বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার

ব্যাংক হিসাব খুলতে কড়াকড়ি

ব্যাংক হিসাব খুলতে কড়াকড়ি- ব্যাংকের হিসাব খোলা ও পরিচালনায় আরও কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন সংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবিলা, টাকা পাচার ইত্যাদি ঠেকানোর লক্ষ্যেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

নতুন সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যক্তি, কোম্পানি, নাবালক, সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব ও মেয়াদি হিসাব খোলার আলাদা আবেদনপত্রের নমুনা সংযোজন করেছে। এগুলো আগামী ১ এপ্রিল থেকে মুদ্রণ করে গ্রাহক পর্যায়ে প্রচলন করতে হবে। একই সঙ্গে এখন যেসব হিসাব চালু রয়েছে সেগুলোকেও পর্যায়ক্রমে নতুন আঙ্গিকে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করে সমৃদ্ধ করতে হবে। এ বিষয়গুলো আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে।

মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইনের আওতায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সি ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক হিসাব পরিচালনার ক্ষেত্রে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী সংস্থা এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিংয়ের (এপিজি) নির্দেশনা মতে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর আগে এপিজি ব্যাংকের হিসাব পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রচলিত বিধিবিধান আরও কঠোর করার পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তারা বলেছে, বাংলাদেশে বেনামি হিসাব খোলার প্রবণতা বেশি।

এ কারণে ব্যাংকের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারি করা সার্কুলারের সঙ্গে আবেদনপত্র ও অন্যান্য ফরমের নমুনা দেওয়া হয়েছে। এতে বাড়তি তথ্য সংযোজন করার বিধান করা হয়েছে। এখন থেকে নতুন করে অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে গ্রাহকের টাকার উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে হবে। হিসাব খোলার উদ্দেশ্য সম্পর্কেও জানাতে হবে। গ্রাহক নতুন হিসাব খোলার আগে অন্য কোন কোন ব্যাংকে কী ধরনের হিসাব রয়েছে সেই তথ্যও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। একই সঙ্গে গ্রাহকের সম্পদের, লেনদেনের তথ্যও দিতে হবে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

বিশেষ করে নতুন হিসাব খোলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আগে কোনো ঘোষণা দিতে হতো না। এখন দিতে হবে। আগে সব হিসাবের বিপরীতে টাকার উৎস সম্পর্কে জানানো বাধ্যতামূলক ছিল না। এখন জানাতে হবে। আগে বিশেষ করে মেয়াদি হিসাব বা এফডিআর হিসাব খোলার ক্ষেত্রে এটি ছিল না। এখন এটি বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হবে। ফলে এখন থেকে ব্যাংকে এফডিআর হিসাবে কোনো কালো টাকা রাখা যাবে না। আগেও রাখা যেত না। তবে আইনের এত কড়াকড়ি ছিল না। এখন বেশি কড়াকড়ি করা হয়েছে।

সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো ওই সার্কুলারে বলা হয়েছে, হিসাব খোলার সময় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উভয় ক্ষেত্রে ৪টি আবেদনপত্র ও ফর্ম থাকতে হবে। এগুলো হচ্ছে হিসাব খোলার আবেদনপত্র, হিসাব খোলার ফরম, সম্ভাব্য লেনদেনের অনুমিত মাত্রা ও গ্রাহক পরিচিতি সম্পর্কিত ফরম (কেওয়াইসি)।

আরও দেখুন:
◾ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সার্কুলার

সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, অভিন্ন হিসাব খোলার তথ্যাদি সব ব্যাংকের ফর্মে থাকতে হবে। তবে কোনো ব্যাংক এর চেয়ে বেশি তথ্য সংরক্ষণ করতে চাইলে তা পারবে। বাংলা বা ইংরেজি বা উভয় ভাষায় ফরম তৈরি করা যাবে। আবশ্যিক তথ্যাদি উভয় ভাষায় সংরক্ষণ করতে হবে। হিসাব সংক্রান্ত যাবতীয় শর্ত ফরমে উল্লেখ থাকতে হবে। ইসলামী ব্যাংকগুলোয় ফরমে তাদের পরিভাষা ব্যবহার করা যাবে। ফরমে বেনিফিশিয়াল ওনার বা নমিনির স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক নয়। তবে নমিনির পরিচয় ও ব্যক্তি শনাক্তকরণের জন্য ব্যাংক এ সংক্রান্ত তথ্যাবলি সংগ্রহ করবে। আগামী ১ এপ্রিলের মধ্যে নতুন ফরম চালু করে ১০ এপ্রিলের মধ্যে বিএফআইইউকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে দেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন কার্যকর করার ফলে ওই বছরের মে মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথম একটি সার্কুলার জারি করে হিসাব খোলার বিধিবিধান জারি করে। পরে এটি সংশোধন করে ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল অপর একটি সার্কুলার জারি করা হয়। এখন তৃতীয় দফায় এটি আরও সংশোধন ও সংযোজন করে নতুন সার্কুলার জারি হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button