এজেন্ট ব্যাংকিং

শহরে একটি হলে গ্রামে তিনটি আউটলেট চালু করতে হবে

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশঃ লেনদেনের সংখ্যা ও টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালা অনুযায়ী, শহরে একটি আউটলেট থাকলে গ্রামে তিনটি আউটলেট চালু করতে হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের চাহিদা ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

সেবাটির কার্যক্রমের সুষ্ঠু ও সুসংঘবদ্ধ বিকাশ নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রসারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালাগুলো একীভূত ও হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যরত ব্যাংক, তাদের এজেন্ট ও সেবা গ্রহণকারীদের মতামতের ভিত্তিতে ‘প্রুডেন্সিয়াল গাইডলাইনস ফর এজেন্ট ব্যাংকিং অপারেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক নীতিমালাটি জারি করা হয়েছে। এটি জারির সঙ্গে সঙ্গে এজেন্ট ব্যাংকিং বিষয়ে এর আগে জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত সব প্রজ্ঞাপন রহিত করা হয়েছে।

জারি করা নীতিমালা অনুযায়ী, একজন চলতি হিসাবধারী দিনে চারবারে ৬ লাখ টাকার আমানত জমা দিতে পারবেন। সঞ্চয়ী হিসাবধারী দুবারে ৪ লাখ ও স্পেশাল নোটিস ডিপোজিটের (এসএনডি) ক্ষেত্রে চারবারে ৬ লাখ টাকা জমা দিতে পারবেন। টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে একজন চলতি হিসাবধারী গ্রাহক দিনে দুবারে ৫ লাখ ও সঞ্চয়ী হিসাবধারী দুবারে ৩ লাখ টাকা তুলতে পারবেন। আন্তঃব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে চলতি হিসাবধারী গ্রাহকরা দিনে চারবারে ১৫ লাখ, সঞ্চয়ী হিসাবধারীরা দুবারে ৫ লাখ ও বিশেষ নোটিসধারী চারবারে ১০ লাখ টাকা পাঠানোর সুযোগ পাবেন।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেট চালু করার ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের অনুপাত হবে ৩: ১। অর্থাত্ শহরাঞ্চলে একটি আউটলেট খুললে গ্রামে চালু করতে হবে তিনটি। এর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেনের সময়সীমা হবে সাধারণ ব্যাংকিংয়ের মতো। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবসায়িক সময়সীমার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে লেনদেনের সময়সীমা নির্ধারণ করা যাবে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

এছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নিরাপত্তা ও ঝুঁকির বিষয়ে সন্তুষ্ট হলে নিজেদের মতো করে আউটলেট চালু রাখতে পারবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অর্থ হলো, একটি বৈধ এজেন্সি চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগকৃত এজেন্টের মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা দেয়া। নিজস্ব বিক্রয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এমন ব্যক্তি বা এনজিও এজেন্ট হতে পারবেন এবং তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হয়ে গ্রাহককে আর্থিক সেবা দেবেন।

ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন এলাকায় বসবাস করছেন, এমন ব্যক্তিরাই এ সেবার টার্গেট গ্রাহক। দেশের দুর্গম, পাহাড়ি, প্রত্যন্ত ও কম ঘনবসতি এলাকা, যেখানে ব্যাংকিং সুবিধা এখনো পৌঁছায়নি কিংবা যেখানে ব্যাংকের শাখা খুললেও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা নেই, ওইসব এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দরিদ্র মানুষকে নির্দিষ্ট এজেন্টের মাধ্যমে সীমিত আকারে ব্যাংকিং সেবা প্রদানই হচ্ছে এর লক্ষ্য। এছাড়া শহরের যেসব জনগোষ্ঠী এখনো ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসেনি বা যারা ব্যাংকে ঢুকতে এখনো ভয় কিংবা দ্বিধাবোধ করেন, তাদেরও নির্দিষ্ট এজেন্টের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা এর লক্ষ্য। টাকা জমা ও উত্তোলনের পাশাপাশি বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স উত্তোলন, ছোট আকারের ঋণ বিতরণ ও ঋণের কিস্তি আদায়, বিদ্যুত্ ও অন্যান্য ইউটিলিটি বিল এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স নিয়েছে ১৭টি ব্যাংক। এর মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে ১২টি। এসব ব্যাংক ১ হাজার ৮৪৭ জন এজেন্ট নিয়োগ দেয়ার পাশাপাশি চালু করেছে ৩ হাজার ২২৪টি আউটলেট। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এজেন্টদের মাধ্যমে হিসাব খুলেছেন ৮ লাখ ৭২ হাজার ৮৬৫ জন গ্রাহক। এর মধ্যে পুরুষ হিসাবধারী রয়েছেন ৬ লাখ ৫ হাজার ৬০০ জন। বাকি ২ লাখ ৬৭ হাজার ২৬৫ জন হিসাবধারী নারী।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চালু করা অ্যাকাউন্টগুলোয় এসেছে ৮৯০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স। এছাড়া ৬৫১ কোটি টাকার আমানত জমা হয়েছে এসব অ্যাকাউন্টে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব চালুর ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ও ব্যাংক এশিয়া। চালুকৃত আউটলেট সংখ্যার ৮৬ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং হিসাবগুলোয় জমা হওয়া আমানতের ৭১ দশমিক ৩৬ শতাংশই ব্যাংক দুটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা অন্য ব্যাংকগুলো হলো— আল-আরাফাহ্ ইসলামী, সোস্যাল ইসলামী, মধুমতি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এনআরবি কমার্শিয়াল, স্ট্যান্ডার্ড, অগ্রণী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, মিডল্যান্ড ও দি সিটি ব্যাংক।

সুত্রঃ বণিক বার্তা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button