ব্যাংক নোট

১, ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সার মুদ্রা এখন শুধুই স্মৃতি

ও মা স্কুলে যাব, দুপুরে কিছু খাব, একটা ১০ পয়সা (দশ পাই) দাওনা। অনেক আবদারের পর- ঠিক আছে আচার কিংবা বাজে কিছু খাবিনা বলে মা ৫ পয়সার দুটি কয়েন দিলো। আর দুপুরে স্কুলের টিফিন ছুটিতে মায়ের কথা ভুলে সেই প্রিয় আচার কিংবা সন্দেশ খাওয়া।

এসব ২৫ বছর আগের কথা। আর এখন হোটেলে গেলেন ভাত খেতে, খাওয়া শেষ। বিল এল ঊনপঞ্চাশ টাকা। আপনি দিলেন হোটেল ক্যাশিয়ারকে একশত টাকার একটি নোট। একান্ন টাকা মিলিয়ে দিতে সে পঞ্চাশ টাকার একটি নোটের সাথে আপনাকে একটি চকোলেটও দিল। কারণটা সবারই জানা। এক টাকার নোট বা কয়েনের স্বল্পতা। কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে অতি পরিচিত ১, ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সার মুদ্রা। যার মূল্য ৯০ দশক আগেও ছিল অনেক বেশী। যদিও ১, ৫, ১০ পয়সার মুদ্রা ১০-১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে অনেকেরই হয়তো বইয়ে ছাড়া প্রত্যক্ষভাবে দেখা সম্ভব হয়নি।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে এসব মুদ্রার প্রয়োজনীয়তা কমে গিয়ে আজ তা হারিয়ে গেছে বলে মনে করেন অনেকেই। ১ পয়সাকে এক পাই, একইভাবে ৫ পয়সাকে পাঁচ পাই, ১০ পয়সা (দশ পাই), ২৫ পয়সা (চার আনা), ৫০ পয়সা (আধুলী বা আটা আনা), ৭৫ পয়সা (বার আনা), এক টাকা ২৫ পয়সা (পাঁচ সিকি) বা দেড় টাকা সংখ্যার উচ্চারণগুলো বেশ পরিচিত হলেও অদূর ভবিষ্যতে তা মানুষ ভুলে যাবে।

কারণ ১, ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সার মুদ্রা বাজারে নেই বললেই চলে। বইয়ে পড়া হয়েছিল- শায়েস্থা খাঁর আমলে টাকায় ৮ মণ চাল পাওয়া যেত। কারণ তখন টাকার মূল্য ছিল অনেক বেশী। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে এসব মুদ্রার কথা চিন্তা করে অনেকের মুখে আজ এসব কয়েন টিপু সুলতানের তরবারির মতো ইতিহাসের একটি অংশ হিসেবে পরিণত হয়েছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

বিভিন্ন জায়গা ঘুরে প্রবীণদের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, এসব পয়সার মুদ্রা কখন দেখেছি আমাদের মনে পড়ে না। এমনকি তা মনে করতে আমাদের বেশ কষ্ট হচ্ছে। কারণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সাথে সময়ের বিবর্তনে কোথাই যে ভুরি ভুরি এসব কয়েন হারিয়ে গেল, আমরা অনুভবও করতে পারলাম না। তবে একথাও ঠিক, এসব পয়সার মুদ্রা ক্ষেত্র বিশেষে হয়তো জাদুঘর অথবা কোন কোন ব্যক্তির সখের কারণ হিসেবে এখনও দুএকটি জমা রাখতে পারেন। আজ থেকে ৩০ বছর আগেও স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ৫-১০পয়সা দিয়ে আচার, বাদাম, প্যাকেট আকারে সন্দেশসহ নানা রকমের জিনিস কিনে খেত।

সেখানে আজকাল স্কুল কলেজে যাওয়া শিক্ষার্থীরা টিফিনের জন্য মা বাবা থেকে ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ টাকা নিয়ে যায়। কিন্তু যাদের বয়স ৪০ এর উপর তাদের কাছে আবার ৫-১০ পয়সা দিয়ে আচার, বাদাম কিংবা সন্দেশ খাওয়ার কথাটি হাস্যকর বলে মনে হবে। কারণ ৪০ বছর আগে ৫ টাকা দিয়ে পরিবারের এক সপ্তাহের বাজার পর্যন্ত তারা করে ফেলেছেন। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, আজকাল ভিক্ষুকদের এক টাকার নোট দিলে তারা তাও নিতে চায়না। কারন এক টাকা দিয়ে এমন কি জিনিসইবা পাওয়া যায়!

প্রবীণরা বলছেন, আমরা যখন কোন বিদেশী টাকা দেখি, তখন তা খুব মনোযোগের সাথে দেখি। কোথায় কি আছে বা নেই। অথচ আমাদের অনেকেই ১, ২, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০ টাকার নোটের উপর কি লেখা আছে তা গুরুত্ব সহকারে দেখিনা। কারণ হিসেবে বলা যায়, হয়ত তার প্রয়োজন পড়েনা। যেহেতু আমাদের দেশে মানুষ বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে এসব টাকা ব্যবহার করে থাকে তখন তার উপর কি কি লেখা বা চিত্র রয়েছে তা জানা থাকলে ভাল। ১, ৫, ১০ ও ২৫ পয়সার মুদ্রা এখন আর চোখে পড়েনা। হয়ত এমন এক সময় আসবে যখন এক টাকার পয়সা বা নোট, একইভাবে ২ ও ৫ টাকার পয়সা বা নোটগুলোও হারিয়ে যাবে, আর তা আমাদের কাছে শুধু স্মৃতির পাতায় দোল খাবে। জানা যায়, ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু করে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত মুদ্রীত ১, ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সার মুদ্রাগুলো এলুমিনিয়াম, স্টীল ও স্টেইনলেস স্টীল দিয়ে তৈরি।

সর্বপ্রকার পয়সার আকার ও ওজন ভিন্নতার পাশাপাশি একপাশে জলের উপর ভাসমান জাতীয় ফুল শাপলা, ধানের ছড়া ও কয়েকটি তারকা থাকলেও প্রতিটি মুদ্রার অপর পিঠে বাংলাদেশ, পয়সার মান সংখ্যা ও কথায় এবং সাল উল্লেখপূর্বক বিভিন্ন চিত্র ছিল। এক পয়সার গায়ে দুটি ফুলসহ লতাকৃতির পাতা ছিল। দুই ধরনের পাঁচ পয়সা মুদ্রার গায়ে নাঙ্গল, ট্রাক্টর খচিত ছিল। দশ পয়সা মুদ্রার পিঠে পান পাতা, ট্রাক্টর, ধানের পাতা ও মা বাবার দুটি সন্তানের চিত্র।

২৫ পয়সা মুদ্রার গায়ে রুই মাছ, লাউ, কলার সাথে সবার জন্য খাদ্য কথাটির উল্লেখ ও জাতিয় পশু বাঘের ছবি। ৫০ পয়সার ক্ষেত্রে কবুতর, মুরগী, আনারস, কলার চিত্র ছিল। তাছাড়া ১৯৯১ সালের আগে ১ টাকার পয়সাও ছিল এবং তাতেও বিভিন্ন চিত্র ছিল যা এখনো আমরা দেখতে পাই। কারণ এক টাকার স্বল্পতা থাকলেও এখনও তা দিয়ে পণ্য কেনা বেচা হচ্ছে। তবে এমন এক সময় আসবে যখন এক টাকার পয়সা বা নোট, একইভাবে ২ ও ৫ টাকার পয়সা বা নোটগুলোও হারিয়ে যাবে; আর তা আমাদের কাছে শুধু স্মৃতি হয়ে থাকবে।

কার্টেসিঃ সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button