসলামী ব্যাংক। আর এজেন্টের মাধ্যমে আট ব্যাংক বিতরণ করেছে ৩০৫ কোটি টাকার ঋণ। এর মধ্যে ব্যাংক এশিয়া একাই দিয়েছে ২৩১ কোটি টাকা। সিটি ব্যাংক দিয়েছে ৩৬ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ২০ কোটি টাকা।

এজেন্টদের মাধ্যমে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১১ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকার প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে ডাচ্-বাংলা চার হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়া তিন হাজার ১৪৬ কোটি টাকা, আল-আরাফাহ্? ইসলামী ব্যাংক এক হাজার ৫৭১ কোটি টাকা, ইসলামী ব্যাংক এক হাজার ৭৮২ কোটি টাকা এনেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিং বিকাশের অন্যতম কারণ হলো আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয়সাশ্রয়ী সেবা প্রদান। এজেন্ট আউটলেটে একজন গ্রাহক সহজেই তার বায়োমেট্রিক বা হাতের আঙুলের স্পর্শের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। গ্রামীণ জনপদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এজেন্ট ব্যাংকিং তাই কার্যকরী একটি উদ্যোগ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোও তাদের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রতিনিয়ত প্রসারিত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button